স্বর্ণ পাচারের অন্যতম রুট ভোমরা সীমান্ত এলাকা!

ভোমরা স্থলবন্দরসহ এর পাশের ভোমরা ও লক্ষীদাড়ী গ্রাম দুটি বর্তমানে স্বর্ণ পাচারের অন্যতম রুটে পরিনত হয়েছে। নিয়মিত ধরা পড়ছে বড় বড় স্বর্ণের চালান। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় ভোমরা এলাকায় স্বর্ণের খনি পাওয়া গেছে।

সুত্র জানায়, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে স্বর্ণ পাচারের অন্যতম কারণ প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার হুন্ডি ব্যবসা। কিছু অসাধু সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী আমদানিকৃত পণ্যের পরিমাণ ও মূল্য কম দেখিয়ে পণ্য ছাড় করে রপ্তানিকারককে প্রকৃত মূল্য পরিশোধ করেন হুন্ডির মাধ্যমে। অন্যের এলসির গেটপাশ ক্রয় করা পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের মূল্য পরিশোধ করেন হুন্ডির মাধ্যমে। জাহাঙ্গীর মার্কেট, স্বপন মার্কেট, বাবু মার্কেট, অজেদ আলীর মার্কেটসহ আশপাশের দোকানগুলোতে প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের গার্মেন্টস সামগ্রী, স্টেশনারী এবং সিটি গোল্ডের গহনা আসে ভারত থেকে। এসব চোরাচালানকৃত মালামালের মূল্য পরিশোধ করা হয় হুন্ডির মাধ্যমে। এই কোটি কোটি হুন্ডির টাকা ভারতে পাঠাতেই পাচারকারিরা বেপরোয়াভাবে স্বর্ণ পাচার করছে।

প্রাপ্ত তথ্যে আরো জানা যায়, এই পর্যন্ত ভোমরায় যতজন স্বর্ণ পাচারকারি ধরা পড়েছেন তারা কেউ কোনদিন সীমান্ত অতিক্রম করেন না। সন্দেহ মুক্ত থাকার জন্যেই সাতক্ষীরা থেকে স্বর্ণ বহণ করে নিয়ে আসেন একজন এবং সীমান্ত পার করেন অন্যজন। পাচারকৃত স্বর্ণ সীমান্ত পার করার কাজে নিয়োজিতদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে আছেন অল্পদিনে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া জাহাঙ্গীর মার্কেটের দুজন কাপড়ের দোকানদার এবং লক্ষীদাড়ী গ্রামের তিনজন শীর্ষ হুন্ডি ব্যবসায়ী। বিজিবি পুলিশসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে সুসম্পর্কের কারণে সীমান্ত এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে বা সীমান্ত পার হতে এদের কোন সমস্যাই হয়না। তাছাড়া এদের আছে বিস্তৃত চোরাচালানি নেটওয়ার্ক। এদের আর্থিক বিনিয়োগে লক্ষীদাড়ী এবং ঘোজাডাঙ্গার বেশ কয়েকজন পাচারকারী যেমন আনারকলি, জামিলা, হাসিনা, নাজমার মা, খালেকের বউ, সোহেলের বউ, মোকছেদের বউ, রুহুল আমিনের মেয়ে হাজেরাসহ আরো অনেকে বিভিন্ন চোরাচালানি মালামাল সীমান্ত পার করার অজুহাতে প্রতিদিন ৫/৭ বার সীমান্ত অতিক্রম করেন। এদের মাধ্যমেই নিরাপদে পাচার হয়ে যায় হুন্ডির টাকা স্বর্ণ, অস্ত্র ইত্যাদি। আর তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন জাহাঙ্গীর মার্কেটের মালিক জাহাঙ্গীরের মতো গডফাদাররা।

কিছুদিন আগে পারুলিয়া টু বদরতলা রাস্তায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহৃত লক্ষীদাড়ীর আশরাফ আলী ওরফে হাসাপুটের ছেলে মনিরুলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরার এক জুয়েলার্সের আটানব্বই লক্ষ টাকার স্বর্ণ হজম করে দেওয়ার অভিযোগ আছে।

লক্ষীদাড়ীর পান বিক্রেতা ইব্রাহীমের ছেলে মিজান পর পর দুইবার প্রায় পনের লক্ষ হুন্ডির টাকাসহ ধরা পড়ে বর্তমানে শ্রীঘরে। দুঃখজনক হলেও সত্যি ভোমরায় আটককৃত সবগুলো হুন্ডি এবং সোনার চোরাচালান আটক করেছে বিজিবির গোয়েন্দা সদস্যরা। দেশের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর অর্জন এক্ষেত্রে শুন্য। ধরা পড়া চোরারালানীদের কাছ থেকে তথ্য আদায় করে নেপথ্যের নায়কদের আটকানোর কোন খবরও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার অনেক গন্যমান্য ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, দুই দেশের আইকার্ড ধারী দ্বৈত নাগরিক, সন্তোষজনক কাজ না থাকা ভোমরা-লক্ষীদাড়ী গ্রামের বাসার ভাড়াটিয়া, এলাকায় হঠাৎ বড়লোক হয়ে যাওয়া ব্যক্তি এবং ছোটখাট চোরাচালানের অজুহাতে দিনে ৫/৭ বার সীমান্ত অতিক্রম কারী, লোকদের প্রতি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একটু মনোযোগী হলেই হুন্ডির টাকা, স্বর্ণ, অস্ত্র পাচারকারীদের খুব সহজেই চিহ্নিত করতে পারে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবৈধ অর্থ ও অস্ত্র মুক্ত রাখতে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ভোমরা স্থলবন্দর ও আশপাশের এলাকার হুন্ডির টাকা, অস্ত্র, সোনা চোরাচালান খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে এমনটাই আশা এলাকার সচেতন জনগনের।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)