কর্তব্য কাজে নিষ্ঠাবান একজন সরকারি কর্মকর্তা

কয়েক বছর ধরে সরকারি নিয়মে পরিনত হয়েছে শুক্রবার ও শনিবার সরকারি ছুটির দিন। বেসরকারি কোন কোন প্রতিষ্ঠান হয়ত কমবেশী উম্মুক্ত থাকে সেবা প্রার্থীদের সুবিধার্থে।

কিন্তু সে নিয়মের পুরোটাই ব্যতিক্রম সরকারি সকল দপ্তরে। সপ্তাহের এই দুইটি দিন অতীব জরুরী ও বিশেষ কোন কারন ছাড়া কোন দপ্তর খোলা পাওয়া যায় না। যদিও হাসপাতাল এবং থানার বিষয়টি ভিন্ন।
সাধারন মানুষও বিষয়টি অবগত থাকার দরুন তারা অহেতুক সপ্তাহের এই দুই দিন সরকারি কোন দপ্তরে সেবা নিতে হাজির পর্যন্ত হয় না।

তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম যে নয় এমনটা ভাবারও অবকাশ নেই। দাপ্তরিক কাজের জটিলতা কমাতে অনেক সময় কোন কোন সরকারি চাকুরীবি দপ্তারিক কার্যক্রমে ঠিকই অংশ নেন।
তেমনই একজন জনাব সুজন সরকার। যিনি বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারি চাকুরীজীবিদের বাঁধা ধরা নিয়ম থাকলেও তার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই যেমন শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কোন কোন সময় সকাল থেকে দুপুর আবার কাজের পরিধি বিশেষ বিকাল পর্যন্ত অফিস করেন তিনি।

অফিসের প্রধান কর্তাব্যক্তি যখন নিজেই অতিরিক্ত কাজের চাপ সামলাতে ছুটির দিনেও কাজ করছেন, তখন বাধ্য হয়ে ঐ দপ্তরেরই অপরাপর কয়েকজনকে অন্তত ‘অফিস প্রধান’র সাহায্যে এগিয়ে আসতে হচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলা ভূমি অফিস ঘুরে দেখা দেখে ইতিমধ্যে সেখানে ‘হেল্প ডেক্স’ থেকে শুরু করে অভিযোগ বক্স পর্যন্ত স্থাপন করা হয়েছে। ইতিপুর্বে পৃথক কোন রেকর্ড রুমের অস্থিত্ত্ব না থাকা থাকলেও সাবেক সহকারী কমিশনার জনাব আহসানউল্লাহ শরীফির সে উদ্যোগ ইতিমধ্যে দারুনভাবে সম্পন্ন করেছেন জনাব সুজন সরকার।
ইতিপুর্বে সেবা প্রার্থীদের যে জটলা এবং ধীরগতি ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো সুজন সরকার তার অফিস ষ্ট্যাফদের নিয়ে সে সমস্যারও সমাধান করেছেন। এখন আর অহেতুক কাউকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় না বলে জানালেন সেবা নিতে আসা প্রভাষক দেবাশীষ মিস্ত্রি।

মুন্সিগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ঐ ভদ্রলোক জানান সপ্তাহ চারেক আগে একদিন তিনি তার একটি জমির মিউটেশন নিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসে যান। লোহার গেট পার হয়ে গোলচত্তরের সামনে দাড়িয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভূমি অফিসের সাথে সম্পৃক্ত এবং কাজেকর্মে পারদর্শী (যদিও অফিসের কোন ষ্ট্যাফ নয়) এক ব্যক্তির সাথে কথা বলছিলেন। দেবাশীষ মিস্ত্রি আরও বলেন, আসলে তিনি জানার চেষ্টা করছিলেন কোন পদ্ধতিতে এগুলে কম খরচে সময় মত কাজটা সুরাহা হবে।

মুন্সিগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের ঐ শিক্ষক জানান, দুই জনের আলাপচারিতার একপর্যায়ে দোতলায় দাড়িয়ে নির্মান কাজ তদারকিতে ব্যস্থ সহকারী কমিশনার সাহেব তাকে ইশারায় উপরে ডেকে নেন। এক পর্যায়ে তার উপজেলা ভূমি অফিসে আসার ‘হেতু’ জানতে চান। বিষয়টি খোলামেলা বলার পর জনাব সুজন সরকার বলেন, এই অফিস মানুষের সেবা দেয়ার জন্য। অফিসের কারও কাছে দরকার থাকলে সরাসরি তার কাছে চলে যাবেন। কোথাও কোন বিড়ম্বনার সম্মুখীণ হলে নির্দ্বিধায় আমাকে বলবেন। অনুগ্রহ করে কোন দালাল বাটপারদের পাল্লায় পড়বেন না।

এ ধরনের ঘটনায় এটাই প্রথম নয়। বরং এমন অনেক ঘটনায় প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে শ্যামনগর উপজেলা ভূমি অফিস। তরিৎকর্মা একজন মেধাবী সরকারি চাকুরীজীবির বদান্যতায় এমনটা হয়েছে এবং হচ্ছে বলেও সেবা গ্রহীতা অনেকেরই দাবি।

আপাত দৃষ্টিতে একজন সহকারী কমিশনার(ভূমি) এর কাজ শুধুমাত্র ভূমি সংক্রান্ত বিষয়াদী নিস্পত্তি করা। তবে সুজন সরকারকে দেখা গেছে মাদক থেকে শুরু করে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল এমনকি রপ্তানীজাত পণ্য সাদা সোনা খ্যাত বাগদা চিংড়ীতে ক্ষতিকারক দ্রব্য মেশানোর বিরুদ্ধে কর্মচঞ্চল একজন ক্লান্তিহীন মানুষ হিসেবে।
সরেজমিনে তার দপ্তরে পৌছে দেখা গেছে অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম চলমান থাকলেও অফিসের প্রধান ব্যক্তি অনুপস্থিত। অফিস সহকারীদের দারস্থ হতেই তথ্য মেলে তিনি ঝুরঝুরিয়া খাল এলাকায় অবৈধভাবে পেতে রাখা নেট ও পাটা অপসারনের অভিযানে গেছেন।

কর্মক্লান্ত শরীরে ঘন্টা খানেকের মধ্যে অফিসে ফিরে কিছুক্ষন কাজ করে আবারও সুজন সরকারকে ছুটতে হলো সোয়ালিয়া বুড়িগোয়ালীনি এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে।
অফিস চলাকালীন সময়ে সামনে থেকে কিংবা অগোচরে লক্ষ্য করা গেছে সব শ্রেনী ও পেশার মানুষের প্রতি তার অত্যন্ত বিনয়ী আলাপচারিতা। যা তাকে আরও পাঁচজন সরকারি চাকুরীজির তুলনায় অনেক বেশী আলাদা মনে হয়েছে আমার কাছে।

উপজেলা ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা আমজাদ হোসেন, আজগর আলী, দিনবন্ধু মিত্রসহ অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে এখন সরকারি এ দপ্তরের সেবার মান অনেকগুনে বেড়ে গেছে। কাজের দীর্ঘসুত্রিতা কিংবা লাল ফিতার দৌরাত্ম বলতে যা কিছু বোঝায় তার বিন্দু মাত্র এখন আর তারা উপলিদ্বি করতে পারেন না।

দপ্তর প্রধান জনাব সুজন সরকারের কর্মদক্ষতা, কাজের প্রতি একাগ্রতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা সর্বোপরী দায়িত্ব জ্ঞান সরকারি এ দপ্তরের কাজে গতির সঞ্চারের কথা জানিয়েছে অনেকে।

নকিপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যারয়ের শিক্ষক আবু সায়াদ, বাদঘাটা গ্রামের হাফেজ মাওলানা আবু বক্কার ও শিবপদ মন্ডলসহ অনেকে জানান এমন একজন সরকারি কর্তকর্তা যে কোন এলাকার জন্য আশির্বাদ।
তারা আশা প্রকাশ করে বলেন বদলীযোগ্য চাকুরী। তাই কিছুদিন পরেই তাকে নুতন কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে। তবে মানুষের মনে রেখাপাত করে যাওয়া এ কর্মকর্তা যদি উপজেলা সদরের জলাবদ্ধতা নিরসন, ফুটপাত দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলসহ সরকারী জমি অবৈধভাবে ভোগদখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন তবে তার সাফল্যের মোড়কে নুতন পালক যুক্ত হবে।

আজ শুধু একজন সুজন সরকারের পরিচিতি তুলে ধরলাম। সমাজের বিভিন্ন অংশে হয়ত আরও এমন সুজন সরকার থাকতে পারে। তবে আমার যতদুর ধারনা সে সংখ্যা নেহায়েৎ অপ্রতুল। কিন্তু এমন একজন সুজন সরকারের মত করে যদি আমরা প্রত্যেকে আমাদের দায়িত্বের বাইরে দৃষ্টিসীমা মেলে ধরার চেষ্টা করি তবে অবশ্যই আমাদের এ দেশ একদিন সোনার বাংলা হবে-ই।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)