জামাই ক’প্রকার ও কী কী?

  1. পেটুক জামাই – জামাই ষষ্ঠীর তিথিটা যেন এধরনের জামাইদের জন্যই বারবার ফিরে আসে। এঁরা সর্বভুক। খেতে খুব ভালোবাসেন। চেহারায় গোলগাল। মুখে এ খাবার, সে খাবারের গল্প লেগেই রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, এঁরা দারুণ টেস্টার। কোন রান্নায় কী মশলা ব্যবহার করা হয়েছে, কোন রান্নায় নুন কম, কোনটায় বেশি, এঁরা সব বলতে পারেন। একেবারে হাতেনাতে রিভিউ। এঁদের রেঁধে খাইয়ে খুব সুখ।

  2. হাসিখুশি জামাই – গোটা পরিবারকে আনন্দে ভরিয়ে রাখতে জানেন এঁরা। খুব মিশুকে, খুব অমায়িক। মোদ্দা কথা, ভেরি গুড বয়। ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে সকলকে একত্রিত করতে পারেন এঁরা। জামাইবাবাজি বাড়ি এলে চারদিকে কেমন খুশি খুশি রব চোখে পড়ে। শ্যালিকারা খুশি, শ্যালকরা ধরে প্রাণ ফিরে পান। তবে সব হাসিঠাট্টার মধ্যে শালীনতার মাত্রা কখনও লঙ্ঘন করেন না এঁরা।

  3. কাজপাগল জামাই – এই জামাই ধরাছোঁয়ার বাইরে। পারিবারিক অনুষ্ঠানেও এঁরা কাজ নিয়েই মেতে থাকেন। অবশ্যই অফিসের কাজে। এঁদের সম্মুখে সবসময়ই ল্যাপটপ কিংবা ট্যাবলেট খোলা থাকে। নয়তো অফিস থেকে অবিরাম ফোন আসতে থাকে একের পর এক।

  4. কর্তব্যপরায়ণ জামাই – এঁরা খুব দায়িত্ববান। পরিবারে নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো মেটাতে এঁরা সিদ্ধহস্ত। শাশুড়ি মায়ের বাতের ব্যথা কতখানি, শ্বশুরমশাইয়ের ডায়াবিটিজ় কত, সবেরই খবর নেন এঁরা। এক কথায় গুড জামাই। শান্ত, ভদ্র, পার্ফেক্ট।

  5. স্মার্ট জামাই – এঁরা আসলে খুব টেকস্যাভি। এঁদের নলেজ বলে, এঁরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপারে সকলের চেয়ে এগিয়ে। লেটেস্ট স্মার্টফোন, লেটেস্ট ল্যাপটপ, লেটেস্ট গাড়ি, এঁদের সংগ্রহে থাকে। সংগ্রহে না থাকলেও ঠোঁটের গোড়ায় থাকে লেটেস্ট গ্যাজেটের আপডেটেড ভার্শানের বুলি।

  6. শো-অফ জামাই – স্ত্রীকে গিফট্ করা মূল্যবান নেকলেস শ্বশুরবাড়িতে ফলাও করে দেখানোয় বিশ্বাসী এই জামাইকুল। এঁদের সঙ্গে দুদণ্ড কথা বলেই জানতে পারবেন গাড়ির দাম, বাড়ির দাম। সবসময় প্রাইজ়ট্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ান। ঠিক যেমনটা দেখানো হয়েছিল “থ্রি ইডিয়েটস্” ছবিতে।

  7. বড্ড গম্ভীর জামাই – এঁরা খুব রাশভারী। অসম্ভব পার্সোন্যালিটি। বাড়িতে এলে এক গ্লাস জল অফার করার সময়ও গলা শুকিয়ে যায় লোকজনের। স্বভাববশতই হোক বা পেশাগত কারণে, এঁরা প্রকৃত রাশভারী।

  8. (বদ) রাগী জামাই – কারণে, অকারণে মেজাজ খারাপ করেন এই প্রজাতির জামাইরা। সামনে যাঁকেই পান, তাঁর উপরই খিটিরমিটির শুরু করে দেন। একজনের উপর রাগ অন্যজনের উপর বর্ষণ করেন।

  9. পড়ুয়া জামাই – খুব ভালো স্টুডেন্ট এঁরা। একদা ক্লাসে ফার্স্ট হতেন। সেই পড়ার রোগটা বড় হয়েও ছাড়তে পারেননি। এঁরা সবসময় বইয়ে মুখ গুঁজে পড়ে থাকেন। বলতে পারেন, বউয়ের থেকে বইকেই বেশি ভালোবাসেন। এঁদের স্ত্রীদেরও সেটাই অভিযোগ। পড়ুয়া জামাইদের অনেক বিষয়ে অনেক জ্ঞান। জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়াও বলা যেতে পারে। এঁদের বাড়িতে নিজস্ব লাইব্রেরি থাকে। উপার্জনের বেশিটাই এঁরা খরচ করেন বই কিনে। উপকার দেওয়া ও নেওয়ার ক্ষেত্রেও বইকেই আদর্শ বলে মনে করেন।

  10. “সর্বে সর্বা” জামাই – বাড়ির মেয়েরা ভিক্টোরিয়া বেড়াতে যাবেন, জামাইকে তলব। রবিবারের বাজার করার কেউ নেই, ডাক জামাইয়ের। ঘরের রং কী হবে জামাই ঠিক করেন। এঁরা আসলে শ্বশুরঘরের সর্বে সর্বা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাড়ির জামাই থেকে বাড়ির ছেলের আসনে বসে যান।

  11. লোভী জামাই – প্রথম বছর ল্যাপটপ, পরের বছর মোটরসাইকেল, তারপরের বছর চারচাকা। জামাইয়ের খাই আর থামে না। দিনদিন বাড়তে থাকে, বাড়তেই থাকে। শ্বশুরের থেকে ক্রমাগত নিয়েই যান এঁরা। মনে করেন, রাজকন্যা ও অর্ধেক সম্পত্তি এঁদেরই। কথায় কথায় শ্বশুরের কাছে হাত পাততে এঁদের বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ হয় না। কখনও-সখনও স্ত্রীকে দিয়েও জিনিসপত্র হাসিল করার ফন্দি আঁটেন।

  12. বেপরোয়া জামাই – কোনও কিছুতেই গা করেন না। নিজের দুনিয়াতেই এঁরা মশগুল। শ্বশুরবাড়ির দিকে পা বাড়াতে চান না। স্ত্রীকেও তাঁর বাবা-মায়ের কাছে যেতে দিতে চান না। শ্বশুরবাড়ির লোকের চোখে এঁরা অসামাজিক। তাঁরা মনে করেন, বাড়ির মেয়ের জীবনটাই নষ্ট করে দিয়েছেন এই জামাই।

  13.  চিরতরুণ জামাই – এঁরা সাধারণত শারীরিকভাবে খুব সুঠাম। জিম, ডায়েট নিয়েই মেতে থাকতে ভালোবাসেন। মানসিকভাবেও এঁরা সুখী। তাই বয়স বাড়লেও এঁদের গ্ল্যামারের তারিফ লোকমুখে শোনা যায়। সন্তানরাও বাবার সঙ্গে বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দিতে গর্ববোধ করে।

  14. শাশুড়িভক্ত জামাই – এঁরা নিজের স্ত্রীয়ের চেয়ে শাশুড়িমায়ের ভক্ত হন বেশি। এঁরা শাশুড়ির জামাই কম, ছেলে বেশি। শাশুড়ি মায়ের সব কথা মন দিয়ে শোনেন। পরামর্শ মেনে চলার চেষ্টা করেন।

  15.  ব্যক্তিত্বহীন জামাই – যদি দেখেন, জামাইয়ের চেয়ে তাঁর স্ত্রীর দাপট বেশি, জামাই দুর্বল চিত্তের অধিকারী, তা হলে বুঝবেন সেই জামাইয়ের পার্সোন্যালিটি দমদার নয়। এঁরা শ্বশুরঘরে তেমন সমাদরও পান না।

  16. কৃপণ জামাই – নিজেকে হিসেবি প্রতিপন্ন করতে গিয়ে যে কখন কৃপণের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছেন, তা এঁরা নিজেরাই জানেন না। তবে এঁদের স্ত্রীরা বিলক্ষণ জানেন, এ ধরনের মানুষকে নিয়ে ঘরসংসার করা কতখানি কঠিন।

  17. রুচিশীল জামাই – শিল্প ও সংস্কৃতিতে তুখোড় রুচি এঁদের। বাড়ি সাজান আর্ট মিউজ়িয়ামের স্টাইলে। সিনেমা দেখেন অন্য ধরনের। এমন সব লেখকদের কথা বলেন, যাঁর নাম কেউ শোনেনি। তিনি আর্টি, তিনি ক্লাসি।

  18. বিতাড়িত জামাই – বাড়ির মেয়ে বাড়ির অমতে বিয়ে করেছেন বলে তিনি বিতাড়িত। এবং তাঁর সঙ্গে বিতাড়িত তাঁর স্বামীও। এই জামাই গোটা পরিবারের চোখের বিষ। এমনকী, বাড়িতে তাঁর নাম উচ্চারণ করাও মানা।

  19. অলস জামাই – খুব অলস এঁরা। ৯-৫টা অফিসের বাইরে কোনও কাজই এঁরা করতে চান না। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, সব করতে হয় এঁদের স্ত্রীদের। তাই এঁদের দাম্পত্যের মধ্যেই চলে আসে উদাসীনভাব।

  20. ঘরজামাই – মেয়েকে চোখের সামনে রাখার কারণে জামাইকে ঘরে রেখে দেন কোনও কোনও বাবা-মা। আবার কোনও কোনও জামাই নিজের অক্ষমতার কারণেই ঘরজামাই হয়ে যান স্বেচ্ছায়। ঘরজামাই হওয়া সুখকর হলেও সমাজের কাছে তা খুবই নিন্দনীয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)