সাতক্ষীরার কৈখালীতে সাবেক ও বর্তমান দুই চেয়ারম্যানের প্রত্যক্ষ মদদে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ১৬ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিন নারীসহ ১০ জনকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সাবেক ও বর্তমান দুই চেয়ারম্যানের প্রত্যক্ষ মদদে তাদের সমর্থকদের মধ্যে ঐ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে শনিবার ঈদের নামাযের পর বেলা সাড়ে বারটার দিকে। ঘটনাস্থল ছিল কৈখালী ইউনিয়নের হয়দার আলীর ব্রিজ সংলগ্ন বৈশখালী এলাকায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতরা যথাক্রমে আমজাদ হোসেন মোড়ল (৫৬), রাশিদুল মোড়ল (৫৫), মান্নান মোড়ল(৫৩), শহর আলী(৩২), জিয়াউর রহমান (৪৫), আনোয়ারুল ইসলাম (৩৩)রফিকুল ইসলাম (৩৫), আব্দুল মাজেদ (৫০), মুরশিদ, রেজাউল, ছামিরন বিবি ও মরিয়ম বেগম।
তবে আহতদের মধ্যে ছামিরন বিবি, আনোয়ারুল ও জিয়াউর রহমানের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে কর্তব্যরত চিকিৎসকের দাবি।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায় পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে গত শুক্রবার কৈখালী ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের মধ্যে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ করা হয়।

এক পর্যায়ে বর্তমান আওয়ামীলীগ দলীয় সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম এবং জামায়াত সমর্থিত আব্দুর রহিম সমর্থকদের মধ্যে চাল দেয়া নিয়ে বাদানুবাদ হয়। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিষয়টি সুরাহা করেন।
স্থানীয় এসব সূত্র আরও জানিয়েছে শনিবার বেলা বারটার কিছু পরে আগের দিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান সমর্থকদের মধ্যে বাদানুবাদ ও উচ্চবাচ্য বিনিময় হয়।
এসময় রেজাউল করিম সমর্থক আবু বক্কার, মুরশিদ ও আব্দুল হাই তাদের নেতা রেজাউলকে মুঠোফোনে রিং করে তাকে ( চেয়ারম্যান রেজাউল) নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন আপত্তিকর মন্তব্য করছে বলে অবহিত করে। এসময় মুঠোফোনের ওপার থেকে নির্দেশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত রেজাউল করমি সমর্থকরা প্রতিপক্ষ আব্দুল রহিম গ্রুপের মাজেদ আলী, রফিকুল, মুরশিদ ও রেজাউল ইসলামের উপর আক্রমণ করে।
স্থানীয়রা আরও জানিয়েছে এখবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই পার্শ্ববর্তী জয়াখালী, সাপখালী,বৈশখালী এবং পূর্ব কৈখালী গ্রাম থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমের সমর্থকরা লাঠিসোটা নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের সমর্থকদের উপর চড়াও হয়।
এসময় দু’পক্ষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ দুর হতে ইট পাটকেল নিক্ষেপ
করে প্রতিপক্ষকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা করলে উল্লেখিত ব্যক্তিরা আহত হয়।
আজাহারুল আলম, মোমিন শেখসহ স্থানীয় কয়েকজন জানায় দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে আনারুল ইসলাম এবং জিয়াউরসহ রহিম চেয়ারম্যান সমর্থক রফিকুল মাথা ও ঘাঁড়ে ধারালো দায়ের আঘাত লাগে।
এছাড়া আমজাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির হাতের একটি আঙুল শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলেও জরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক শাকির হোসেন জানান।
এদিকে দু’পক্ষের এ সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলার কথা জানিয়েছে।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে সর্বশেষ নির্বাচনে রেজাউল করিম পরাস্ত হওয়ার পর বর্তমান চেয়ারম্যানের সাথে নানা কারণে তার প্রতিনিয়ত মনগড়া বিবাদ লেগে থাকে। যেকারনে শ্যামনগর উপজেলার বাকি ১১টি ইউনিয়নের কমবেশি উন্নয়ন দৃশ্যমান হলেও কার্যত কৈখালী অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়া সাবেক ও বর্তমান এই দুই চেয়ারম্যানের নির্দেশ মানতে যেয়ে অসংখ্যবার সংঘর্ষে জড়িয়ে গোটা এলাকার হাজার মানুষ শত শত মামলার আসামী হয়ে কারাবারনসহ ফেরার জীবন যাপন করছে।
কৈখালীর এমন অবস্থার অবসানে স্থানীয় সাধারণ মানুষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছে।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মান্নান আলী জানান, চাল বিতরণ কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের খবর আমি পেয়েছি । তবে থানায় এখন পর্যন্ত কেও অভিযোগ দেয়নি । অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)