বয়স ৪০ হওয়ার আগেই গড়ে তুলুন এ অভ্যাসগুলো

৩০ বছর বয়স মোটেও স্নায়ুর উপর চাপ দেয় এমন কোনো বয়স না। তবে চল্লিশ বছর বয়সে একটু নতুন করে ভাবতে হয়। নতুন এই দশকে সময়ের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নিতে কখনো কখনো বেশ বেসামালই হতে হয়। তবে কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়। এমন আরো কিছু বিষয় আছে যেগুলো হওয়া উচিৎ শুধুমাত্র নিজের মানসিক আনন্দ, তৃপ্তিবোধের জন্যই।

চলুন জেনে নেয়া যাক এমন কতগুলো বিষয়।

না বলুন!

আমরা প্রত্যেকেই আমাদের নিজেকে ভালো লাগার জোন গুলোতে সাধারণত হ্যা বলতেই পছন্দ করি। অর্থাৎ আমরা সম্মতি দেই। এটা বেশ ভালো একটা দিকও। বেশিরভাগ এমন মানুষকে পছন্দ করেন যারা খুব সহজে সম্মতি দিয়ে দেয় যেকোনো বিষয়ে। কিন্তু সাইকোথেরাপিস্ট ইরিকা করমান বলেন, শুধু হ্যা বলাটাই ভালো দিক তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো ‘না’ বলতে পারাটাও একধরনের গুণ হিসেবে বলা যায়। এমনও মাঝেমাঝে হয় আমরা একটা ব্যাপার পছন্দ করি না, তবু কারো কারো খুশির জন্য আমরা হ্যা বলে দেই। না বলতে ভয় পাই, এর কারণ হিসেবে ভাবি সে বোধহয় আমাকে নিয়ে খারাপ কিছু ভাবতে বসবে।

৪০ বছর বয়স হল এমন একটা সময় যখন জীবনের অর্ধেকটা সময় আমরা পার করে আসি। জীবন সত্যিই খুব ছোট একটা সময়। জীবনের মধ্য সময় টায় এসে আমাদের এমন কিছু করা উচিৎ নয়, যেই কাজটা করে আমরা কোনো আনন্দ পাই না। কোনো কারণ পাই না। আমাদের চরিত্রে সেই শক্তিশালী সত্তাটা তৈরি করা উচিৎ যা আমাদের ‘না’ বলতে শেখাবে। অন্যরা কি ভাবলো তা না ভেবে নিজের পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে পারবে।

গো স্কাইডাইভিং!

এয়ারপ্লেন থেকে ঝাপিয়ে পড়ার মতো এতো এক্সাইটিং, চমৎকার থ্রিল বোধহয় আর কোনো কিছু থেকে পাওয়া যায়না। ব্যাপারটা খুবই বিপদজনক। এতে আপনি অনেক ভয় পেতে পারেন। তবে অন্য দিক থেকে ব্যাপারটা খুবই রোমাঞ্চকর ও বটে! এটা আপনাকে ক্রমশ হঠাৎ আপনার জীবনের আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনি অসম্ভব উত্তেজনায় চমৎকার অনুভব করতে পারেন। আপনার সুন্দর একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে জীবনে, যা আপনাকে গল্প করার সুযোগ এনে দেবে আপনার প্রিয় মানুষদের সঙ্গে। এটা শুধুমাত্র এই নয় যে এটা আপনাকে আপনার আনন্দ বাড়িয়ে দেবে, এটা একি সঙ্গে শেখাবে কি করে ভয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।

নিজেকে মাফ করে দিন!

যদি এমন হয় যে আপনি আপনার বয়স ৪০ পাড় করেছেন কিন্তু নিজের অতীত নিয়ে আপনার নিজের কোনো একটা কিছু নিয়ে কোনো অনুশোচনা বোধ নেই তবে আপনি অবশ্যই দুর্লভ একজন। আমরা আমাদের নিজেদের জীবনে এমন কিছু ভুল করে থাকি যেগুলো থেকে নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনা কখনো। আমাদের অনুশোচনা বোধ আমাদের দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনে বারবারই ব্যাঘাত ঘটায়। আপনি কখনো সুস্থির হতে পারেন না, অথবা স্বস্তিতে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন না। এই অনুশোচনা বোধ আমাদের বয়সকে আরো কয়েক বছর বাড়িয়ে দেয়। নিজের জীবনের মধ্য বয়সে এসেও অন্তত আমাদের কৃত কাজগুলোর জন্য নিজেদের ক্ষমা করে দেয়া উচিৎ। আপনি খুব অবাক হবেন, তবু টের পাবেন হঠাৎ করেই আপনি নিজেকে কতোটা মুক্ত আর সুখী ভাবতে পারছেন। মনে হবে আপনি আবার নতুন করে আপনার হারিয়ে যাওয়া মুহূর্ত গুলোকে খুঁজে পেয়েছেন। আপনার নতুন জার্নিটা হবে একদম স্বচ্ছ অপরাধ মুক্ত। আপনি নিজেকে নিয়ে আনন্দিত থাকতে পারবেন।

স্থানীয়দের মতো ঘুড়ে বেড়ান!

আমরা আমাদের জীবনে বৈচিত্র্য আনতে সবচাইতে বেশি যে কাজটা করি তা হল ঘুরে বেড়ানো। প্রতিদিনকার একঘেঁয়ে সময় থেকে ছুটি নেয়ার একমাত্র উপায় যেনো হুট করে কোথাও ঘুরতে বেড়িয়ে যাওয়া। নিউইয়র্ক, প্যারিস, সানফ্র্যান্সিসকো, লন্ডন আরো কতো কি দেশ আছে ঘুড়ে বেড়ানোর জন্য। তবে সবার প্রথম আমরা ভাবতে বসি যেকোনো জায়গার ট্যুরিস্ট স্পট গুলো নিয়ে। যেগুলো ট্যুরিস্টদের জন্য সাজানো গোছানো করে রাখা হয়। তবে আপনি কি কখনো অন্য কোনো ভাবে ভেবে দেখেছেন? এই ধরুন, আপনি যে দেশে গিয়েছেন সে দেশের মানুষের সঙ্গে মিশে গেলেন! ওরা যেমন করে কাপড় পড়ছে আপনি তেমন পড়লেন, ওরা যেমন খাবার খায় তেমন খাবার খেলেন। অথবা ওদের যেকোনো উৎসবে আয়োজন করলেন ওদের সঙ্গেই! আপনি ভাবতেও পারবেন না সে জায়গার ট্যুরিস্ট স্পট গুলো থেকে এই সংস্কৃতিতে ডুবে যাওয়াটা আপনাকে ঢের বেশি আনন্দ দেবে। আপনি খুবই চমৎকার অনুভব করতে শুরু করবেন। আপনি তাদের স্থানীয় মুহূর্ত গুলো দেখলে টের পাবেন ওদের জীবনটা কতোটা বৈচিত্র্য আপনার থেকে। এই বৈচিত্র্যতা আপনাকে আপনার জীবনে শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত গুলো এনে দেবে।

নিরাপদ চাকরি রেখে বেছে নিন স্বপ্নের চাকরীকে!

আমরা আমাদের নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে সবাই কিছুনা কিছু জানি। কি আমাদের প্রাপ্য এবং কি আমাদের সাধ্যের বাইরে এ সম্বন্ধে অন্তত সবার জানা আছে। তবে যখন আমাদের বয়স ৪০ পেরিয়ে যাবে, তখন আমাদের উচিৎ আরো বড় কিছু চিন্তা করা। আরো আলোকিত কিছু ভাবা যা আমাদের জীবনে পূর্বে অনুপস্থিত ছিল। অবশ্যই যা আমাদের নিজের স্বপ্নকে ধরে রাখে। জীবনের এই সময়টাতে দরকার নিজের প্রতি সন্তুষ্টি। এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা তাদের অপছন্দের কাজকে বেছে নিয়েছেন নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে। কিন্তু যখন ৪০ পেরিয়েছেন তখন তাদের আর নতুন কিছু করার ও ইচ্ছেবোধ হারিয়ে যায়। জীবনকে আনন্দ, স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য নিজেদের ভালো লাগা, স্বপ্ন আর আনন্দের জায়গা গুলোতেই ছুটে চলাই বোধহয় সবচেয়ে মঙ্গলকর। নিরাপত্তার চাইতে জীবনে আত্মতৃপ্ত বোধ আমাদের প্রতিটা মুহূর্ত করে তোলে পরিপূর্ণ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)