বয়সের ভারে নুয়ে পড়া গল্পগুলো এমনি
বয়স ৭০ হবে, ভ্যানের প্রতিটা ঘূর্ণায়নে যার স্বপ্ন ঘোরে। সৎ পথে বেঁচে থেকে দু’বেলা দু’মুঠো লবণ ভাত খেয়ে টিকে থাকা বৃদ্ধ ভ্যান চালক ওসমান আলীর জীবন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া প্রতিটা বৃদ্ধ বাবাদের গল্প এমনি।
বৃদ্ধ ভ্যান চালক ওসমান আলী সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার সদর ইউপির বাসিন্দা। আল্লাহ্ ভীরু মানুষ তিনি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন জামাতের সহিত।
তিন ছেলে এক মেয়ের বাবা তিনি। সাংসারিক নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সহ রয়েছে পরিবারের সবার দাবিদাবা। বড় ছেলে এম.এ পড়ছে, অন্য ছেলে-মেয়ে সবাই স্কুল – কলেজে পড়েন।ভ্যানের তিন চাকার উপরে পরিবারের সবার ভাগ্যর চাকা ঘোরে।
বৃদ্ধ ওসমান আলী একটি প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের ভ্যানে করে স্কুলে নিয়ে যায় আবার স্কুল শেষে প্রত্যেকের বাড়ীতে পৌঁছে দেন। সেখান থেকে খুব সামান্য কিছু টাকা পান তিনি। দিনের অন্য সময়ে ও গভীর রাতে শহরে অলিতে – গলিতে ভ্যানে যাত্রীদের বহন করেন। বৃদ্ধ মানুষ দেখে অধিকাংশ লোক তাকে এড়িয়ে যান। অন্য ভ্যানে উঠে পড়ে তারা। অন্য ভ্যানচালকের তুলনায় কম ভাড়ায় যাত্রীদের নিতে চাইলেও নারাজ সবাই। হাতেগুনে দু’ চারজন দয়াকরে ওঠেন তার ভ্যানগাড়িতে।
দিনের সব আয় থেকে প্রতিদিন ঘরের জন্য চাল সহ প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী কিনতে হয়। অন্যদিকে, ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার খরচ, সবকিছু তার সামান্য আয়ের উপর নির্ভরশীল। পরিবারের সকলে বৃদ্ধ মানুষটির মুখের দিকে চেয়ে থাকে। অসহায়ত্ব পুরোটাই বৃদ্ধ মানুষটির উপর পড়ে। বড় ছেলে এখনো পড়ালেখা শেষ করতে পারেনি। সে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে ও সবার ইচ্ছেগুলো পূরণ করবে এমনি চাওয়া ওসমান আলীর।
মাঝেমধ্যে অসুস্থ হলে পরিবারের সদস্যরা খুব কষ্টে থাকে। আবার কখন আকাশের দিকে তাকিয়ে কেটে যায় অনাহারে পুরো দিন। বৃষ্টি হলে সব গতিপথ থেমে যায় ভ্যানচালক ওসমান আলীর। এত কষ্টের পরেও নেই কোন আক্ষেপ, নেই কোন বড় স্বপ্ন, ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্ন দিয়ে আবদ্ধ তার চাহিদা। ছোট পরিবারটাকে নিয়ে সে খুব খুশি।
বৃদ্ধ ওসমান আলী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, কোন রকমে বেঁচে আছি। পরিবারটাকে খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি। আল্লাহ্ শক্তি দিয়েছে ভ্যান চালায়, সামান্য আয়ের উপর সবার সবকিছুই নির্ভরশীল। এখন বৃষ্টিবাদলের সময় দিনের অর্ধেক সময় ধরে বৃষ্টি – বাদলা হয়। বৃষ্টি হলে ভ্যানগাড়ি চালাতে পারিনা। তখন সবাইকে না খেয়ে অনাহারে থাকতে হয়। সৎ পথে বেঁচে আছি এটাই বড় পাওয়া।
কেউ আকাশের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করে ভিজবে বলে,আবার কেউ ভাবে আজকের দিনটি হয়তো সবাইকে অনাহারে থাকতে হবে। সংগ্রাম করে টিকে থাকা আর দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধো করেও হেরে যায়নি ওসমান আলী। অন্যের দোয়ারে সাহায্য প্রার্থনা করেনি সে কখনো। যার পুরোটা বিশ্বাস আল্লাহর উপর। স্বল্প আয়ে সবকিছু নিজের মত করে চালিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন এই বৃদ্ধ মানুষটি। দারিদ্র্যতা আর বৃদ্ধ সংগ্রামী মানুষগুলোর জীবনের গল্পগুলো এমনি হয়।