হাসিনা যে সুযোগ পেয়েছিলেন, খালেদা তা পাচ্ছেন না

বিএএনপি’র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দের হাসপাতালে পাঠাবে না সরকার৷ অথচ এক সময় শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া দু’জনেই বন্দি অবস্থায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল বেছে নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন৷

ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেপ্তার হওয়ার পর শেখ হাসিনা স্কয়ার হাসপাতালে ১৫ দিন ভর্তি ছিলেন৷ তখন খালেদা জিয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল ইউনাইটেড হাসপাতাল৷

ওয়ান ইলেভেনের সময় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি প্রিজন ছিলেন মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী৷ তিনি  জানান, ‘‘ তখন দুই নেত্রী শেখ হাসিনা(বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) এবং খালেদা জিয়াকে(সাকেব প্রধানমন্ত্রী) গ্রেপ্তার করার পর তাঁদের সংসদ ভবন এলাকার সাবজেলে রাখা হয়েছিল৷ ওই সময়ে  চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনাকে বেশ কয়েকবার সাব জেল থেকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়৷ তাঁকে একবার ১৫ দিন ভর্তিও রাখা হয় স্কয়ার হাসপাতালে৷ অন্যদিতে খালেদা জিয়ার  চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছিল৷ সেখানে চিকিৎসার জন্য নেয়ার অনুমতিও ছিল৷ কিন্তু তখন কারাগারে থাকা অবস্থায় প্রয়োজন হয়নি বলে তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়নি৷ প্রয়োজন হলে নেয়া হতো৷ দু’জনকেই তাঁদের পছন্দমতো চিকিৎসা সৃবিধা দেয়া হয় তখন৷”

তিনি বলেন, ‘‘তবে কারাবিধি অনুযায়ী কারাবন্দিদের কারা হাসপাতাল বা অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়৷ যদি সরকারি হাসপাতালে সেই চিকিৎসা সুবিধা না থাকে, তাহলে প্রাইভেট হাসপাতালে নেয়া যায়৷ যেমন, ঢাকার বাইরে, যেমন ধরুন যশোর জেনারেল হাসপাতালে এক্সরে মেশিন নষ্ট, সেক্ষেত্রে বাইরের হাসপাতালে এক্সরে করানো হয়৷ তবে কারাবিধি’র চেয়েও বড় কথা হলো সরকারের ইচ্ছা৷ সরকার প্রয়োজন মনে করলে কারাবন্দি যে কাউকে যে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে পারে৷”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি  বলেন, ‘‘সরকার যদি নিজের ইচ্ছায় কোনো কারাবন্দিকে প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠায়, তাহলে তার খরচ সরকারই বহন করে৷ কিন্তু কেউ যদি সরকারি হাসপাতালে সুযোগ থাকার পরও কোনো প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেন, তাহলে তার খরচ তিনি নিজে বা তার পরিবার বহন করবেন৷ এটাই নিয়ম৷”

তিনি আরো জানান, ‘‘বাংলাদেশের কারা হাসপতালগুলোতে চিকিৎসার ব্যবস্থা ভালো না৷ পর্যাপ্ত জনবলও নেই৷ সাধারণভাবে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন পড়লে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-তে চিকিৎসা দেয়া হয়৷”

জানা গেছে, ওয়ান ইলেভেনের সময় খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা দেয়া হয়৷ পরে তারা চিকিৎসার জন্য জামি নিয়ে দেশের বাইরে চলে যান৷ আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল এবং মোহাম্মদ নাসিম প্রথমে বিএসএমএমইউ-তে এবং পরে ল্যাব এইডে ভর্তি ছিলেন৷

খালেদা জিয়ার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তাঁর ভাই শামীম ইস্কান্দার মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন করেন৷ এর আগে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার সুপারিশ করেছেন৷ কিন্তু সরকার খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ দেবে না৷ খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদন পাওয়ার পর ওইদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, খালেদা জিয়া চাইলে তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল(সিএমএইচ)-এ চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে৷

 বিএসএমএমইউ-তে খালেদার চিকিৎসার জন্য সব প্রস্তত আছে৷ এর আগে একবার খালেদা জিয়াকে ওই হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল৷  মঙ্গলবারও খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে আনার চেষ্টা করে কারা কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু খালেদা জিয়া রাজি হননি৷ বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ‘‘এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউ অথবা সিএমএইচ কোনো হাসপাতালেই চিকিৎসার জন্য সম্মত হননি৷”

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক নিউরো সার্জন অধ্যাপক সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা কারাগারে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার কথা বলেছি৷ আমরা লিখিত সাজেশন দিয়েছি৷ কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা হলো, একজন ব্যক্তি তাঁর পছন্দ অনুযায়ী চিকিৎসা সুবিধা নিতে পারবেন৷ চিকিৎসক পছন্দ করতে পারবেন৷ এটা তাঁর হিউম্যান রাইট৷ সুতরাং, খালেদা জিয়ার অধিকার আছে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার৷ তাঁকে এখন যে সিএমএইচ-এ চিকিৎসার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেখানে কী ধরনের চিকিৎসাসুবিধা আছে, তা আমরা জানি না৷ আর ওই হাসপতালে আমরা সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে অভ্যস্ত নই৷”
গত শনিবার খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা কারাগারে দেখা করেন৷ দেখা করার পর তাঁরা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘গত ৫ জুন খালেদা জিয়া কারাগারে মাইল্ড স্ট্রোক করেছিলেন৷” ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎক দলের সদস্য ডা. এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘গত ৫ জুন বেলা ১টার দিকে খালেদা জিয়া দাঁড়ানো অবস্থায় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান৷ ৫-৭ মিনিট পর তাঁর জ্ঞান ফিরলেও ওই সময়ের কথা কিছুই মনে করতে পারছেন না৷ তাঁর অ্যাটেনডেন্ট যে মেয়েটি ছিল, সে অনেক চেষ্টা করে তুলে বসিয়েছে৷ আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি, তাঁর টিআইএ (ট্রানজিয়েন্ট স্কিমিক অ্যাটাক) হয়েছে৷ এটা মাইল্ড স্ট্রোকের মতো৷”

বুধবার অধ্যাপক সৈয়দ ওয়াহিদুর রহমান জানান, ‘‘এছাড়া তাঁর কিছু ক্রনিক ডিজিজ আছে৷ তাঁর যা পরিস্থিতি, ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে আগামী তিন মানের মধ্যে তাঁর স্ট্রোকের আশঙ্কা আছে৷”

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার বিএনপিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ‘রাজনীতি’ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন৷ তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) হচ্ছে দেশের সবচেয়ে ভালো হাসপাতাল৷ এর চেয়ে ভালো চিকিৎসা আর কোথায় আছে? খালেদা জিয়া একটা বড় দলের চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী৷ যদি তিনি চিকিৎসা চান, তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়য়ের মতো সিএমএইচ-এর বিষয়টা প্রত্যাখ্যান করা উচিত হবে না৷ আর যদি রাজনীতি করেন, তাহলে ভিন্ন কথা৷”

আর বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশররফ হোসেন বলেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সরকার খালেদা জিয়াকে  ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না৷ খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সে কথা বাদই দিলাম, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তিনি যেখানে চিকৎসা করাতে চান, সেখানে চিকিৎসার সুযোগ পান৷ কিন্তু সরকার ইচ্ছা করেই তাঁর চিকিৎসা আটকে দিচ্ছে৷”

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)