ছয় বছরেও চালু হয়নি দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরা সরকারি হাঁস-মুরগীর হ্যাচারী

গত ২০১১ সালে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারিভাবে হাঁস-মুরগী বাচ্চা উৎপাদনের জন্য জেলায় তিনটি হ্যাচারি ও ডিম ফুটানো মেশিন স্থাপন করা হয়। যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের রসুলপুর এলাকায় নির্মিত হয় হ্যাচারি তিনটি।

কিন্তু নির্মাণের পর থেকে অদ্যাবধি সরকারি কোনো বরাদ্দ না আসায় উৎপাদনে যেতে পারছেনা হ্যাচারিগুলো। ফলে নষ্ট হয়ে গেছে মূল্যবান ডিম ফুটানো মেশিনসহ অন্যান্য জিনিষপত্র। এদিকে নির্মাণ কাজেও ব্যাপক অবহেলা এবং অনিয়ম করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

হ্যাচারির হাঁস মুরগী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. নাজমুস সাকিব জানান, দুগ্ধ এবং খামার সমূহ জোরদার করণ প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায়ের অধীনে ২০১১ সালে সাতক্ষীরাতে সরকারিভাবে তিনটি হ্যাচারি ও ডিম ফুটানো মেশিন স্থাপন করা হয়। যার আনুমানিক ব্যয় হয় দেড় কোটি। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হয়নি হ্যাচারিগুলো। ফলে ডিম ফুটানো মেশিনসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিষপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তাছাড়া হ্যাচারি নির্মাণ কাজেও অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে এখানে। তিনি বলেন, একতলা বিশিষ্ট তিনটি হ্যাচারি শেডে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্লাস্টার খসে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলেই সেডের ভিতরে পানি জমে যায়। এছাড়া দরজার কাঠগুলোও অত্যন্ত নিম্নমানের দরজার অংশবিশেষ ভেঙ্গে পড়ছে। তাছাড়া মাটি ভরাট ও প্রশস্ত রাস্তা করা হয়নি। ফলে প্রকল্পের কাজ দায়সারা মাফিক হয়েছে।

তিনি আরো জানান, সাতক্ষীরা জেলাতে দুই হাজারের অধিক পোলট্রি খামার রয়েছে। সে কারণে এখানকার হ্যাচারিগুলো চালু হওয়াটা খুবই প্রয়োজন। হ্যাচারি তিনটি চালু করতে পারলে পোলট্রি খামারীরা সাশ্রয় মূল্যে মুরগী বাচ্চা সংগ্রহ করতে পারবে। এখন তাদের জেলার বাইরে থেকে মুরগী বাচ্চা সংগ্রহ করতে হয়।

জেলা পোলট্রি খামার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আলী সুজন বলেন, সাতক্ষীরাতে ছোট বড় মিলে প্রায় আড়াই হাজার হাঁস-মুরগী পালন বা পোলট্রি খামার রয়েছে। এসব খামারীদের কথা বিবেচনা করে তৎকালীন ২০১১-১২ সালেই নির্মাণ করা হয়েছিলো সরকারি তিনটি হ্যাচারি। কিন্তু নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে গত ৬ বছরেও চালু হয়নি মুরগী বাচ্চা উৎপাদনকারী সাতক্ষীরার এই হ্যাচারিগুলো। ফলে সরকারের দেড় কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কে বা কারা জানতে চাইলে তা বলতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

সাতক্ষীরা জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সমরেশ চন্দ্র দাশ জানান, সরকারি হাঁস-মুরগী পালন কেন্দ্রের হ্যাচারি নির্মাণ কাজে চরম অবহেলা ও অনিয়ম করা হয়েছে। হ্যাচারি সেডগুলো বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। চালু না করায় নষ্ট গেছে ডিম ফুটানো মেশিনসহ অন্যান্য জিনিষপত্র। ফলে সরকারের দেড় টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ ইফতেখার হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি অবগত নন। তবে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (হাঁস মুরগী খামার উৎপাদন) মো. মজিবর রহমান জানান, মুরগীর বাচ্চা চাহিদা কম থাকার কারণে সাতক্ষীরাসহ দেশের অন্যান্য কিছু জেলার ছোট হ্যাচারিগুলো উৎপাদন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে খুব শীঘ্রই চালু করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া সাতক্ষীরাতে বেসরকারি পর্যায় অনেক খামার গড়ে উঠেছে। এখানে সরকারী হ্যাচারিতে ডিম ফুটানো না হলেও এক দিনের বাচ্চা সরবরাহ করে নার্সিং করার পর তা খামারীদের কাছে বিক্রি করা হবে বলে জানান তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)