কারও বিরুদ্ধে কোনো নিউজ দেখতে চাই না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং। মনে রাখবেন প্রত্যক্ষভাবে হোক আর পরোক্ষভাবে হোক বিএনপি নির্বাচনে আসবেই। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সেভাবেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

তিনি বলেন, দলের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করুন, যেখানে যতটুকু দূরত্ব আছে তা দ্রুতই ঘুচিয়ে ফেলুন। কারো বিরুদ্ধে কোনো নিউজ দেখতে চাই না, কোনো অভিযোগও শুনতে চাই না। জনগণের কাছে যান। গণসংযোগ বাড়ান।

সংসদ ভবনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির সভায় তিনি এভাবেই দলীয় এমপিদের সতর্ক করে দিতে বিস্তারিত নির্দেশনা দেন। সংসদ ভবনের নবম তলার সরকারি দলের সম্মেলন কক্ষে দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভার শুরতেই প্রধানমন্ত্রী আগামী ৮ জুলাই জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের মেয়াদ আরও ২৫ বছর বাড়াতে আনীত সংবিধান সংশোধন বিল পাশের দিন সবাইকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক এমপি-মন্ত্রীর জরিপ রিপোর্ট আমার কাছে আছে। জরিপ ও তৃণমূলের মূল্যায়নের মাধ্যমে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে, তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এলাকায় গিয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করেন, তাদের আপদে-বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ান। দলের মধ্যে কোনো ধরনের কোন্দল, দ্বন্দ্ব বা অনৈক্য মেনে নেব না।

তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি আগামী অক্টোবরেই নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। সেজন্য আমাদের নির্বাচনের দ্রুত প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা দ্রুতই দলের নির্বাচনের মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করবো।

বৈঠকে সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের দল। এ দলে অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। কিন্তু প্রার্থীদের নামে অনেকেই রয়েছেন যারা নির্বাচনে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেন না, দলের মন্ত্রী-এমপি বিরুদ্ধে কথা বলে দলের দুর্নাম করছেন।

এটা সংরক্ষিত নারী আসনেরই হোক কিংবা দলের যে পর্যায়ের নেতাই হোন না কেন, এটা মেনে নেয়া হবে না। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এমপি-মন্ত্রী হলে আশপাশে অনেক সুবিধাবাদী শ্রেণি তৈরি হয়, ফলে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হন। কিন্তু দলের তৃণমূলের কর্মীরাই আমার কাছে আসল। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এলাকায় গিয়ে কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়ুন।

সূত্র জানায়, বৈঠকের মন্ত্রী-এমপিদের উদ্দেশ্যে করে সংসদ নেতা বলেন, এখন থেকেই আপনারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে দলকে শক্তিশালী করুন। অন্য দলগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন, যাতে আওয়ামী লীগ একা না হয়। তবে জামায়াতের সঙ্গে নয়।

এ প্রসঙ্গে ৯১ সালের নির্বাচনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি আমার ক্ষমতার লোভই থাকতো তবে ৯১ সালে নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় যেতে পারতো। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ আমাদের ডেকে ছিলেন। কিন্তু আমরা যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত এবং পতিত দল জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যাইনি।

বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় খুবই প্রয়োজন। শত বাধা অতিক্রম করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। বিচারের রায়ও কার্যকর করেছি। এই বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের তো আমরা বিপদে ফেলতে পারি না।

তাই জনগণের মন জয় করে আমাদের আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসতেই হবে। এজন্য তিনি ভোটারদের কাছে সরকারের ৯ বছরের উন্নয়ন-সফলতা ও অগ্রগতিগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুঃশাসন, বিদেশে অর্থপাচার, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের চিত্রগুলোও তুলে ধরার নির্দেশ দেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)