মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ গেলে পরিবার পাবে এক লাখ

ডেস্ক রিপোর্ট :
সরকারি অনুদান পাবেন মাছ ধরতে গিয়ে নিহত বা স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেরা। এ জন্য ‘নিহত জেলে পরিবার বা স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেদের প্রণোদনা সহায়তা প্রদান নীতিমালা’ করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, মৎস্য অধিদফতরের নিবন্ধিত ও পরিচয়পত্রধারী জেলে মাছ ধরার সময় ঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, জলদস্যুদের হামলা বা বাঘ, কুমির, সাপ ইত্যাদির কামড়ে বা মাছ ধরা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে নিহত হলে তার পরিবারের জন্য আর্থিক অনুদান বা অন্যান্য সহায়তার পরিমাণ হবে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা। এছাড়া স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেদের আর্থিক অনুদান বা অন্যান্য সহায়তার পরিমাণ হবে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
আগামী ১৫ এপ্রিল আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় নীতিমালাটি চূড়ান্ত হতে পারে বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রায় ১ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্য উপ-খাতের উপর নির্ভর।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ  বলেন, জেলেরা অত্যন্ত দরিদ্র। কিন্তু অনেক সময়ই তারা ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে পড়ে জীবন হারায়, স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যায়। তাই জেলেরা নিহত কিংবা কাজ করার ক্ষমতা হারালে তাদের পরিবারকে অনুদান দেবে সরকার। এটা কিছুটা হলেও তার পরিবারের জন্য সহায়ক হবে। যদিও এর আগেও আমরা কিছু কিছু সহায়তা দিতাম। এখন সেটা একটা নিয়মের মধ্যে আসছে।
আগামী ১৫ এপ্রিল আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় নীতিমালাটি চূড়ান্ত হবে বলেও আশা করেন তিনি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আমিষের উৎস, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা তথ্য সার্বিক গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মৎস্য খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। দেশের মোট জিডিপির শতকরা ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং মোট কৃষিজ জিডিপির শতকরা ২৪ দশমিক ৪১ ভাগ মৎস্য ভাত থেকে আসে। দেশের প্রায় এক কোটি ৮৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের উপর নির্ভরশীল। দেশের জেলে সম্প্রদায় সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র শ্রেণির সদস্য। মাছ ধরা ছাড়া তাদের জীবিকার বিকল্প কোন উৎস নেই। এমনকি মাছ ধরার জাল ও নৌকা কেনার সামর্থ্যও অনেকের নেই।
তিনি আরও জানান, তারা অনেকটা দিনমজুর হিসেবে মহাজনের নৌকা ও জাল দিয়ে মাছ ধরে। যখন মাছ আহরণ বন্ধ থাকে তখন অর্ধাহারে অনাহারে তাদের জীবন চলে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে তাদের মাছ ধরতে যেতে হয়। এতে কখনও কখনও ঝড় বা দুর্ঘটনায় পড়ে তারা প্রাণও হারান।
নীতিমালার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, মাছ ধরার জন্য তারা যে নৌযান ব্যবহার করেন, তাতে কোন আধুনিক জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম থাকে না। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাসও তারা ঠিক মতো পান না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কখনও ৭ দিন বা কখনও ১৫ দিনের জন্য পরিবার ছেড়ে মাছ ধরতে যান।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও উপকূলীয় এলাকায় মাছ ধরার নৌকায় কখনও কখনও জলসদ্যুরা আক্রমণ করে মাছ নিয়ে যায়। এছাড়া অনেক জেলে মাছ ধরার সময় সাপ, কুমির বা বাঘের হামলায় মারা যান।
প্রকৃতপক্ষে জেলে পরিবারগুলো আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয়। জেলেরা যখন নদী মাছ ধরতে যায় তখন পরিবারের সদস্যরা কোন রকমে এক বেলা খেয়ে, না খেয়ে দিন কাটায়। তাদর সঞ্চয় বলে কিছু থাকে না। পরিবারের একমাত্র রোজগারকারী সদস্যের মৃত্যু হলে পরিবারগুলো একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়। এ জন্যই জেলে পরিবারকে অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
‘জেলেদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র প্রদান’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রায় ১৬ লাখ ২০ হাজার জেলে নিবন্ধিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৪ লাখ ২০ হাজার জেলেকে পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলে নিবন্ধন একটি চলমান প্রক্রিয়া।
যেভাবে পাওয়া যাবে অনুদান
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, জেলের মৃত্যুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা পৌরসভার কাউন্সিলরের দেয়া মৃত্যু সনদ থাকতে হবে। স্থায়ীভাবে অক্ষমতার স্বপক্ষে ছক অনুযায়ী মেডিকেল বোর্ডের সনদপত্র এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা পৌরসভার কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র থাকতে হবে।
পরিবারকে নিহত জেলের মৃত্যুর বা স্থায়ীভাবে অক্ষম হওয়া জেলেকে ২ মাসের মধ্যে স্থানীয় উপজেলা মৎস্য অফিসে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা পৌরসভার কাউন্সিলরের মৃত্যু সনদ এবং অস্থায়ীভাবে অক্ষমের ক্ষেত্রে মেডিকেল বোর্ডের সনদ আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
জলদস্যুদের মাধ্যমে নিহত হলে পরিবারকে স্থানীয় থানায় জিডি করে তার কপি আবেদনের সঙ্গে দিতে হবে। জেলেদের পরিপত্রের ফটোকপি সংযুক্ত ও আবেদনে পরিচয়পত্রের নম্বর উল্লেখ করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে উপজেলা প্রণোদনা প্রদান সংক্রান্ত কমিটির সভায় উপস্থাপন ও সুপারিশ সহকারে আবেদন প্রাপ্তির সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রণোদনা প্রদান সংক্রান্ত কমিটির কাছে পাঠাবে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা কমিটি যাচাই-বাছাই করে ৩০ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠাবে। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে আছেন মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।
কেন্দ্রীয় কমিটি বছরে কমপক্ষে দুইবার সভা করবে এবং আবেদন পর্যালোচনা করে অনুমোদন সভার ৩০ দিনের মধ্যে অনুদানের অর্থ ও অন্যান্য সহায়তা সরাসরি পরিবারের কাছে পৌঁছে দেবে।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)