ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের আলোচনায় যারা
ডেস্ক রেপোর্ট:
প্রথম ঘোষিত তারিখ স্থগিত করা হলেও, শুক্রবার (১১-১২ মে) শুরু হওয়া ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শেষ হচ্ছে রোববার। নির্ধারিত ২ বছরের মেয়াদ থাকলেও নানা কারণে ২ বছর ৯ মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত হলো এবারের সম্মেলন।
সম্মেলন সফল করতে শনিবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সোহরাওয়ার্দীতে আসে নেতাকর্মীরা। ব্যানার-ফেষ্টুন আর স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সম্মেলনস্থল ও আশপাশের এলাকা। খইয়ের মত মিষ্টি মুখে ফুটতে থাকে নানা স্লোগান। ‘শেখ হাসিনার জন্য, বাংলাদেশ ধন্য’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘কে বলেরে মুজিব নেই, মুজিব আছে বাংলায়’-এমন সব স্লোগানে কানায় কানায় ভরে যায় সভাস্থল।
এদিকে, সম্মেলনের তারিখ প্রথমবার ৩১ মার্চ ঘোষণার পর থেকেই নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দেয়। একই সঙ্গে দেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটির নেতৃত্বে কারা আসছেন, তা নিয়ে এখনও চলছে নানা হিসেব-নিকেষ ও জল্পনা-কল্পনা ।
আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, দীর্ঘদিনের রেওয়াজ ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন থেকে সরে এসে এবার প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে কমিটি হতে পারে। তবে ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পরামর্শে সমঝোতার ভিত্তিতেই নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। দু’দিনের সম্মেলন শনিবার শেষ হওয়ার থাকলেও রোববার নতুন কমিটি ঘোষণার জন্য বর্ধিত অধিবেশন ডাকা হয়েছে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমেই নতুন নেতৃত্বের হাতে যাবে গৌরব ও ঐতিহ্যের ধারক এ ছাত্র সংগঠনটি।
তবে সূত্র জানায়, এবার সম্মেলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে সাবেক ছয় নেতাকে নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম দু’জন হলেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এবং ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মারুফা আক্তার পপি। তারা পরবর্তী নেতৃত্ব যাচাই-বাছাই করছেন। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ‘মুকুট’ কার মাথায় উঠবে সেটি নির্ধারণ করবেন দলীয় সভাপতি ও ছাত্রলীগের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারই প্রথম ভোটাভুটির বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির সরাসরি হস্তপেক্ষে সমঝোতা কমিটি হতে যাচ্ছে, তবে তা অবশ্যই সব যোগ্যতা যাচাই-বাছাইয়ের পর।
এদিকে, সম্মেলনে অনেকের মুখে মুখে চাউড় হচ্ছে নারী নেতৃত্বের কথা। সরকার প্রধান নারী, সংসদ পরিচালনায় নারী, বিরোধী দলে নারী- সে ধারায় এবার ছাত্রলীগের নেতৃত্বেও হয়তো আসতে পারে নারী। এমন অভাস পাওয়া গেছে দলীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে।
সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা থেকে আশা নেতাকর্মীদের কথায়ও শীর্ষ নেতৃত্বে নারীদের এগিয়ে থাকার বিষয়টি আলোচনায় ওঠে এসেছে জোরালভাবে। ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ ৫ নেতৃত্বের মধ্যে ২ পদে আসছেন নারী। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতেও রয়েছে নারীর চমক।
আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন যেসব নারী নেত্রী তারা হলেন- বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের মেয়ে অর্না জামান, খুলনার মেয়ে সহ-সভাপতি চৈতালী হালদার চৈতী। ঢাবি রোকেয়া হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির উপ আন্তর্জাতিক সম্পাদক কিশোরগঞ্জের মেয়ে ইশাত কাসফিয়া ইরা। আলোচনায় আছেন উপ অর্থ সম্পাদক তিলোত্তমা শিকদারও। এছাড়া আরো যাদের নাম চাউড় হচ্ছে, তারা হলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির উপ পরিবেশ সম্পাদক শেখ মারুফা নাবিলা, সহ-সম্পাদক ও রোকেয়া হলের সাবেক সভাপতি সাবরিনা আক্তার, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা হলের সভাপতি বেনজীর হোসাইন নিশি, রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি বিএম লিপি আক্তার।
এদিকে, ছেলেদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছেন সেরা ৫ তালিকায় থাকা ছাত্রনেতা। দলের শীর্ষ নেতারাও ভাবছেন তাদের নিয়ে। ২৯তম জাতীয় সম্মেলনে সংগঠনের শীর্ষ দুই পদের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল পাঠান সেতু, ত্রাণ সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াদ, আইন সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, কৃষি সম্পাদক বরকত হাওলাদার, কর্মসূচি সম্পাদক রাকিব হোসেন, পরিবেশ সম্পাদক হাবিবুল্লাহ বিপ্লব, বিজ্ঞান সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ আরেফিন ও অমর একুশে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এহসান পিয়াল। এছাড়া বয়স থাকায় ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সও কেন্দ্রীয় পদ প্রত্যাশী।
এবার দেখা যাক কত জন প্রার্থী ছিলেন:
ছাত্রলীগের বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য ৩২১ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর আগে গত মাসের শেষের দিকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন হয়। তবে এসব ইউনিটের এখন পর্যন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। জাতীয় সম্মেলনের পর একসঙ্গে কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরের কমিটিগুলো ঘোষণা করা হবে।
আলোচনার শীর্ষে থাকা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি চৈতালী হালদার চৈতী বলেন, জননী মমতাময়ী মা দেশকে যখন উল্টো পথে চলা থেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে বিশ্বের দরবারে রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি করতে পেরেছেন। সেই দিক থেকে সব দোয়াই মায়ের কাছে চাইতে পারি। আর যদি আমি শীর্ষ দায়িত্বে আসতে পারি ইনশাল্লাহ মানস কন্যার আদর্শ নিয়ে দায়িত্ব পালন করব।