সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমছে না

ডেস্ক রিপোর্ট :
সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমাতে নানামূখী দাবি থাকলেও উপকারভোগীদের কথা চিন্তা করে এ খাতের চারটি স্কিমের সুদের হার কমানো হবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া। গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ভবনে সঞ্চয় সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চারটি স্কিমের সুদের হার কমাবে না সরকার। কমানোর জন্য দাবি আছে, কিন্তু এ খাতের সুবিধাভোগীদের কথা চিন্তা করে আমরা কমানোর সিদ্ধান্ত নেব না। এ খাত থেকে সরকারও কর পায়। চলতি অর্থবছরের গত ছয় মাসে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা কর পেয়েছে।
সঞ্চয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে ৭ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত অতীতের ন্যায় এবারো পালন হচ্ছে সঞ্চয় সপ্তাহ। এ উপলক্ষ্যে গতকাল রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ে অবস্থিত এনএসসি ভবনে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শামসুন্নাহার বেগম। এর আগে এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর জন্য ব্যাংকাররা দীর্ঘদিন থেকেই দাবি জানিয়ে আসছেন। তারা মনে করেন, ব্যাংকগুলোর চাইতে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ক্ষেত্রবিশেষে বেশি হওয়ায় ব্যাংকে টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ। অর্থনীতিবিদদের একটি  অংশও এ খাতের সুদের হার কমানোর পক্ষে। তাদের যুক্তি, এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্থ আহরণ হওয়ায় এজন্য বাড়তি সুদ গুণতে হচ্ছে সরকারকে। কেননা সঞ্চয়পত্র বিক্রি করার মাধ্যমে সরকার জনসাধারণের কাছ থেকে ঋণ নেয়। ফলে প্রয়োজনের চাইতে বেশি ঋণের বিপরীতে সরকারকে সুদসহ বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে  ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসেই এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আলোচ্য সময়ে নীট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩৩ হাজার ১২০ কোটি টাকার। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্যাংকিং খাত নিয়ে নানামূখী আলোচনার কারনেও অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন বলেও জানা গেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৫৩ হাজার ৮৩১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার। এই অর্থের মধ্য থেকে অতীতে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। শুধু মুনাফা পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। মূল ও সুদের অর্থ বাদ  দেওয়ার পর অবশিষ্ট অর্থকে নীট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এই খাত থেকে সরকারের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ১২০ কোটি টাকা।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে নীট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। এর আগের মাস জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্র থেকে তা ছিল পাঁচ হাজার ১৪০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, অর্থবছরের আট মাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। এ খাতে গত আট মাসে নিট ঋণ এসেছে ১১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, নিট ঋণ আট হাজার ৯০২ কোটি টাকা। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে নিট ঋণ এসেছে দুই হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে নিট ঋণ এসেছে দুই হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। তাছাড়া মেয়াদি হিসাবে জমাকৃত অর্থ রয়েছে পাঁচ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে নিট ঋণ আছে এক হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্রের দিকে মানুষের আগ্রহের বড় কারণ এ খাতে বিনিয়োগ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। ফলে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার ব্যাংকের কাছাকাছি হলেও এ খাতে সাধারন মানুষ বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এখন ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সঞ্চয় সপ্তাহ ঘিরে বেশকিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সঞ্চয় অধিদপ্তর। এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে ধারণা প্রদান, সঞ্চয়পত্র ক্রয়-বিক্রয় ও নগদায়ন নীতিমালা সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের অবহিত করা, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করা হবে।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)