সাতক্ষীরা-০৩ আসন: আওয়ামীলীগ ও বিএনপির লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

বিশেষ প্রতিনিধি:

বর্তমান সরকারের পূর্ণ মেয়াদ শেষে নির্বাচন হলে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির আগে তিন মাসের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো ঢের সময় বাকি। তবে এত দূরের ভোটকে সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠছে দেশ। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নেমে পড়েছেন গণসংযোগে। বিভিন্ন আসনের বর্তমান ও সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের পাশাপাশি দুই দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মাঠে সরব হয়ে উঠছেন।

দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন তাঁরা। কিছু এলাকায় জাতীয় পার্টি ও বর্তমান সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি দলের অন্য নেতারাও মাঠে নেমে পড়েছেন। সে সুবাদে তৃণমূলে দলগুলোর রাজনীতিতে বইতে শুরু করেছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যেও আগামী নির্বাচন নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। তবে কিছু জেলায় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা থাকলেও প্রচার বা জনসংযোগের চিত্র সাতক্ষীরা-০৩ আসনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লক্ষ্য যে কোনো মূল্যে আসনটিকে ধরে রাখতে হবে।

আশাশুনি, দেবহাটা ও কালিগঞ্জ উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৩ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৯০ হাজার ৭৯৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৯৭ হাজার ৪৭২জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৯৩ হাজার ৩২৬ জন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে জয় পায় জামায়াত। ১৯৯৬ সালের বিএনপির বিতর্কিত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়ী হয় বিএনপি। তবে পরের নির্বাচনে জয় পায় আওয়ামী লীগ। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধার করে জামায়াত। তবে পরের দুই নির্বাচনে আসনটি দখলে নেয় আওয়ামী লীগ।

তাই এ আসনে আওয়ামী লীগের আধিপত্য থাকলেও সাংগঠনিক দৃঢ়তার ওপর ভিত্তি করে এবারও আসনটি জয় পেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর প্রফেসর ও নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি খুলনা’র উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ কাজ করছেন বলে দলীয় নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে। তাছাড়া নির্বাচনী এলাকায় ভোটার ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝেও এ বিষয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সুঁতিকাগার এ আসনটি তার জন্য অস্তিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এ নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন এ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও। ড. আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ’র কারণেই এ আসনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে ভোটার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে ড. আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ নির্বাচনে অংশ নিলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে ব্যাপক ভোটের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।

আসনটিতে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের মনোনীত ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক। তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় বিজয়ী হন। এবারো তিনি জননেত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ পাবেন বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এবারো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভোটের মাঠে নামলে জয় নিশ্চিত। তবে  স্থানীয়ভাবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল না থাকলেও রয়েছে অন্তর্দ্বন্দ্ব ও মনস্তাত্ত্বিক বিরোধ। সে কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সাংগঠনিক কার্যক্রম দুর্বল হওয়ায় দলের নেতাকর্মীরাও অবহেলিত। দলে তাদের কোনো মূল্যায়ন হচ্ছে না। ফলে প্রকাশ্যে না বললেও ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এদিকে এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যেই নিয়ে আসুক না কেন, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে জয় লাভ করতে হলে ইউসুফ আব্দুল্লাহ’র বিকল্প নেই বলে অনেক নেতাকর্মীই মন্তব্য করেছেন। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত উচ্চশিক্ষিত, সৎ ও সর্বজনের আস্থাভাজন ইউসুফ আব্দুল্লাহকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নের জন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করেন তারা।

ড. ইউসুফ আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগের কোন দায়িত্বশীল পদে না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থেকে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি সংগ্রামে থেকেছেন সামনের সারিতে দিয়েছেন সফল নেতৃত্ব। দল ও জনগণের অধিকার রক্ষার তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ, জনবান্ধব এবং পরীক্ষিত লড়াকু সৈনিক। তিনি সরকারের চলমান উন্নয়ন ধারাকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিরলস ভাবে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরার মাটিতেই আমার জম্ম। লেখাপড়া ও উচ্চশিক্ষার কারণে সাতক্ষীরার বাইরেও থাকতে হয়েছে। এখন সময় হয়েছে এলাকায় ফিরে মানুষের জন্য কিছু করার। তাই তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনে অবহেলিত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে থেকে তাদের যথার্থ মূল্যায়ন করতে চাই।

ইউসুফ আব্দুল্লাহ বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। নেত্রী সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমাকে মনোনয়ন দিলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে সাধারণ একজন কর্মী হিসেবে জনগণের সেবা করে যাব।

ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি’র সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায় নি। তাঁর অনুসারী কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, তিনি সবসময় জনমানুষের সেবা দেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাই তাঁর ব্যবহৃত ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি এমন একজন ব্যক্তি  যিনি রাত-দিন সকল সময় স্বপ্নে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা জন্য নতুন নতুন আইন তৈরির কথা ভাবেন এবং জনমানুষের পাশে থেকে তাদের কাঙ্খিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন।

অন্যদিকে বিএনপির গৃহদাহে জ্বলছে দলীয় কোন্দল। সাংগঠনিকভাবেও তারা দুর্বল। নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া তিন উপজেলার জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এ্যাড. স.ম সালাউদ্দিন নির্বাচনী হাওয়ায় মাঠে ফিরেছেন। দলের অবস্থা যাই হোক- অস্তিত্বের লড়াইয়ে মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনী মাঠে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থীর সাথে লড়তেও প্রস্তুত তারা।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মুনসুর আহমেদ, সাবেক এমপি ডা. মোখলেছুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম মোস্তাকিম, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পূর্ণবাসন সম্পাদক এ্যাড. আজহার হোসেন।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাড. বরুণ বিশ্বাস, জেলা বিএনপির সভাপতি ও কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম রফিকুল ইসলাম।

আসনটিতে আওয়ামী লীগের দুর্গ ভেঙে বিজয় পেতে মরিয়া হয়ে ওঠা বিএনপির মনোনয়নপ্রার্থী ও বিএনপির নির্বাহী কমিটি সদস্য ও এনাম মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (কার্ডিওলোজি) ডা. শহিদুল আলম ইতোমধ্যে নিজ দলের কোন্দলের আগুনে পুড়া ছাই গুঁড়িয়ে দিয়ে দলীয় মনোনয়নের সংকেত নিয়ে ভোটের মাঠে গণসংযোগে নেমেছেন। আশাশুনি, দেবহাটা ও কালিগঞ্জ উপজেলার মানুষের সহযোগিতা ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার ও শুভাকাক্সক্ষীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎসহ বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করছেন। যা অন্য নির্বাচনগুলোতে তার এমন উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ দেখা যায়নি। তিনি বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশ ও দেশের বাইরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এ জন্য সরকারকে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়েই তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

এ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মুনসুর আহমেদও। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে নিয়মিত গণসংযোগ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলেছেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করার কারণে পূর্বে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল। কিন্তু বয়স বেশি হওয়ায় বর্তমানে তিনি গ্রহণযোগ্য ধরে রাখতে পারেননি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)