স্কুলে আসতে খুব কষ্ট হয় তারপরও ভাল লাগে

সমাজের অন্তরালে অবহেলিত প্রতিবন্ধীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। নিজেরা সমাজের বোঝা না হয়ে তারা স্বাবলম্বী হতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সমাজের সবকিছুর ঊর্ধ্বে যেয়ে নিজের ভার অন্যকারও উপর না দিয়েও নিজেরা-ই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে অভিভাবকগণ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। প্রতিবন্ধী শিশুদের সাধারণ বিদ্যালয়ে ভর্তি না করার মন-মানসিকতা থাকায় তাদের জন্য তৈরী হচ্ছে প্রতিবন্ধী স্কুল।
এমনি চিত্র লক্ষ করা গেছে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার শুকদেবপুর। ২০১৩ সালে তৈরি করেছেন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি। এখানে শিক্ষক রয়েছে নয় জন। শিক্ষকগণ নিজেদের খরচে পাঠদান করে আসছেন প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে।
সরেজমিন যেয়ে দেখা মিলেছে ভিন্ন চিত্রের, বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কেউ বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী,কেউ দু’পায়ে শক্তি পায় না, হুইল চেয়ারে চলাচল করে। অনেকে বাক-প্রতিবন্ধী। সব শুনতে পারলেও না পারে বলতে কিছু। অবার অনেকে শ্রবণ- প্রতিবন্ধী ও বাক-প্রতিবন্ধী দুটোই। নান ধরনের ইশারা – ইঙ্গিত ব্যবহার করে তাদের পড়াতে হয়। সুবিধা মত পাঠদানের জন্য রয়েছে প্রতিবন্ধী শিক্ষক।

প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দনা দাশ বলেন, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে আমরা নয় জন শিক্ষক পাঠদান করি। শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের সুযোগ আছে এখানে। ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ১১৭ জন। তার মধ্যে ছাত্র ৭৪ জন, ছাত্রী ৪৩ জন। শুরু থেকে বিনা-বেতনে আমরা এই শিক্ষা দিয়ে আসছি প্রতিবন্ধী শিশুদের। বিদ্যালয়ে তাদের পাঠদানের পাশাপাশি রয়েছে বিনোদন ও শারীরিক ব্যায়ামের ব্যবস্থা। যাতায়াতের জন্য স্কুল ভ্যানের ব্যবস্থা আছে। আমরা চাই প্রতিবন্ধী বাচ্চারা যেন সমাজের বোঝা না হয়। তারা নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হোক, শিক্ষিত হোক।

মোঃ মুর্শিদ আলী নামে এক ছাত্র বলেন, এখন আমি আমার নাম লিখতে পারি । চোখে ভাল দেখতে পায়না। পড়াশুনা করতে খুব মন চাই। আব্বু প্রতিদিন কোলে করে নিয়ে আসে আবার কোলে করে নিয়ে যায়। আগে অক্ষর চিনতাম না এখন অক্ষরগুলো সব চিনি।

প্রতিবন্ধী স্কুল ছাত্রী মনিরা আক্তার বলেন, আমি দু’পায়ে বল পায়না। হুইল চেয়ারে বসে স্কুলে আসি। আম্মু রোজ আমাকে হুইল চেয়ারে করে ঠেলে নিয়ে আসেন। স্কুলে আসতে খুব কষ্ট হয় তারপরও খুব ভাল লাগে। আমি এই স্কুলে এক বছর ধরে পড়ছি।

বিদ্যালয়ের অপর এক শিক্ষক বলেন, সাধারণত প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের সাথে স্বাভাবিক শিশুরা মেলামেশা কম করে থাকে । সাধারণ বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধীদের ভর্তির সুযোগ থাকলেও তারা অন্যদের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেনা। তাদের জন্য প্রয়োজন ভিন্ন শিক্ষা পদ্ধতি। আমরা প্রতিবন্ধী শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের জন্য বিনামূল্য পাঠদান করে আসছি। পরিবার ও সমাজের বোঝা না করে দেশের সম্পদে রূপান্তর করবো এই প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের।
অভিভাবকদের অভিমত হল, অন্য স্বাভাবিক শিশুদের মত সহজেই সব আয়ত্ত করতে না পারলেও চেষ্টা করতে দোষ কি? সর্বদা তাদের স্বাভাবিকীকৃত সময়ের মুখোমুখি করছি। ধীরে ধীরে টিকে থাকতে শিখে যাবে। শিক্ষা জাতীর মেরুদণ্ড সেটা উপলব্ধি করতে পারবে একটি সময়ে।

নিজেরা সোজা হয়ে হাঁটতে না পারলেও স্বপ্ন তাদের আকাশ ছোঁয়া। শিক্ষার গুরুত্ব আর স্বাবলম্বিতা তাদের পিছু থেকে তাড়া করে সব সময়। কথা বলতে না পারা মানুষটিও থেমে নেই জীবনের গতি পথে। নিজেরা যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে রুখতে চাই সব গতিপথ। প্রতিবন্ধী হয়ে তারা পিছিয়ে নেই,ধীরে ধীরে দূর করছে সব প্রতিবন্ধকতা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)