প্রশ্ন রেখে গেলাম, আমি কি বাঁচতে পারতাম না?

ডেস্ক রিপোর্ট:

জারিন তাসনিম রাফা। বয়স ২৩। বাবা মায়ের বড় সন্তান। তিনি আদ দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। বাবা মায়ের আশা ছিল মেয়ে অনেক বড় চিকিৎসক হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াবে। রোগীদের সেবা কররে, রোগীকে সুস্থ করে তুলবে। অনেক নাম ডাক হবে তার।

কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেলো! যেন একটি ভালো স্বপ্ন ভঙ্গের মতো! কে ভেবেছে ডাক্তার হতে যাওয়া সেই মেয়েটি রোগী হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাবে। তাও আবার ক্যান্সারের মত রোগে। যে রোগের চিকিৎসা এদেশে নেই।

গত আড়াই মাস আগে ক্যান্সারে (এমএএল) আক্রান্ত হন জারিন। কিছু দিন আগের সেই চঞ্চল মেয়েটি এখন ধীরে ধীরে নিশ্চুপ হয়ে যাচ্ছে। প্রাণ খোলা সতেজ হাসিও তার যেন দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে।

তবে এতো বড় রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বপ্ন ভাঙার উপক্রম হলেও জারিনের মনোবল ভাঙেনি। নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছেন। তিনি ভাবছেন দেশের ডাক্তার সমাজের পাশাপাশি সকল মানুষ তার পাশে দাঁড়াবে। তিনিও সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন সবার মাঝে। ফিরে আসবে তার সেই আগের মতো চঞ্চলতা। পূরণ হবে বাবা-মায়ের স্বপ্ন।

জারিন এখন অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে এদেশে তার চিকিৎসার সম্ভব না। তাকে দেশের বাইরে নেয়া প্রয়োজন। আর সে জন্য দরকার অনেক টাকার। এ পযর্ন্ত জারিনের চিকিৎসা করাতে তার বাবা প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যায় করেছেন। বোম্বের টাটা মেডিকেলের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জারিনের চিকিৎসায় অন্তত ৬০ থেকে ৭০ লাখ রুপির প্রয়োজন। আরো বেশিও লাগতে পারে।

সবার উদ্দেশে জারিন বলেন, আপনাদের কাছে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি, আমি সবার সেবা করতে চাই। এ দেশের আরো ১০ জন ডাক্তারের মতো একজন হতে চাই। আমি যেন ফিরে আসতে পারি। এভাবে অনেকেই ফিরে এসেছে। আপনারা যাদের পাশে ছিলেন, তারা ফিরে এসেছে। অসংখ্য সাফল্যের কাহিনী আছে- আমি যেন তাদেরই একজন হই, আপনাদের দোয়ায়, আপনাদের সহযোগিতায়।

শনিবার বিকেলে ফেসবুকে পোস্ট করা এক চিঠিতে জারিন লিখেছেন- আমার একটা প্রশ্ন পুরো ডাক্তার সমাজের কাছে। একজন ডাক্তার মারা যাচ্ছে টাকার অভাবে, আপনারা চেয়ে চেয়ে দেখবেন? দেশের লক্ষাধিক প্রফেসর ডাক্তাররা এগিয়ে এলে কি আমি বাঁচতে পারতাম না। মৃত্যুর আগে এ প্রশ্ন রেখে গেলাম।

জারিন পটুয়াখালির গলাচিপার বাশতলা গ্রামের এম এ বাশারের মেয়ে। তারা পরিবারসহ দীর্ঘদিন রাজধানী ঢাকায় থাকেন। ঢাকার বনশ্রীর ভাড়া বাসায় জারিন তার বাবা-মা আর ছোট ভাই থাকে। বাবা এম এ বাশারের নিউমার্কেটে কাপড়ের ব্যবসা থাকলেও এখন তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। গত বছরই তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। ছোট ভাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

জারিনের বাবা এম এ বাসার জানান, জারিন অসুস্থ হওয়ার পর আড়াই মাস আগে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানের এক চিকিৎসকের পরামর্শে পরে তাকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে একটা কেমো থেরাপি দেয়ার পর তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়।

ভারতের ডাক্তাররা জানান, প্রথম কেমোতে কোনো কাজ হয়নি। যিনি (চিকিৎসক) কেমো দিয়েছেন- তার কাছে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। আবার তাকে নিয়ে এসে অ্যাপোলো হাসপাতালের সেই চিকিৎসকে দেখানো হয়। তিনি দ্বিতীয় কেমো দেন। এরপর একটু ভালো হলেও দু’দিন আগে আবার তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। পরে আবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন সে কিছুটা ভালো আছে।

তবে চিকিৎসক জানিয়েছেন- এ দেশে আর তাকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। জারিনের একিউট মায়েলোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বা এক ধরনের ব্লাড ক্যান্সার যা মধ্যম পর্যায়ে ধরা পড়ে। এখন তা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। তাই দ্রুত তার চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। জারিনকে বোম্বের টাটা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন। সেখানকার চিকিৎকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছে- তার চিকিৎসায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ রুপি লাগতে পারে।

জরিনের বাবা আরো জানান, মেয়ের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়ে সরকারে কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। জারিনও আকুতি জানিয়ে সরকারকে খোলা চিঠি লিখেছেন।

খোলা চিঠিতে জারিন লিখেছেন- আমাদের দেশের বিভিন্ন অভিজ্ঞ ও স্বনামধন্য ডাক্তাররা আমাকে বলেছেন, হাতে বেশি সময় নেই। আমাকে দ্রুততম সময়ে অ্যালোজেনিক ট্রান্সপ্ল্যান্টে যেতে হবে যা বাংলাদেশে এখনো শুরু হয়নি এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে যার উন্নত চিকিৎসা রয়েছে কিন্তু অত্যন্ত ব্যয়বহুল (৮০ লাখ টাকা) যা আমার মধ্যবিত্ত বাবা মায়ের পক্ষে ব্যয় করা সম্ভব নয়।

কেমো নিয়ে নিয়ে আমরা সর্বশান্ত। আরো যত দেরি হবে ততই কেমো খরচ এবং আমার মৃত্যুঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। আমার জীবনের শুরুতেই আজ মেঘের অন্ধকার নেমে এসেছে। হায়াত আল্লাহর হাতে তবু চেষ্টা করে দেখতে যদি পারতাম! যদি আমার চিকিৎসাটা হত! যদি আপনাদের মাঝে ফিরে আসতে পারতাম! আপনি তো কত অসহায়ের পাশে ছিলেন, কত পিতামাতা হারা সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন, আমিও এই দেশের এবং আপনারই সন্তান তবে কেন আমাকে বুকে টেনে নেবেন না, এই দিনে?

আমি মানি, আমি বিখ্যাত সাবিনা ইয়াসমীন না, আমি ছোটখাটো একজন মেডিকেল ছাত্রী। তাই বলে কি আমার জীবনের কোন মূল্যই নেই? বেঁচে থাকলে দেশের জন্য আমি কি কিছুই করতে পারতাম না? আমিও তো মেডিকেল কমিউনিটিরই একজন। প্রতি মুহূর্তে আমি মৃত্যুর প্রহর গুনছি। এক একদিন সময় আমার জীবনের প্রদীপ নিভিয়ে দিচ্ছে ধীরে ধীরে।

দেশমাতা, আপনি কী এই অসহায় মেয়েটির বেঁচে থাকার এই যুদ্ধে শামিল হবেন?

তবে এরই মধ্যে কেউ কেউ জারিনের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সাহস দিচ্ছেন। শনিবার জারিন তার ফেসবুকে লিখেছেন, এতদিন আমি একাই ব্লাড ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলাম, এখন আমার হয়ে পুরো বাংলাদেশ লড়ছে! এভাবে মৃত্যুও অনেক শান্তির! যখন শরীরের কষ্ট অসহনীয় হয়ে ওঠে, চোখ ফেঁটে পানি গড়িয়ে পড়ে তখন আমার মনে পড়ে, আমার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ লড়ে প্রতিদিন, হাজারো আশীর্বাদের হাত আমার মাথায়। প্রতিদিন হাজারো ফোন কল আর ম্যাসেজ শ্রদ্ধেয় এবং স্বনামধন্য প্রফেসরদের, আরে! তোর কিচ্ছু হবে না! সিনিয়র, জুনিয়ররা সবাই আমার জন্য এখানে ওখানে কোথায় না দৌড়ায়। যদি নাও হয় পুরো টাকার জোগান, যদি বেঁচে নাও থাকি সব মনে থাকবে… আর যতদিন বেঁচে থাকব! মনে থাকবে…

যদি কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি জারিনের এই বিপদে তার পাশে দাঁড়াতে চান, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চান, তাহলে নিচের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারেন।

Bank account: M.A.BASHAR
Account no: 1781510147962
Dutch Bangla Bank, Rampura Branch

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)