বাড়ির গ্রীলে তালা লাগিয়ে দু’ শিশু সন্তানসহ দু’ গৃহবধুকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা

ইয়ারব হোসেন:

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক গৃহবধুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের করে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায়  দায়েরকৃত মামলা তুলে না নেওয়ায় তার এক বোনসহ দু’ শিশুকে ঘরের মধ্যে তালাবন্ধ রেখে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। রোববার বিকেল তিনটার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের চুপড়িয়া পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

চুপড়িয়া গ্রামের অশোক দাস জানান, তিনি ও তার ভায়রা ভাই আশাশুনি উপজেলার কচুয়া গ্রামের দীলিপ দাস তাদের বাড়িতে থেকে পার্শ্ববর্তী ইটভাটায় কাজ করেন। তার শালিকা দৌপদী তার একমাত্র শিশু সন্তান নবদ্বীপকে নিয়ে তাদের বাড়িতেই থাকেন। রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে খাওয়া দাওয়া শেষে তার স্ত্রী অঞ্জনা, শিশু সন্তান প্রদীপ, শালিকা দ্রেীপদী ও সন্তান নবদীপকে নিয়ে ইটভাটায় কাজ করতে যাওয়া মেঝ ভাই সুফলের ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন। ওই বসতঘরের গ্রীলের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিকেল আনুমানিক তিনটার দিকে ওই বসতঘর সংলগ্ন রান্না ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে তাদেরকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। আগুনের লেলিহান শিখা উপরের দিকে ওঠা ও আগুনের তাপে তারা জেগে উঠে চিৎকার করলে স্থানীয়রা এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে। এর আগেই ঘরের চালের কিছু অংশ ও  কয়েকটি আড়া পুড়ে যায়। ভিতরের দিকের দরজা খুলে  বের হয়ে স্ত্রী অঞ্জনা মোবাইল ফোনে খবর দিলে বিকেল পৌনে চারটার দিকে তিনি দীলিপকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে আসেন।2018-04-01_204146

সরেজমিনে রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চুপড়িয়া গ্রামে গেলে মিকাইল হোসেন, মুজাহিদ হোসেন ও জাহানারাসহ কয়েকজন বলেন, তারা খবর পেয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। দেরী হলে দু’ শিশুসহ তাদের মা বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারতো। তবে ইউপি সদস্য এরশাদ আলী জানান, বিষয়টি তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ও সদর থানাকে অবহিত করেছেন।

অশোক দাস অভিযোগ করে বলেন, তার স্ত্রীকে গত বছরের ১৩ অক্টোবর মুখের মধ্যে কাপড় ঢুকিয়ে দু’ হাত পিঠমোড়া ও দু’ পা মেহগনি গাছের সঙ্গে বেঁধে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। কেঠে নেওয়া হয় তার স্ত্রীর মাথার চুল। এ ঘটনায় জামায়াত কর্মী দেলোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান, চুপড়িয়া মহিলা সংস্থার সভানেত্রী মরিয়ম মান্নান, তার জামাতা আবুল কালাম, ইউপি সদস্য এরশাদ আলী, আবু বক্কর সরদারসহ একটি মহল সংখ্যালঘু নারীর উপর নির্যাতনের ঘটনা ঠিক নয় ও তাকে হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে বলে এলাকায় প্রচার দিয়ে তা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে। মামলা তুলে নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় পরবর্তীতে ঘরের মধ্যে পলিথিনে ভরা ইট ও চিরকুট ফেলে সব শেষ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এতে তাদের চারটি পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে গত বছরের ২৯ অক্টোবর প্রশাসনের উদ্যোগে চুপড়িয়া দাখিল মাদ্রাসার মাঠে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপরও একটি মহল মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাকে বারবার চাপসৃষ্টি করে আসছিল। এহেন পরিস্থিতিতে অঞ্জনার উপর নির্যাতনের ঘটনায় বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. তাপস কুমার পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাশীষ বিশ্বাস, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্মল চক্রবর্তী, সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সভাপতি ম-লীর সদস্য গোষ্ট বিহারী ম-ল, সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, দলিত পরিষদের সভাপতি গৌর দাস তাদের বাড়িতে ছুঁটে আসেন।

অশোক দাস আরো জানান, দু’ মাস আগে মরিয়ম মান্নানের জামাতা কয়েকটি নাশকতার মামলার আসামী কালাম গ্রেফতার হওয়ায় তাদের উপর চাপ বাড়তে থাকে। বিষয়টি বারবার পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। যদিও গত সাড়ে পাঁচ মাসেও পুলিশ ওই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেনি।

জানতে চাইলে রোববার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহম্মেদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উপপরিদর্শক প্রবীর রায় জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে যে কোন সময় মামলার পুলিশ প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)