প্রতিদিন ডিমের কুসুম খাচ্ছেন তো?

মেয়েরা যখন মা হতে চলে তখন তাদের দ্বৈত সত্ত্বার প্রকাশ ঘটে। একদিকে তিনি নিজে থাকেন এবং আরেকদিকে থাকে তার শরীরে বাড়তে থাকে একটা প্রাণ। তাই তো জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে নিজের খেয়াল রাখার মধ্য়ে দিয়ে বাচ্চারও খেয়াল রাখতে হয় ভাবী মায়েদের। আর ঠিক এই কারণেই তো এমন বিশেষ সময়ে কিছু খাবরের উপর ভরসা রাখার পরামর্শ দেন গাইনোকোলজিস্টরা, যার মধ্যে অন্যতম হল ডিমের কুসুম।

সম্প্রতি হওয়া একটি গবেষণার পর বিশেষজ্ঞরা এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে গেছেন যে ভাবী মা এবং বাচ্চার সার্বিক শারীরিক বিকাশের জন্য ডিমের কুসুমের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। তাই মায়েরা যদি প্রতিদিন একটা করে ডিমের কুসুম খাওয়া শুরু করেন এবং সেই সঙ্গে মাছ, ডাল, বাদাম এবং ব্রকলির মতো খাবারকেও রোজ ডায়েটের জায়গা করে দেন, তাহলে বাচ্চার কোনও ধরনের ক্ষতি হাওয়ার আশঙ্কা তো কমেই। সেই সঙ্গে মা ও বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশ এত মাত্রায় ঘটে যে উভয়েরই “আই কিউ” লেভেল বাড়তে শুরু করে।

কর্নওয়েল ইউনির্ভাসিটির গবেষণায় দেখা গেছে ডিমের কুসুমে কোলিন নামক একটি উপকারি উপাদান থাকে যা এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে এই উপাদানটি শরীরে প্রবেশ করার পর মায়ের দেহের অন্দরে এমন পরিবর্তন ঘটাতে শুরু করে যে তার প্রভাবে মা এবং বাচ্চা উভয়েরই কগনিটিভ ফাংশনের উন্নতি ঘটে।

নিয়মিত কুসুম খেলে ভাবী মায়েদের যে কেবল ব্রেন পাওয়ারই বৃদ্ধি পায়, এমন নয়, সেই সঙ্গে শরীরও রোগ মুক্ত হয়ে ওঠে। তাই তো সুস্থ শরীর, খুশি মন এবং আনন্দময় জীবন পেতে কুসুমের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে ডিমের কুসুম নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। পেশির গঠনকে মজবুত করার পাশাপাশি এনার্জির ঘাটতি দূর করতে এবং শরীরকে চাঙ্গা রাখতে ডিমের কুসুমের বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর তাই নিজের এবং বাচ্চার ব্রেন এবং ফিজিকাল পাওয়ার বাড়াতে কাল সকাল থেকেই শুরু করে দিন ডিমের কুসুম খাওয়া। এমনটা যদি করতে পারেন, তাহলে দেখবেন আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই উপকারগুলি পেতে শুরু করবেন…

হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটবে: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ডিমের অন্দরে উপস্থিত ফসপোলিপিড নামক একটি উপাদান মেটাবলিজ বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে।

প্রোটিন এবং মিনারেল যোগান বাড়বে: একটা ডিমের কুসুমে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এই পরিমাণ প্রোটিন শরীরে প্রবেশ করা মাত্র কোষেদের ক্ষত দূর করে তাদের পুনরায় চাঙ্গা করে তোলে। সেই সঙ্গে নতুন কোষেদের জন্ম যাতে ঠিক মত হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। প্রোটিন ছাড়াও ডিমের কুসুমে রয়েছে ৬৬ এম জি ফসফরাস এবং ২২ এম ডি ক্যালসিয়াম। এই দুটি উপাদান আমাদের শরীরের মধ্যে থাকা ৩৭ ট্রিলিয়ান কোষেদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে এবং হাড়কে শক্তপোক্ত করতে দারুন কাজে আসে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চাহিদা মিটবে: দুটো ডিমের কুসুম খেলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কোনও ঘাটতিই থাকে না। শুধু তাই নয়, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ট্রাইপোফেন এবং টাইরোসিনের মতো উপাদানের ঘাটতিও দূর করে। ফলে শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভবনা হ্রাস পায়। কারণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হল এমন একটি উপাদান, যা একাই শরীরের নানাবিধ ক্ষয়কে রোধ করে দেয়। ফলে কোনও রোগই শরীরকে আক্রামণ করার সুযোগ পায় না।

ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে-এর ঘাটতি মিটবে: শরীরে এই ভিটামিনগুলির মাত্রা যত বাড়বে, তত দেহে পুষ্টির অভাব দূর হবে। সেই সঙ্গে নানাবিধ রোগের প্রকোপও কমবে। এখানেই শেষ নয়, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে এমনটা দাবি করা হয়েছে যে ভিটামিন ডি, ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এবার বুঝতে পারছেন তো ডিমের কুসুম খাওয়া কতটা জরুরি।

বায়োটিনের ঘাটতি দূর হবে: শরীরে ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে বায়োটিন। তাই তো এই উপাদানটির ঘাটতিতে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়। সেই কারণেই দেহে যাতে কোনও সময় বায়োটিনের অভাব দেখা না দেয়, সে কারণে প্রতিদিন একটা করে কুসুম খেতেই হবে। না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ!

উপকারি কোলেস্টেরলের যোগান বাড়াবে: শরীরকে সচল রাখতে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াটা একান্ত জরুরি। আর কীভাবে হবে এমনটা? খুব সহজ! প্রতিদিন ডিমের কুসুম খেলেই দেখবেন ধীরে ধীরে শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করবে। তখনই বুঝবেন উপকারি কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে আপনার শরীরে। প্রসঙ্গত, উপকারি কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে থাকে। ফলে হার্টের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

শরীরে ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি দূর হবে: একটা ডিমের কুসুমে প্রায় ০.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১২ থাকে। এই ভিটামনিটি শরীরে জমে থাকা চর্বি ঝরিয়ে ফেলার পাশাপাশি নার্ভ সেলের কর্মক্ষমতা বাড়াতে কাজে আসে। প্রসঙ্গত, কাঁচা ডিমের কুসুমে ফলেট নামে একটি উপাদানও থাকে। এটি অ্যানিমিয়া রোগের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে।

অ্যালার্জির প্রকোপ কমবে: ডিম খেলেই যাদের অ্যালার্জি হয়, তারা এবার থেকে কাঁচা ডিম খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন ডিমের পুষ্টিও পাবেন, আবার কোনও শারীরিক সমস্যাও হবে না। আসলে রান্নার সময় ডিমের অন্দরে থাকা প্রোটিনের চরিত্র একেবারে বদলে যায়। যে কারণে অনেকেরই শরীরে সেই বদলে যাওয়া প্রোটিন অ্যালার্জেনের ভূমিকা পালন করে অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়িয়ে তোলে।

ডেইলি বাংলাদেশ/আরএ

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)