টার্কি মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী সাতক্ষীরার সাজিদা খাতুন

রাহাত রাজা:
সাতক্ষীরা সদরের পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার গৃহিনী সাজিদা খাতুন। জীবনের অনেক কঠিন সময় পার করেছেন তিনি পরিবারের অভাব অনটনের কারনে। পোল্ট্রিফার্ম, ধান কিনে বিক্রয় সহ নানা ধরনের ক্ষ্দ্রু ব্যবসা শুরু করলেও তেমন স্বচ্ছলতা আসেনি তার জীবনে । তিনি বছর তিনেক আগে পাশের গ্রাম থেকে একজোড়া টার্কি মুরগি কিনে নিয়ে আসেন । টার্কির বয়স ছয়-সাত মাস যেতে না যেতেই ডিম দেয়া শুরু হয় এর পর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই এক জোড়া টার্কি মুরগি থেকে এখন তিনি কয়েক শত টার্কির মালিক ।
প্রতি মাসে ডিম ও টার্কি মুরগি বিক্রয় করে তার আয় হয় ভালোই। এখন বাণিজ্যিকভাবে টার্কির খামার করছেন তিনি।
সাজিদা খাতুন বলেন, এ মুরগির সাধারণ মুরগির মতো রোগবালাই হলেও তার খামারে বড় ধরনের কোনো অসুখ এখন পর্যন্ত হয়নি । তবে টার্কির রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব বেশি। ছয় মাসের একটি পুরুষ টার্কির ওজন হয় পাঁচ-ছয় কেজি এবং স্ত্রী টার্কির ওজন থাকে তিন-চার কেজি।
ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ২৮ দিনেই এর ডিম ফুটানো যায়। এছাড়া বর্তমানে দেশী মুরগির মাধ্যমে টার্কির ডিম ফোটানোর ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি এক মাসের বাচ্চার জোড়া বিক্রি করেন আড়াই হাজার টাকায়। প্রতিটি ডিম বিক্রি করেন ২০০ টাকায়।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা, খুলনা, যশোর, বরিশাল, পিরোজপুরসহ দেশেরে বিভিন্ন জায়গা থেকে তার টার্কি মুরগি ক্রয় করতে আসেন ক্রেতারা। তিনি আরও বলেন সম্প্রতি ইউটিউবে কৃষি ও কৃষকের গল্প নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে তার প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয় এর ফলে বিক্রয় দ্বিগুন বেড়েছে।
তার ভাষ্যে, টার্কির মাংসের সুখ্যাতি বিশ্বজুড়ে। এর উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক কম। তাই টার্কি পালন বেশ লাভজনক। টার্কির প্রধান খাবার ঘাস। তবে পাতাকপি, কচুরিপানা এবং দানাদার খাবারও খেয়ে থাকে এরা।
প্রতি কেজি ৩০০ টাকা ধরা হলে ছয় কেজির একটি টার্কির দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ৮০০ টাকা। তিনি বলেন যদি কোন ব্যাংক থেকে লোন পায় তবে ব্যবসাটি আরও বড় করার ইচ্ছা আছে তার।
তবে ভারত থেকে নিম্নমানের টার্কির বাচ্চা এক প্রতারক চক্র দেশে নিয়ে আসছে বলে জানান সাজিদা খাতুন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের বাচ্চা মারা যাচ্ছে। নিম্নমানের বাচ্চা চেনার বিশেষ কোনো কৌশলও নেই। তাই তিনি বিশ্বস্থ প্রতিষ্ঠান থেকে বাচ্চা সংগ্রহের পরামর্শ দেন।
অনেকেই আগ্রহ নিয়ে তার কাছে আসেন টার্কি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে। সাতক্ষীরার অনেক খামারি টার্কি পালনে আগ্রহী। কিন্তু এর ডিম ও বাচ্চা সহজলভ্য নয়। এ বিষয়ে জ্ঞানের পরিসরও কম। তাই খামার স্থাপন করতে সাহস পাচ্ছেন না অনেকেই।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাশ বলেন, টার্কি আমাদের প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের একটি নতুন প্রজাতি । অনেক দিন ধরে সাতক্ষীরাতে টার্কি লালন-পালন করা হচ্ছে। এটি একটি লাভ জনক ব্যবসা একারনে খামারীরা এ ব্যবসায় ঝুকছে । প্রানী সম্পদ বিভাগ থেকে সকল টার্কি খামারীদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সহযোগীতা করা হয়।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)