চার চ্যাম্পিয়ন আর চার নতুনের সেমিতে ওঠার লড়াই

২০টি বিশ্বকাপের শিরোপা ভাগ করে নেয়া আট দেশের ৭টি ছিল এবারের বিশ্বকাপে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া ইতালি বাদ পড়েছিল বাছাই পর্ব থেকেই। বাকি সাত চ্যাম্পিয়নের মধ্যে জার্মানি বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই। আর্জেন্টিনা এবং স্পেন বিদায় নিয়েছে দ্বিতীয় পর্ব থেকেই।

তৃতীয় ধাপে এসে বিশ্বকাপ যেমন নতুন চ্যাম্পিয়ন পাওয়ার সম্ভাবনায় দাঁড়িয়ে, তেমন পুরনো কারও গলায়ই মালা দিতেও। কোয়ার্টার ফাইনালে সাবেক চার চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও উরুগুয়ের সঙ্গে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আছে স্বাগতিক রাশিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সুইডেন এবং বেলজিয়াম।

নকআউট পর্ব মানেই বিশ্বকাপের দলগুলোর আসল লড়াই। যেখানে পা হড়কালেই সর্বনাশ। দ্বিতীয় পর্ব থেকে প্রতিটি ম্যাচই ফাইনালের মতো। সেই ফাইনালের আগে ফাইনাল বাধা টপকাতে পারেনি মেসিদের আর্জেন্টিনা, ওজিল-মুলারদের জার্মানি আর ইনিয়েস্তাদের স্পেন।

পুরনোদের হটিয়ে বিশ্বকাপকে নতুন চ্যাম্পিয়ন উপহার দেয়ার ভার এখন বেলজিয়াম, রাশিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও সুইডেনের উপর। সঙ্গে পুরনোর ঐতিহ্য ধরে রাখার চাপ ব্রাজিল, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও উরুগুয়ের ওপর। যদিও ব্রাজিল, ফ্রান্স এবং উরুগুয়ে- এই তিন দলের যেকোনো একটির মাত্র ফাইনালে টিকে থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

১৫ আসর পর বিশ্বকাপ নতুন চ্যাম্পিয়ন পেয়েছিল ১৯৯৮ সালে। সেবার স্বাগতিক ফ্রান্স ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে ইতিহাস উল্টে দিয়েছিল। তারপর সে কাজটি করেছিল স্পেন। ২০১০ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্পেন। ফাইনালে তারা হারিয়েছিল নেদারল্যান্ডসকে।

বিশ্বকাপের ২১তম আসর নতুন চ্যাম্পিয়ন পাবে কি না, সে হিসাব মেলানোর সময় এখনো আসেনি। তবে কখনো চ্যাম্পিয়ন না হওয়া রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার একটি সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠবে এটা নিশ্চিত। ইংল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলে নতুন কারও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা টিকে থাকবে ফাইনাল পর্যন্ত।

কোয়ার্টার ফাইনালে কাগজ-কলমের বড় লড়াইটা প্রথম দিনই। দুইবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে এবং একবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ৬ জুলাই মুখোমুখি হবে নিঝনি নভগোরদে। এমবাপে-গ্রিজম্যান আর সুয়ারেজ-কাভানিদের লড়াইটা বেশ জমবে বলেই ধারণা ফুটবল বিশেষজ্ঞদের।

প্রথমবার, ১৯৩০ ও ১৯৫০ সালের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে সর্বশেষ সেমিফাইনাল খেলেছে ২০১০ সালে। হেরেছিল নেদারল্যান্ডসের কাছে। পরে স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ৩-২ গোলে জার্মানির কাছে হেরে চতুর্থ হয়েছিল প্রথম চ্যাম্পিয়নরা।

দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে ফ্রান্সকে জিততে হবে নিঝনিতে। ১৯৯৮ সালে ঘরের মাঠে ফাইনালে ব্রাজিলকে হারানো ফ্রান্স পরে আরেকবার ফাইনাল খেলেছিল ২০০৬ সালে জার্মানি বিশ্বকাপে। ইতালির কাছে তাদের হারতে হয়েছিল টাইব্রেকারে। এবারের ফ্রান্স দলটি তারুণ্যনির্ভর। তরুণ এমবাপের চমকে তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে বিদায় করেছে আর্জেন্টিনাকে। সম্ভাব্য ফাইনালিস্ট হিসেবে ফরাসিরা টিকে আছে ভালোভাবেই।

বাকি তিন কোয়ার্টার ফাইনালের দুটিতে পুরনো আর নতুনের লড়াই। একটিতে ব্রাজিল-বেলজিয়াম, অন্যটিতে ইংল্যান্ড-সুইডেন। শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে রাশিয়া-ক্রোয়েশিয়া। কাজানে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামবে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্রাজিল-বেলজিয়াম মুখোমুখি হয়েছে চারবার। এর মধ্যে ১৯৬৩ সালে প্রথম সাক্ষাতে একটি প্রীতি ম্যাচে বেলজিয়াম ৫-১ গোলে জিতলেও পরের তিন আসরে জয়ের হাসি ছিল ব্রাজিলের। এর মধ্যে বিশ্বকাপে দুই দলের দেখা হয়েছিল একবার। জাপান-কোরিয়া বিশ্বকাপে সর্বশেষ সাক্ষাতে ব্রাজিল জিতেছিল ২-০ গোলে।

সামারার কোয়ার্টার ফাইনালে সুইডেনের বিরুদ্ধে ফেবারিট থাকবে কাগজ-কলমে ইংল্যান্ডই। ১৯৯০ সালে সর্বশেষ সেমিফাইনাল খেলেছে ইংলিশরা। জার্মানির কাছে হেরে ফাইনাল খেলার স্বপ্নভঙ্গের পর ইংল্যান্ড চতুর্থ হয়েছিল ইতালির কাছে হেরে। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড-সুইডেন এখনো কেউ কাউকে হারাতে পারেনি। ড্র হয়েছে তাদের আগের চারবারের ম্যাচ।

সোচির কোয়ার্টার ফাইনালের দুই দল রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার অতীত মুখোমুখির ফল অবশ্য ভালো নয় স্বাগতিকদের। তিনবারের সাক্ষাতে একটি জয় আছে ক্রোয়েশিয়ার। বাকি দুটি ড্র। ১৯৯৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে চমক দেখানো ক্রোয়েশিয়া তৃতীয় হয়েছিল নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে। তাদের সবচেয়ে বড় চমক ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানিকে ৩-০ গোলে হারানো।

রাশিয় তো এই বিশ্বকাপে চমকের নাম। বিশেষ করে দ্বিতীয় রাউন্ডে স্পেনকে বিদায় করা দলটি এখন সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখছে। অনেক রাশিয়ান তো মনে করছেন তাদের দেশ ফাইনালেও খেলবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)