অপরিকল্পিত চিংড়িচাষে আশাশুনিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক ও বেড়িবাঁধ

আশাশুনি প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার আশাশুনিতে অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক ব্যবস্থা ও পাউবোর ভেড়িবাঁধ । ফলে সড়ক ও ভেড়িবাঁধ মেরামতে প্রতিবছর কোটি কোটি খরচ হচ্ছে। এদিকে বিধ্বস্ত ভেড়িবাঁধ ও সড়কের কারণে এলাকায় মানুষের বসবাসের ক্ষেত্রে বাড়ছে ঝুঁকি।
সাদা সোনা হিসেবে খ্যাত চিংড়ি চাষই আশাশুনি উপজেলাবাসীর আয়ের অন্যতম উৎস। এর মাধ্যমে উপজেলার চিংড়ি চাষি, ৪১ টি ডিপো, ৬ টি বরফকল, ১ টি হ্যাচারি, ২০ টি নৌযান ও ১ টি অভয়াশ্রমের হাজার হাজার মালিক শ্রমিকরা ব্যবসায়ীরা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
আশাশুনি উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, ১৭,৪০৩ হেক্টর জমিতে চিংড়িচাষ করা হয়। ১৩,২৩৬ টি ঘেরে চাষ করেন প্রায় ২৩ হাজার জন চাষি, ৫৫ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ করেন ৮১০ জন চাষি, ৮২২ হেক্টর জমিতে ৮১০ জন ও ৭৪৮ হেক্টর জমিতে ১০,১৪৮ টি পুকুরে সাদামাছ ও মিশ্রচাষ করে থাকেন। মৎস্যজীবীর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার সরকারিভাবে চিংড়ি চাষে ঋণ সুবিধা, খামার প্রস্তুত করতে চুন, সার কীটনাশক, ভাইরাস মুক্ত পোনা সরবরাহ বা ব্যাপক কোন প্রশিক্ষণ না দিলেও চিংড়ি চাষিরা চাষ করে থাকেন প্রচলিত নিয়মে। তবে মৎস্য অফিসে পরামর্শ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেখানে মাসের প্রথম রবিবারে অফিস টাইমে পরামর্শ দেয়া হয়। বৈজ্ঞানিক ভাবে (আধানিবিড় প্রকল্প) চিংড়িচাষ হয়ে থাকে মাত্র দুটি জায়গায়। এ পদ্ধতিতেও চাষ করে প্রতিবছর উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে ৭ হাজার ৮৯৩ মেট্রিক টন চিংড়ি ও মাছ বিদেশে এবং দেশের অন্যান্য জেলায় রপ্তানি করা হয়।
তবে কোটি কোটি টাকার আয়ের উৎস এই চিংড়ি চাষ ও অন্যান্য মাছ উৎপাদন করা হয় অনেকটা অপরিকল্পিত ভাবে। বেশিরভাগ সেকেলে পদ্ধতিতে। ঘেরে পানির নিশ্চয়তার লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে বেড়িবাঁধের যত্র-তত্র পাইপ ঢুকিয়ে লোনা পানি উত্তোলন করা হয়। সে কারণে পানি ওঠা নামা করায় বছরে বেশির ভাগ সময়ে ঝড় জলোস্বাষে বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন ইউনিয়ন লোনা পানিতে প্লাবিত হয়ে থাকে। উপজেলায় মোট ছোট বড় জলাশয় মিলিয়ে ৭৬ টি খাল রয়েছে। যার আয়তন ৬৫১ হেক্টর। এ খাল গুলোও ডিসিআর কেটে ইচ্ছামত নেটপাটা দিয়ে মাছচাষ করার ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এতো অর্থকারী খাতের চিংড়ি চাষের খেসারত কম দিতে হয় না। চাষিরা তার জমির ৩ দিক বাঁধলেও কখনো রাস্তার ধার বাঁধেন না। ফলে, সরকারের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কার্পেটিং সড়ক, ইটের ফ্লাড সোলিং, ইটের সোলিং, কাঁচা রাস্তা ঘেরের পানির ঢেউয়ে ভাঙতে শুরু করে। রাস্তার ধার ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ৬৫১ হেক্টর খাল ধারের অধিকাংশ স্থানে ইটের সোলিংয়ের রাস্তা রয়েছে। নিজের জমির রাস্তার ধারই কেউ বাঁধেন না, আবার খাল ধারের অংশ বাঁধে কে? ফলে রাস্তার ইট গুলো দিনে দিনে খালে ও মৎস্য ঘেরের মধ্যে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। আর মেম্বররা গ্রাম ছাড়া দুরের রাস্তা কর্মসৃজন কর্মসূচীর লোক দিয়ে বাঁধতে চান না। তাই ইট হারিয়ে রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়লে এলাকার লোকজন সরকার অথবা সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান-মেম্বরদের দোষারোপ করে থাকেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সেলিম খান জানান, চিংড়িচাষের নিয়ম হলো সরকারি রাস্তা বাদ দিয়ে নিজের জমিতে বাঁধ দিয়ে চাষ করতে হবে। চিংড়ি চাষিদের রাস্তার ধার বাঁধার জন্য বলা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার ধারের ঘেরমালিকদের নোটিশ করা হয় তার পরেও কয়দিন পরে সেই অবস্থার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সচেতনতার সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন সভা সেমিনারে প্রচার অব্যাহত রয়েছে।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)