সাতক্ষীরা-০১ আসনে নির্বাচনী প্রচারণায় ২৭ প্রার্থী

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগসহ সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ, উঠান বৈঠক এবং সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে জামায়াত-বিএনপি প্রকাশ্যে কোনো দলীয় কর্মকান্ড কিংবা সভা-সমাবেশ করতে না পারলেও গোপনে সংঘবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগে একাধিক ব্যক্তি মনোনয়নের জন্য মাঠে তৎপর থাকায় সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। তবে সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীই এখন পুরোদমে নির্বাচনমুখী।

গ্রামগঞ্জের হাট-বাজার, রাস্তায়-ঘাট, চা স্টল, দোকান পাট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব স্থানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু একটাই, কোন দলের প্রার্থী কে? ফলে দলের মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়ার নানা হিসাব-নিকাশ নিয়ে চলছে চলতি সময়ের রাজনীতি। দেশ স্বাধীনের পর তালা কলারোয়া আসনটির ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনে বিএনপি ও ২০০১ সালে ভোটে বিএনপি, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ১৯৮৮সালে জাতীয়পার্টি ও ২০১৪ সালে ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত ওয়ার্কার্স পার্টি জয়লাভ করে।

আগামী নির্বাচনে মহাজোট আসনটি ধরে রাখার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হলেও বড় সমস্যা মহাজোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে। অন্যদিকে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি ও জামায়াত সাংগঠনিকভাবে নিম্প্রভ। তবে গোপনে হলেও তারা তাদের হারানো এ আসনটি পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাতক্ষীরায় জামায়াতে ইসলামের প্রকাশ্য কোন তৎপরতা দেখা না গেলেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টি সাংগঠনিক তৎপরতা বেশ জোরে সোরে দেখা যাচ্ছে।

সাতক্ষীরার তালা ও কলারোয়া দুটি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ১০৫ (সাতক্ষীরা-১) আসন। মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৭ হাজার ৮৯১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ৮১৮ জন ও পুরুষ ভোটার রয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৭৩ জন। জেলার সবচেয়ে রাজনৈতিক সহিংসতাপ্রবণ এ আসন নিয়ে অনেকটাই চলে আসছে জেলার রাজনীতি।

গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রকৌশলী মুজিবুর রহমানের কাছে পরাজিত হন। গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এখানে আওয়ামী লীগের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাকে প্রার্থী করা হলে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। এ আসনে বিএনপিকে জামায়াতের ওপর ভর করে আর ওয়ার্কার্স পার্টিকে আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার কারণে এ আসনটি হয়ে পড়েছে জোট নির্ভর। এখানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভোটের হার প্রায় সমানে সমান। তবে আগামী নির্বাচন জোটগত ভাবে হলে আ’লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট ও বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের পক্ষে প্রার্থী দিলে একাদশ নির্বাচনে নেতি বাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আবার নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সরকারি দলের নেতা পরিচয়ে কারো কারো প্রার্থীদের পাল্লাভারি করতেও দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ এদের আবার সিজনাল পাগল বলেও আখ্যায়িত করছেন। কেউ আবার পরিচিতি পাচ্ছেন পোষ্টার সর্বস্ব নেতা হিসেবে। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস পূর্বেও সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) নির্বাচনী এলাকায় ঠিক এমন অবস্থায় এগিয়ে চলেছে নির্বাচনী প্রচারণা।

গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় মহাজোটের স্বার্থে আওয়ামীলীগ আসনটি থেকে ওয়ার্কাস পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে মনোনয়ন দিলে তিনি ১৪ দলের টিকিটে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছিলেন। তবে এবার নির্বাচনে গত ৫ বছরের মূল্যায়নে নিজ দলীয় প্রার্থী চাইছে আ’লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। আর সে কারণে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে প্রার্থী ছড়াছড়ির ঘটনাও এবার বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে। পক্ষান্তরে বর্তমান সংসদ সদস্যের দল ওয়ার্কার্স পার্টি ফের জোটগত আসনটি ধরে রাখতে চায়, মহাজোটের অপর শরিক জাতীয় পার্টি ও জাসদও চায় আসনটি।

সেক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে আসনটি নিয়ে মহাজোটে কোন নতুন সংকট তৈরী হয় কিনা তাই এখন দেখার বিষয়। তবে বিপরীত ঘরানায় একক প্রার্থী হিসেবে অনেকের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। তবে তাদের উপরও প্রার্থিতা নিয়ে ছড়ি ঘুরাচ্ছে তাদের জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী। তাদের দাবি গতবার বিএনপিকে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী দিলেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে বিএনপি’র দাবি ভিন্ন। তাদের সাফ কথা, গতবারের এক তরফার নির্বাচনের পর বিএনপি’র অবস্থান এখন অন্য যেকোন দলের চেয়ে ভাল। তাই আসনটি শরীকদের মধ্যে বন্টন করে নতুনভাবে এখানে তারা আশংকা তৈরী করতে চাননা। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যেসকল সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নাম  জনমানুষেরমুখে মুখে শোনা যাচ্ছে তারা হলেন :

১. সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান,

২. সাবেক সংসদ সদস্য বিএম নজরুল ইসলাম,

৩. জেলা আ.লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. অনিত মূখার্জী,

৪. বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সরদার মুজিব,

৫. কেন্দ্রীয় সৈনিকলীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম,

৬. কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবকলীগের নির্বাহী সদস্য সরদার আমজাদ হোসেন,

৭. সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা কামরুজ্জামান সোহাগ,

৮. কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম,

৯. জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র,

১০. জেলা কৃষক লীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু,

১১. জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি,

১২. কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন,

১৩. কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (মন্ময় মনির),

১৪. তালা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম,

১৫. তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমার,

১৬. সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাড. মোহাম্মদ হোসেন,

১৭. সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের তথ্য উপদেষ্টা সৈয়দ দিদার বখত,

১৮. তালা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নজরুল ইসলাম,

১৯. ওয়ার্কাস পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ও জেলা ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি অ্যাড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি,

২০. কেন্দ্রীয় জেএসডির জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান,

২১. তালা উপজেলা জেএসডির সভাপতি প্রফেসর আবু বক্কর,

২২. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক শেখ ওবায়দুস সুলতান বাবলু,

২৩. সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব,

২৪. কলারোয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম,

২৫. জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ,

২৬. বাংলাদেশ জাসদ এর কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক প্রভাষক ইদ্রিস আলী ও

২৭. ব্যবসায়ী জামান (স্বতন্ত্র)।

 

তবে আ’লীগের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ জানান, ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী খুনসহ যে তাণ্ডব চালিয়েছিল সে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য কঠোর ভুমিকা পালন করেছেন তিনি। এমপি হওয়ার পর তালা-কলারোয়ার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে কপোতাক্ষ নদ খনন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে অন্য বারের তুলনায় সরকার এ আসনে বেশি অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। দলীয় কোন্দল, দলবাজি, টেন্ডারবাজির সাথে নিজে না থাকা এবং এটাকে স্বাভাবিকভাবে করতে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাঁদামুক্তভাবে ব্যবসা করছে, কোনো হয়রানির শিকার হয়নি।

এর আগে তালা-করারোয়ায় কালো টাকা নিয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা হতো। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবোকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। একটি সুষ্ঠু রাজনীতির ধারা ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম অব্যাহত রাখা হয়েছে। এসব কারণেই তিনি আবারও মহাজোটের মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী তালা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ত্যাগী নেতা শেখ নূরুল ইসলাম বলেন, এ আসনটি আ’লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের দখলে আসলেও বর্তমান ওয়ার্কাসপার্টিও এমপির কাছে উন্নয়ন নিয়ে প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির ঘাটতি আছে অনেক। এবার আর শরীক নয়, আ’লীগের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। শহীদ পরিবারের সন্তান ও আ’লীগের ত্যাগী নেতা হিসেবে সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরও জানান, ১৯৭৯ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করি। ১৯৮৩ সালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ১৯৮৮ সালে তালা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। ১৯৯৩ সালে জেলা কমিটির সদস্য এবং ২০০৪ সালে তালা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি হয়ে আজও সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।

২০১৪ সালে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দের চিঠিও পান। কিন্তু ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় এবং জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে শেষ মুহূর্তে জোটের স্বার্থে ওয়ার্কার্স পার্টির দাবিতে দলীয় সভানেত্রী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে মনোনয়ন দেন। এরপর তিনি শেখ হাসিনার সাথে দেখা করলে নেত্রী তাকে আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেলে এ আসনটিতে জয় ছিনিয়ে এনে শেখ হাসিনার হাতে উপহার দিতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ নুরুল ইসলাম।

এদিকে আ’লীগের নতুন মুখ হিসেবে মাঠে কাজ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী (বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ) অ্যাড. মোহাম্মদ হোসেন। শেখ হাসিনার উন্নয়নমূলক ব্যানার ফেস্টুনে শুধু তালা-কলারোয়ার নির্বাচনী এলাকা নয় ছেয়ে ফেলেছেন পুরো জেলা। তিনি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাতক্ষীরা ঢাকাস্থ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি। বর্তমান তালা উপজেলা আইনজীবী সমিতির ঢাকাস্থ সভাপতি। ইতোমধ্যে তিনি ব্যাপক গণসংযোগ, সুধীসমাবেশ ও মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে নতুন মুখ হিসেবে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের মামলা-মকদ্দমাও বিনামূল্যে দেখাশুনা করছেন।

প্রতিনিয়ত উঠোন বৈঠকের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনসম্মুখে তুলে ধরছেন। শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী যিনিই হোন তাকেই ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। ইতোমধ্যে সৎ ও বিনয়ী হিসেবে তালা-কলারোয়া মানুষের কাছে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়ছেন।সর্বদলীয় লোকজনও তাকে সমর্থন দিচ্ছেন বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, দলের উচ্চ পর্যায়ে তার কথা হয়েছে। কেন্দ্রের সিগন্যালেই তিনি এলাকায় কাজ করছেন। সাতক্ষীরা-১ আসনের ভোটাররা তরুণ ও সৎ নেতৃত্ব চায়। দলের হাই কমান্ড তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচিত হয়ে এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট, কৃষির উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাবেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগেরর নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে একমাত্র তার দারা বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব।

দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি আলহাজ ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান জানান, ২০০০ সালে তিনি সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে একটানা ১৫ বছর জেলা আ.লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালে এ আসন থেকে তিনি বিজয়ী হন। তিনি এমপি হওয়ার পর কপোতাক্ষ খনন ও শালিকা নদী খনন করেন, ১৩টি সাইক্লোন সেন্টার ভবন নির্মাণ, পাকা রাস্তা, স্কুল কলেজের নতুন ভবনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এদিকে তালা-কলারোয়াসহ সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নের কান্ডারী দক্ষিণ বঙ্গের কৃতি সন্তান সাতক্ষীরা-১ আসনের প্রয়াত এমপি সৈয়দ কামাল বখত সাকির একমাত্র পুত্র জেলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছেন। প্রতিটা দলীয় কর্মকাণ্ডে রয়েছে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ। সার্বক্ষণিক দলীয় নেতা-কর্মীদের বিপদে-আপদে খোঁজ খবর রাখেন। ২০১৩ সালে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার সময়ও সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র রাজপথে থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন। তার দাদা ছিলেন অবিভক্ত বাংলার ডেপুটি স্পিকার। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসাবে বংশীয়ভাবে রয়েছে তাদের সুপরিচিতি ও সুক্ষাতি। সৎ ও নির্লভ মানুষ হিসাবে তালা-করারোয়ার মানুষ তাকে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগে অভিভাবক হিসাবে দেখতে চায় বলে তিনি মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদি বলে জানিয়েছেন।

আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন বলেন, তিনি ১৯৮১ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতি শুরু করে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান কলারোয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন। ২০১৩ সালে জামায়াত-বিএনপির নাশকতা তিনি একক নেতৃত্বে জনগনকে সাথে নিয়ে প্রতিহত করেছেন। তরুণদের সম্পৃক্ত করে সু-সংগঠিত ও গতিশীল করেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে এই সর্বপ্রথম তার নেতৃত্বে রাজনৈতিক কৌশল ও মেধা-বুদ্ধি দিয়ে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের দলীয় চেয়ারম্যান ও পৌরসভার ১২টি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে অদ্যাবধি তালা-কলারোয়ার সকল নেতাকর্মীদের সাথে তার আত্মার বন্ধন তৈরি হয়েছে। যা আগামী নির্বাচনে নেত্রী সদয় হয়ে তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি বিজয়ী হবেন বলে মনে করেন।

দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় সৈনিক লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি সরদার মুজিব বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। দীর্ঘদিন ধরে নিজ উদ্যোগে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সেবা করে যাচ্ছেন। উন্নয়নমূলক বিভিন্ন উদ্যোগে তার অংশগ্রহণ রয়েছে। দলের পরীক্ষিত ও বঞ্চিত নেতা-কর্মীদের সুখ-দুঃখে সব সময় পাশে আছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ৩০ হাজার ভোট পান। নির্বাচন নিয়ে নানামুখি আলোচনা থাকলেও তালা-কলারোয়ার ২৪টি ইউনিয়নে এককভাবে তিনিই নিজস্ব সুদক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তুলেছেন। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের সাথে তার আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আগামী নির্বাচনে দলের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা উন্নয়নের নেত্রী শেখ হাসিনা দল থেকে মূল্যায়ণ করবেন বলে তিনি মনে করেন।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত জানান, তিনি মন্ত্রী থাকা কালীন সময়ে তালা-কলারোয়ায় সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। তালা ও কলারোয়া কলেজ সরকারিকরণ, উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণ, বেত্রবতী নদীর ওপর ব্রিজ, পাটকেলঘাটা ব্রিজ, তালা হাইস্কুল ও বালিকা বিদ্যালয় সরকারিকরণসহ অসংখ্য উন্নয়ন করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের অনুমতি নিয়েই আগামী সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন পেলে তিনি আবারও নির্বাচিত হবেন।

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনে তালা-কলারোয়া থেকে তিনি বিএনপি মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী। বর্তমান সরকার তাকেসহ তার নেতাকর্মীদের একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি করে এলাকা ছাড়া করেছে।

বর্তমানে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে রেখেছে সরকার। বেগম জিয়াকে জেলে রেখে কখনই নির্বাচন সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে বাংলার জনগণ ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে দাঁতভাঙা জবাব দেবে। আর সে নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি। নির্বাচন নিয়ে তার একটাই কথা,পূর্বে জনগণের জন্য কাজ করলে আবারও তারা তাকেই ম্যান্ডেট দেবে।

আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচন যদি হয় কোন চ্যালেঞ্জের নাম তবে আমি সেই চ্যালেঞ্জ,এলাকার সাধারণ জনগণও চাচ্ছে একজন ক্লিন ইমেজের প্রার্থী সে হিসেবে দলই বিবেচনা করবে বিষয়টি। তবে দলের বৃহত্তর স্বার্থে যাকে মনোনয়ন দেবে তিনি তার পক্ষেই কাজ করবেন বলে জানান এ কেন্দ্রীয় নেতা।

কৃষকলীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে নৌকায় উন্নমূলক কাজ করে চলেছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামে গ্রামে কাজ করেছেন। তিনি মনোনয়ন পেলে শতভাগ চেষ্টা করে দলকে বিজয়ী করবেন।

সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য সাতক্ষীরার স্থানীয় দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ স ম আলাউদ্দিনের মেয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সাতক্ষীরার স্থানীয় দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার সম্পাদক মিষ্টিভাষী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের বলিষ্ঠ নেত্রী লায়লা পারভিন সেঁজুতি বলেন, একজন সৎ নিষ্ঠাবান ও সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করতেন এমন মানুষের সন্তান তিনি। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনী লড়াই হবে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যে ।স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির নতুন প্রজন্মের মানুষ হিসেবে তিনি মনোনয়ন পেলে এ নির্বাচনে জয়লাভ করবেন বলে আশাবাদী।

তালা কলারোয়ার সাবেক সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্টজন প্রয়াত সৈয়দ কামাল বখত্ সাকীর একমাত্র সন্তান সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র দীর্ঘদিন ধরে এ আসনে মনোনয়ন লাভের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতা মো. রফিকুল ইসলামও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনিও এ আসনে কাজ করে চলেছেন।

এদিকে দলের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ কর্মকর্তা এ্যাডভোকেট অনিত কুমার মুখার্জী। সাতক্ষীরা জজ কোর্টের মানবাধিকার আইনজীবী অনিত কুমার মুখার্জী দীর্ঘদিন ধরে তালা ও কলারোয়ার সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলে মিশে কাজ করে ব্যাপক গ্রহণ যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এ্যাডভোকেট অনিত কুমার মুখার্জী বলেন, তিনি তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই তৃণমূল মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হিসেবে সব সময় তাদের পাশে রয়েছেন। মনোনয়ন পেলে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করবেন বলে আশা করছেন।

তিনি বলেন, দলের উচ্চপর্যায়ে তার কথা হয়েছে। সাতক্ষীরা-১ আসনের ভোটাররা তরুণ ও সৎ নেতৃত্ব চান। দলের হাইকমান্ড তাকে মনোননয়ন দিলে তিনি নির্বাচিত হয়ে এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট, কৃষির উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ সার্বিক উন্নয়নে নিজিকে উজাড় করে দিয়ে জনসেবায় কাজ করে যাবেন।

মন্ময় মনির বলেন, অামরা যে মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা, চিত্ত বিনোদন সম্পকে মানুষ যে ধারণা পোষণ করে তার নেতিবাচক সিস্টেম বা নিয়মের পরিধি সম্বন্ধে আমরা সচরাচরই বলে থাকি। কিন্তু সেটা ভেঙ্গে নতুন করে অাইন তৈরির পরামর্শ দেবো। তাই সকলকে সাথে নিয়ে সমাজে বসবাসকারী মানুষ তথা সামগ্রিক উন্নয়নে নিজের জীবন উৎস্বগ করবো। অার যারা আফগানিস্তান, সিরিয়া, পাকিস্তানের পথে দেশকে যারা নিয়ে যেতে চায় এবং দিনের পর দিন পেট্রল বোমা দিয়ে যারা মানুষ ও তার সম্পদ পুড়িয়ে দিয়েছিল, তাদের সাথে কোন অাপস নয়, অার তাদের সাবলীল ভাষায় সমুচিত জবাব দিয়ে পারষ্পপারিক সাহায্য, সহযোগিতা এবং সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে সকল শ্রণি পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে সমাজবিরোধী, নষ্ট-ভ্রষ্ট মানুষদের অসামাজিক, সমাজ বিধ্বংসী কর্মকাণ প্রতিহতের মাধ্যমে নতুন সমাজ তৈরি করবো। সে জন্য তালা-কলারোয়ার জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণসহ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সমর্থন কামনা করি।

উল্লেখ্য, সব মিলিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগেই এ আসনটি মূলত নির্বাচনী জ্বরে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে অন্তত তেমনটাই মনে হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি জনগণেরও ভাবনার বিষয়, আগামী নির্বাচন ১৪ দলীয় মহাজোটের জন্য চালেঞ্জ থাকবে আসনটি ধরে রাখার আর ২০ দলীয় জোটের জন্য পুনরুদ্ধারের। তবে উভয় শিবিরে গোঁদের উপর বিঁষ ফোঁড়া হিসেবে থাকছে প্রার্থী নির্বাচনে শরিকদের সন্তুষ্টি আর অসন্তুষ্টি নিয়ে। ঠিক এমন অবস্থায় আসনটিতে ভোটের আগে মাঠের লড়াইয়ে কি হয় তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে শেষ সময় পর্যন্ত।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)