এ কেমন মোনালিসা?

লিওনার্দো ভিঞ্চির সৃষ্টি মোনালিসাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরি মেয়ের ছবি বলা হয়। কিন্তু মোনালিসার ছবিতে টর্চলাইট দিয়ে খুজেও সৌন্দর্য খুজে পাওয়াটা কঠিন!

কিন্তু মোনালিসার ছবির সৌন্দর্য ঠিক মোনালিসাতে নয়। সৌন্দর্যটা এই ছবির রহস্যে! রং তুলিতে এই ছবি আকতে গিয়ে ভিঞ্চি জন্ম দিয়ে গেছেন অসংখ্য রহস্যের………

১৫০৩ সালে ভিঞ্চি মোনালিসা আকা শুরু করেন। ১৫১৫ সালে মোনালিসা আকার সময় তিনি রহস্যজনক ভাবে মৃত্যবরণ করেন। ১২ বছর সময় নিয়ে আকা মোনালিসার ছবি সম্পূর্ণ না করেই তিনি মারা যান! অর্থাৎ আমরা মোনালিসার যে ছবিটি এখন দেখি সেটিতে আরো কিছু আঁকার বাকি ছিল…….

ভিঞ্চি মোনালিসাকে কোন কাগজ বা কাপড়ে নয়, এঁকেছিলেন পাতলা কাঠের উপর। অবাক করার বিষয় হলো মোনালিসার ছবিটিকে যদি বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে দেখা হয় তবে মোনালিসা তার হাসি পরিবর্তন করে!

এ যেন এক রহস্যময়ী মোনালিসা!

১৭৭৪ সালে সর্বপ্রথম প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামে মোনালিসার ছবিটির দেখা মিলে। কিন্তু ছবিটা মিউজিয়ামে কিভাবে এল কিংবা কে আনল এমন প্রশ্নের উত্তর মিউজিয়ামের কর্মীরাই জানতো না! কারণ তারা কাউকে ছবিটি নিয়ে আসতে দেখিনি!!

রহস্যময়ভাবে লুভর মিউজিয়ামে পৌছানো এই ছবি ১৯১১ সালে চুরি হয়ে যায়! রাতের আধারে চোরকে দেখে মিউজিয়ামের এক কর্মী পরদিনই চাকড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে সে বলেছিল সে চোরকে দেখেছে। সেই চোর আর কেউ নয়। প্রায় ৩৫০ বছর আগে মারা যাওয়া ভিঞ্চি!!

১০ বছর পর এই ছবিটি আবার ওই মিউজিয়ামে পাওয়া যায়। লুভর মিউজিয়াম কতৃপক্ষ ছবিটি সংরক্ষনের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা খরচ করে একটি নিরাপদ কক্ষ তৈরী করে। হয়ত ভাবছেন একটা ছবির জন্য এতো টাকা খরচ!!

এই ছবির বর্তমান মূল্যের তুলনায় ৫০ কোটি টাকা কিছুই নয়। মোনালিসা ছবির বর্তমান অর্থমূল্য ৭৯০ মিলিয়ন ডলার।

টাকায় পরিমানটা ৫৩৮০ কোটি টাকা!! মোনালিসা কে? প্রশ্নটির উত্তর ভিঞ্চি নিজেও দিয়ে যাননি। ২০০৫ সালে খুজে পাওয়া এক চিঠিতে অনেকে মোনালিসার পরিচয় খুজে পেয়েছেন বলে দাবি করেন। ১৫০৩ সালে লেখা এই চিঠিতে ভিঞ্চির বন্ধু ফ্রান্সিস জিয়াকন্ড তার স্ত্রী লিসা জিয়াকন্ডের একটি ছবি আঁকতে ভিঞ্চিকে অনুরোধ করেন। আর ওই সময় ভিঞ্চি মোনালিসার ছবি আঁকা শুরু করেন।

২০০৪ সালে বিজ্ঞানী পাস্কেল পাটে মোনালিসার ছবিকে আলাদা ভাগে ভাগ করে হাইডেফিনেশন ক্যামেরায় ছবি তোলেন। পাস্কেল আবিষ্কার করেন যে ভিঞ্চি যে রং ব্যাবহার করেছিলেন তার স্তর ৪০ মাইক্রোমিটার।

অর্থাৎ একটি চিকন চুলের থেকেও পাতলা! পাস্কেল আরো আবিষ্কার করেন যে মোনালিসার ছবিতে আরো ৩টি চিত্র আছে। তাদের একটি সাথে লিসা জিয়াকন্ডের মুখের মিল খুজে পাওয়া যায়। সম্ভবত ভিঞ্চি বন্ধুর অনুরোধে লিসার ছবিটিই আঁকছিলেন। কিন্তু তিনি এমন কিছু দেখেছিলেন যা পুরো ছবিতে অন্য এক নতুন মুখের জন্ম দিয়ে দিয়েছে!

সান্ডারল্যান্ড ইউনিভার্সিটির এক সার্ভেতে মোনালিসা সম্পর্কে অদ্ভুত কিছু তথ্য পাওয়া যায়। মোনালিসাকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় সে হাসছে। কিন্তু কাছে গিয়ে তার দিকে তাকালে মনে হয় সে গভীরভাবে কোন কিছু চিন্তা করছে। মোনালিসার চোখের দিকে তাকালে তাকে হাসিখুশি মনে হয়। কিন্তু তার ঠোটের দিকে তাকালেই সে হাসি গায়েব!

সান্দারলেন্ড ভার্সিটির ছাত্ররা মোনালিসার ছবির বামপাশ থেকে আল্ট্রা ভায়োলেট পদ্ধতি ব্যাবহার করে ভিঞ্চির লেখা একটি বার্তা উদ্ধার করে। বার্তাটি ছিল ” লারিস্পোস্তা শ্রী তোভাকি”। যার অর্থ “উত্তরটা এখানেই আছে।”

যুগের পর যুগ মানুষকে মুগ্ধ করে আসা মোনালিসার এই ছবি দেখে জন্ম নেয়া হাজার প্রশ্নের মাঝে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল, এই ছবি দিয়ে ভিঞ্চি কি বোঝাতে চেয়েছিলেন?”

প্যারানোরমাল ম্যাগাজিনের একদল তরুন ছাত্র উত্তরটা বের করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। অবশেষে তারা যা জানিয়েছে সেটাও চমকে দেয়ার মত!

ভিঞ্চি মোনালিসার ছবির বামপাশে গোপন বার্তা দিয়েছিলেন “উত্তর টা এখানেই আছে”। সে বাম পাশকে আয়নার কাছে আনলে একটা ছবি তৈরী হয়। অবাক করার বিষয় এই তৈরী হওয়া ছবির জীবটিকে ভিঞ্চি ১৫০০ সালের দিকে দেখেছিলেন!

ছবিটা একটা এলিয়েনের!! ভিনগ্রহের এলিয়েন…!!

আসলে মোনালিসাকে ঘিরে আগে কখনো এরকম জল্পনা কল্পনার জন্য মানুষের অভাব হয়নি। আর নিকট ভবিষ্যতেও মানুষের অভাব হবেনা, তা একরকম নিশ্চিতভাবেই বলা যায়!

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)