হরিলুট হচ্ছে ভোমরা স্থলবন্দরে শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো ন্যায্য মজুরীর টাকা

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে গরিব অসহায় শ্রমিকদের রক্ত-ঘাম ঝরানো ন্যায্য মজুরীর টাকা হরিলুট করে চলেছেন ভোমরা স্থল বন্দরের কয়েকটি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। প্রতারনার মাধ্যমে শ্রমিকদের টাকায় পকেট ভারি করছেন তারা। ফলে ক্ষোভে ফুঁসছেন সাধারণ শ্রমিকরা। যেকোন মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে শ্রমিক ধর্মঘটসহ অনাকাঙ্খিত ঘটনা।

ভোমরা হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং- ১৭২২ এবং ভোমরা বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং- ১৯৬৪ এর একাধিক শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভোমরা স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়োজিত শ্রমিক ঠিকাদার প্রতিমাসে ভারতীয় ট্রাক প্রতি ২শ ২০ টাকা হারে শ্রমিকদের মজুরী প্রদান করে, যাকে সাধারণ শ্রমিকরা টনের টাকা বলে থাকে। ১৭২২ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কওছার আলী ও ১৯৬৪ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম (রঞ্জু) এই টনের টাকা নিয়ে চরম স্বেচ্ছাচারিতা করছে।

ভোমরা স্থল বন্দরে শ্রমিকের মজুরী থেকে সর্বোচ্চ শতকরা ২০ টাকা হারে ইউনিয়নের কমিশন নেওয়ার নিয়ম থাকলেও কওছার আলী ও সাইফুল ইসলাম (রঞ্জু) অবৈধ ভাবে নিচ্ছেন শতকরা ৩০ টাকা। অবশিষ্ট শ্রমিকদের মজুরীর ন্যায্য প্রাপ্য অংশ থেকে খুলনা শ্রম অধিদপ্তরের বর্তমান দায়িত্ব প্রাপ্ত পরিচালক মিজানুর রহমানসহ একাধিক নেতার নাম করে লক্ষাধিক টাকা প্রতিমাসে আত্মসাৎ করছে। এছাড়াও শ্রমিকদের দৈনিক কাজের মজুরীবাবদ প্রাপ্য ১০/১২ দিনের টাকা অবৈধভাবে আটকে রেখে বিভিন্ন ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেছেন এই দুই শ্রমিক নেতা। নির্বাচনে জয়লাভের পরে এই দুই শ্রমিক নেতা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য নয় এমন প্রায় ১৬০ জন লোককে সম্পূর্ন অবৈধভাবে ইউনিয়নের কাজে নিয়োজিত করেছেন। এর ফলে রেজিষ্টার ভুক্ত সদস্য শ্রমিকরা ন্যুনতম মজুরী না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এ বিষয়ে শ্রমিক অহেদ আলী, রউফ, সাইফুল, অজেদ আলী, কামরুল, হোসেনসহ প্রায় শাতাধিক শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, আগষ্ট মাসে ১৪শ ভারতীয় গাড়ির কাজ বাবদ প্রাপ্ত ৩ লক্ষ ৮ হাজার টাকা থেকে শ্রমিকদের নিট পাওনা ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ৪০০ টাকা বাবদ ৫৫ টি দলের প্রত্যেকের প্রাপ্য ছিল ৪ হাজার ৪৮০ টাকা। অথচ তাদের পরিশোধ করা হয়েছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা। একই ভাবে সেপ্টেম্বর মাসে ১৭শ ভারতীয় ট্রাকের কাজ বাবদ প্রাপ্ত ৩ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকার মধ্যে শ্রমিকদের নিট পাওনা ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ২০০ টাকা বাবদ প্রতিটি দলের প্রাপ্য ছিল ৫ হাজার ৪৪০ টাকা অথচ পরিশোধ করা হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ টাকা।

এভাবে প্রতিমাসে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরীর লক্ষ লক্ষ টাকা এই দুই নেতা আত্মসাৎ করায় ফুঁসে উঠেছে শ্রমিকরা। যে কোন সময়ে শ্রমিক ধর্মঘটে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ বাঁধা গ্রস্থ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

দুই নেতার এই সব অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করতে গেলেই সেই শ্রমিক বা শ্রমিকদের ভাগ্যে জোটে বহিস্কারাদেশ। ন্যায্য প্রাপ্য টনের টাকা পাওয়া, দৈনিক কাজের বিল পরবর্তী দিনে পাওয়া এবং টাকার বিনিময়ে অবৈধ ভাবে নিয়োগ দেওয়া সদস্য নয় এমন লোকদের অবিলম্বে ইউনিয়নের কাজ থেকে প্রত্যাহারের বিষয়ে মাননীয় জেলা প্রসাশক, পুলিশ সুপার সহ শ্রমিকলীগ ও আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নির্যাতিত শ্রমিকরা।

ভোমরা স্থল বন্দরের ১৭২২ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কওছার আলীর মোবাইলের ০১৭২৮***৭৭৪ নম্বরে কল করা হলে মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে ১৯৬৪ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম (রঞ্জু) এ ব্যাপারে বলেন, ২০ টাকার জায়গায় ৩০ টাকা নেয় এটা ঠিক তবে ওই ৩০ টাকা হতে ২০ টাকা আমরা নেই আর ১০ টাকা শ্রমিকদের পিদ-আপদসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যয় করা হয়। আমরা মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার শ্রমকদের বিল দেয়া হয় এ কারণে দুই একদিন বাকি থাকে। আমরা রেজিস্টারের মাধ্যমে শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করি। এখানে স্বেচ্ছাচারিতার কোন সুযোগ নেই।

এসকল ব্যাপারে খুলনা শ্রম অধিদপ্তরের বর্তমান দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা এগুলো জানেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা গাড়িপ্রতি সিএন্ডএফ থেকে শ্রমিকদের ১০০ টাকা করে নেয় এবং সেই টাকা প্রতি সপ্তাহে শ্রমিকদেরকে প্রদান করি। মাসিক টনের যে টাকা আসে সেটা সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তবে গাড়ি প্রতি কত টাকা নিচ্ছি এবং শ্রমিকদের কত টাকা দিচ্ছি সেটা তারা জানে। এছাড়া ২০ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা নেওয়ার ব্যাপারটিও শ্রম অধিদপ্তর জানে না বলে তিনি জানান।

খুলনা শ্রম অধিদপ্তরের বর্তমান দায়িত্ব প্রাপ্ত পরিচালক মিজানুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, গঠনতন্ত্রের বাইরে টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। শ্রমিকরা এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে অব্যশ্যই কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)