গত ৫ মাসে ১৮৪ জন খুন, ধর্ষণের শিকার ২৮৬ জন

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের দিয়েছে অঢেল , আবার নিয়েছেও কম নয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে এখন দরকার সচেতনতা। কারণ প্রযুক্তির আকাশচুম্বী সাফল্য ইন্টারনেট এর যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের শিশু কিশোর সমাজকে ক্রমেই ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে বাদ পড়ছে না প্রৌঢ়রাও। নারী ও পুরুষ ভেদে ইন্টারনেটের খারাপ দিকের ব্যবহার সমাজকে এক সময় ক্ষয় করে ফেলতে পারে । এজন্য এখনই এর লাগাম টেনে ধরে প্রযুক্তির প্রকৃত ফসল ঘরে তুলতে সচেষ্ট হতে হবে।

‘ইন্টারনেটের অপব্যবহার ও ট্যুরিজমের মাধ্যমে শিশুদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ক সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মত বিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং টেরেডেস হোমস নেদারল্যান্ডস এর সহায়তায় অগ্রগতি সংস্থা এই প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে শহরের অদুরে ত্রিশ মাইল মোড়ে অগ্রগতি সংস্থা আয়োজিত মত বিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবদুস সবুর বিশ্বাস। এতে অতিথি সাংবাদিক হিসাবে আরও বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী , প্রেসক্লাব সহ সভাপতি আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাধারন সম্পাদক আবদুল বারী , সাবেক সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইয়ারব হোসেন প্রমূখ । এতে প্রোগ্রাম কো অর্ডিনেটর দেবব্রত অধিকারী ও প্রোগ্রাম অফিসার সফিউল হক উপস্থিত ছিলেন ।

মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয় ইন্টারনেটের অপব্যবহারের কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৮৪ জন শিশু খুন হয়েছে অথবা আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়েছে। এই সময়ের ব্যবধানে ২৮৬ টি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গণধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে ৪২ টি । প্রতিবন্ধী ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে ৮ টি। এ ছাড়া ধর্ষন চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ৩৫ টি, উত্ত্যক্তকরণের ঘটনা ঘটেছে ২০, যৌন হয়রানির ঘটনা ৫২ টি। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ৩৬ টি, ধর্ষনের পর আত্মহত্যা ৪ টি। অপরদিকে হত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ৪৩ টি এবং নিখোঁজ থাকার পর মৃত পাওয়া গেছে ৫৩ টি শিশুকে।

সমাজের জন্য এই চিত্র খুবই বিপজ্জনক মন্তব্য করে বক্তারা বলেন খুলনা বিভাগে ইনটারনেটে চাইল্ড সেক্স বিষয়ক সার্চিং সবচেয়ে বেশি।

মতবিনিময় সভায় তথ্য তুলে ধরে আরও বলা হয় দেশের ৬১.৩ % শিশু কিশোরের হাতে মোবাইল রয়েছে। রাজধানী ঢাকায় স্কুল পর্যায়ের ৭৭ % ছাত্রছাত্রী স্কুলেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে ওঠে। এ প্রসঙ্গে উঠে আসে চলন্ত ট্রেনের নিচে চাপা পড়ার মুহূর্তে যুবকের সেলফি তোলা , গণশৌচাগার ব্যবহারকালে নারীদের ছবি ধারন করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া এমনকি যৌন নিপীড়নের ছবি ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া , হুমকি দিয়ে নানা সুবিধা আদায় করার মতো অনেক ঘটনা। এসব ঘটনায় মামলার শিকার হচ্ছে বহু মানুষ। দেশে শিশু নির্যাতন আইন ২০১৩, পর্ণোগ্রাফি আইন ২০১২ এবং তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০০৬ ছাড়াও রয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এসব আইনের প্রয়োগ যথাযথভাবে হওয়া উচিত জানিয়ে আলোচকরা বলেন ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার আমাদের সমৃদ্ধ করতে পারে। এর অপব্যবহার সামাজিক বিশৃংখলার জন্ম দেয়, নানা ধরনের মানসিক বৈকল্য ও জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে। এমনকি অপরাধ প্রবণতার দিকেও টেলে দেয়।

যা কিছু ভালো তার কিছু না কিছু মন্দ দিক যেমন রয়েছে তেমনি যা কিছু মন্দ তার কিছু না কিছু ভাল দিকও রয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন ইন্টারনেটের ব্যবহার হতে হবে নিয়ন্ত্রিত। তা যেনো কারও ক্ষতির কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। শিশুদের স্কুল থেকে কলেজ জীবন পর্যন্ত ইন্টারনেটের ব্যবহার হতে হবে সীমিত, শিক্ষনীয় , নিয়ন্ত্রিত এবং কেবলমাত্র তথ্য আদান প্রদানের জন্য এমন মন্তব্য করে তারা আরও বলেন এ জন্য অভিভাবকদের ভূমিকা অগ্রগন্য। অভিভাবকরা সচেতন হলে তার সন্তান ইন্টারনেটের ক্ষতির শিকার থেকে রক্ষা পাবে বলে মন্তব্য করেন তারা।

বক্তারা আরও বলেন অভিভাবকের সাথে সাথে স্কুল কলেজের শিক্ষকরাও যদি ইন্টারনেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করেন তবে ইন্টারনেট আমাদের জন্য বয়ে আনতে পারে স্বর্ণ ফসল। হয়ে উঠতে পারে এক আশীর্বাদ।

মত বিনিময় সভা শেষে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন বন্ধে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাথে অগ্রগতি সংস্থার সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)