প্রবাসীর যাপিত জীবনে রমজানের প্রভাব

অনলাইন ডেস্ক :

প্রবাসীদের জীবন কেমন কাটে? এ প্রশ্নটা অনেকেরই? কারো কারো রয়েছে বিশেষ আগ্রহ! অন্তত যারা প্রবাসী নন। আগ্রহটা তাদেরই বেশি যাঁদের স্বজনরা প্রবাসী। আম জনতার আগ্রহ যে নেই, তা ঠিক নয়। তা আবার ক্ষেত্র বিশেষ। তাদেরও আগ্রহ হয়, যখন কোন প্রবাসী হয়ে উঠে সেলিব্রেটি।

‘ছুটি চাইলেও পড়তে হয় নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখে! কেন ছুটি দরকার? রোজা কি? রোজার অর্থ কি? কি করে মানুষ এতো সময় না খেয়ে থাকে ইত্যাদি। কেউ কেউ হয়তো বুঝিয়ে বলতে পারেনা ভাষা না জানার কারণে। কেউ আবার ঝামেলার সম্মুখীন হতে চান না তাই হয়তো তার প্রাপ্য ছুটিটুকুও ভোগ করতে পারেন না।’

আমরা বাঙালি প্রবাসীরা কেমন আছি? ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বললে কীভাবে কাটছে আমাদের জীবন? দেশের স্বজনদের দূরে রেখে আমাদের প্রবাস জীবন কি খুব বেশি স্বস্তিতে কাটছে? নাকি সোনার হরিণের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরাও খুব বেশি ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত।

এই প্রশ্ন গুলো করার পেছনে কোন অযাচিত উদ্দেশ্য নেই আমার। সুখ-দুঃখ আর কষ্টের অনুভূতি বলার প্রয়াস মাত্র। কারণ কারো কাছে যাপিত জীবন বড্ড বেশি অহমিকাময়। কারো কাছে বেঁচে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। হোক না সে প্রবাসী কিংবা নিজ দেশে বসবাসরত।

ইতালী প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি থেকেই আজকের এ লেখা। প্রবাস মানেই কি নিঃসঙ্গতা? একাকীত্ব? নাকি প্রবাস মানেই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম? কেউ বলে মলিন নয়তো ফ্যাকাশে, কেউ বলে পানসে। কারও কারও কাছে রোমাঞ্চকর, অতিমাত্রায় স্বাধীনতা। কারও কাছে জীবনের সোনালী অধ্যায়ের শুরু। কেউ ভাবছে, এই তো চলছি সোনার হরিণের পেছনে। এই আবার কেউ ফেলছে দীর্ঘ-নিঃশ্বাস। যেনো কোনো এক নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত।

আর যারা প্রবাসী নন, তাদের কেমন ধারণা প্রবাসীদের সম্পর্কে? এটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল হলেও কিছুটা তো উপলব্ধি করেছি, প্রবাসী সম্পর্কে স্বদেশীদের ধারণা পুরোটাই অর্থ-কেন্দ্রিক। তার মানে হলো প্রবাসী মানে অঢেল অর্থ উপার্জনের কারিগর। স্বজনেরা অন্তত একটি বিষয়ে সজাগ। প্রবাসী মানে থাকবে আর্থিক সচ্ছলতা। এ ধারণাটা মোটেও ভুল নয়। কিংবা নতুন কিছু নয়।

এটাতো ঠিক বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর চাবিকাঠি তো দীর্ঘকাল ধরেই প্রবাসীদের নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশ ব্যাংক বছর ঘুরে গুণছে হাজার কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রার রেমিটেন্স! তাই আর বুঝতে কারো কষ্ট হয় না, প্রবাসী মানে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমী একদল খেটে খাওয়া মানুষ!

যাইহোক এতোগুলো কথা লিখার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আবারও একটি বছর ঘুরে উপস্থিতি ঘটলো পবিত্র মাহে রমজান মাসের। প্রবাসীদের রোজা পালন আর দেশে যারা আছেন তাদের রোজা পালন এক রকম নয়। একেবারেই আলাদা! অনেকে হয়তো ভাবছেন কিভাবে আলাদা হয়?

নিজের দেশের মাটিতে যত সহজে নিজেদের সব রীতিনীতি পালন করা যায়, পরের দেশে তা করাটা ততো সহজ নয়। আর তা যদি হয় ইউরোপীয় কোন দেশ তাহলে তো আর কথাই নেই। আর সে প্রবাসী যদি হয় মুসলিম তাহলে তো হলোই!

আমাদের দেশে কত ঘটা করে পালন করা হয় খ্রিস্টানদের জন্য মেরি ক্রিসমাস ডে, বৌদ্ধদের জন্য তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন, হিন্দুদের জন্য তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করা হয়। এবং তাদের সে বিশেষ দিন গুলোর জন্য ছুটির দিনেরও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, ইউরোপীয় দেশে মুসলিমদের জন্য কোন ছুটির ব্যবস্থা নেই। না রমজান মাসে, না কোনো ঈদ উৎসবে।

ছুটি চাইলেও পড়তে হয় নানাবিধ প্রশ্নের সম্মুখে! কেন ছুটি দরকার? রোজা কি? রোজার অর্থ কি? কি করে মানুষ এতো সময় না খেয়ে থাকে ইত্যাদি। কেউ কেউ হয়তো বুঝিয়ে বলতে পারেনা ভাষা না জানার কারণে। কেউ আবার ঝামেলার সম্মুখীন হতে চান না তাই হয়তো তার প্রাপ্য ছুটিটুকুও ভোগ করতে পারেন না। মনের ভেতর চাপা কষ্ট আর ক্ষোভ নিয়ে সে করে তার রোজা পালন।

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায় নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে নিজের পাপ মোচন করার। রমজান মাসে নাকি আল্লাহ তাদের বান্দাদের সকল অপরাধ ক্ষমা করে দেন। সেই প্রত্যাশায় শত কষ্ট হলেও নিজেকে পঙ্কিলতা মুক্ত করতে চায়।
যাই হোক রোজা রাখার ফজিলত লিখা আমার উদ্দেশ্য নয়। তা লিখার জন্য বহু গুণী মাওলানারা রয়েছেন।

প্রবাসে ১২ঘন্টা না খেয়ে থাকাটা আসলেই কষ্টকর। আর বিশেষ করে যারা ১২ ঘন্টা ডিউটি করেন। আর যারা পাবলিক রিলেশন মেইনটেন করেন তাদের বসরাও চান না কর্মচারী রোজা রাখুক। তার কারণ হলো বেশিক্ষণ কোনও মানুষ পানি পান করে অথবা খাবার না খেয়ে থাকলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে পারে। তাই বসরা বলে থাকেন রোজা না রাখার জন্য তাতে করে কাস্টমারদের সমস্যা হতে পারে। এমন আরো হাজার হাজার কারণ আছে যা বলে শেষ করা যাবে না।

প্রবাসে থেকেও তাদের ধর্মের প্রতি রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধাবোধ। এইতো কিছুদিন আগে জলকন্যা ভেনিসের বুকে নির্মিত হয়েছিল এক মসজিদ। কিন্তু বেশিদিন টিকে থাকতে দেননি খ্রিস্টান ইতালীয়রা। তবুও কি থেমে আছে মুসলিমদের প্রার্থনা? না থেমে নেই! থামিয়ে রাখার সামর্থ যে নেই এই ইতালীয় খ্রিস্টানদের।

এখানে সব দেশের মুসলিমরা সম্মিলিত ভাবে তৈরি করেছেন ইসলামী কালচারাল সেন্টার ছদ্মনামে এক মসজিদ। যদিও ইতালীয়রা জানেনা কালচারাল সেন্টারে লোকজন কি করে? হয়তো জানে! তারপরেও কিছু বলে না চুপ থাকেন। মুসলিমদের হয়তো বিদ্রোহী করে না তোলার জন্য। তারা জানে বিক্ষোভের পরিণাম হবে ভয়াবহ!

সে যাই হোক, খোদা প্রীতির কারণেই প্রবাসীরা অনেক কষ্ট হলেও রোজা করেন। এখানে প্রবাসী পুরুষ মহিলারা উভয়ই রোজা পালন করে থাকেন। প্রবাসে কেউ কাউকে রোজা রাখতে বাধ্য করেনা। সবাই রোজা পালন করেন নিজের মনের তাগিদে।

প্রবাসে আমি প্রায় সব মহিলাদের দেখছি হিজাবধারী। আমি অনেকের কাছে জানতে চেয়েছি এর কারণ কি? তাদের স্বামীরা কি বাধ্য করে কি না? কিংবা তারা বাংলাদেশ থেকেই অভ্যস্থ কি না ? অনেকেই আমাকে উত্তর করেছেন না কেউ তাদের বাধ্য করেননি। তারা স্বেচ্ছায় হিজাব ধারণ করেছেন। ইউরোপীয় নগ্নতা তাদেরকে দেখিয়েছে সঠিক রাস্তা! তারা খুঁজে পেয়েছেন তাদের অস্তিত্বকে।

আমি দিব্যি দিয়ে বলতে পারি প্রবাসী যেসব মেয়েরা থাকেন তারা বাংলাদেশ থাকা মেয়েদের চেয়েও অনেক বেশি সংযত। আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে স্বদেশী মেয়েদের ওড়না হয়ে গেছে মাফলার শরীর স্বর্বস্ব পোশাক পরা আমাদের দেশে এখন ফ্যাশন বলে বিবেচিত হয়। আমার দেশের এমন বেহাল অবস্থা দেখে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কি কিছুই করার নেই আমাদের। নিজের সংস্কৃতি ছেড়ে ইউরোপীয় ভারতীয় রঙে সঙ সাজতে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে দিকবিদিক। কাকের পাখায় ময়ূরের পাখা লাগালে কাক কখনো ময়ূর হয় কি!

নিজের ধর্মকে ভালোবেসে নিজের সংস্কৃতিকে ভালোবেসেও ময়ূর হওয়া যায়। সকল মুসলমান পাপের পথ পরিহার করে সত্য ও ন্যায়ের পথে সত্য জীবন পরিচালিত করুক, ইসলামের আলোয় আলোকিত হোক সকলের জীবন পবিত্র রমজানে এ প্রার্থনা করুণানীধির দরবারে ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)