সৌদিতে পাচার হওয়া মেয়েকে ফিরে পেতে চায় পিতা

সৌদে আরবে পাচার হয়ে যাওয়ার পর নির্যাতনের শিকার হওয়া মেয়েকে ফিরে পেতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক দিনমজুর। বুধবার সকাল ১১ টায় ওই দিন মজুর সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে তার মেয়েকে ফিরে পেতে ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে সাতক্ষীরা সদর উপরেজলার মাগুরা কর্মকার পাড়ার ওই দিন মজুর বলেন, তার মেয়েকে (২২) হাসপাতালে ৪০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে নার্সের চাকুরি দেওয়ার নাম করে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় আন্তর্জাতিক নারী পাচার সি-িকেডের সদস্য প্রতিবেশী নাছিমা খাতুন ও তার সহযোগি খুলনা শহরের টুটপাড়ার কামরুজ্জামান ওরফে সোহাগ বাবু। ঢাকার কলাবাগানের তানিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে জান্নাতিকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার পরপরই সেখানকার দালাল ফরহাদের মাধ্যমে সেখানকার সমুদ্র বন্দর ‘দাম্মাম খাবজি’ এর নিকটবর্তী দুম্বা খাটালের মালিক ‘হায়ান ম্যাডাম অরফা’ এর কাছে চার লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। এর আগে প্রকৃত জন্মসনদ বাদ দিয়ে তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপুর কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জন্মসনদ সংগ্রহ করে পাসপোর্ট তৈরিতে ব্যবহার করেন নাছিমা ও সোহাগ বাবু। প্রথম দিন থেকেই জান্নাতিকে ১০ থেকে ১১ জন পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়। অপারগতা প্রকাশ করায় সারা দিনে মাত্র একটি রুটি ও পানি খাইয়ে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। সে যাতে বাড়িতে যোগাযোগ করতে না পারে সেজন্য তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেওয়া হয়। সম্প্রতি বাড়িওয়ালীর ইমো মোবাইল ফোন থেকে জান্নাতি তার উপর নির্যাতনের কাহিনী পরিবারেরর সদস্যদের জানায়। এখানে শুধু সে নয়, বাংলাদেশী আরো বেশ কয়েকজন নারীকে সেখানে এনে একইভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে।

গত ২৩ আগষ্ট আন্তঃজার্তিক নারী পাচারকারি দলের সদস্য খুলনার সোহাগ বাবু তাদের বাড়িতে এসে বড় মেয়েকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইতিপূর্বে দাবিকৃত এক লাখ টাকা ও পাসপোর্ট বই নিতে আসেন। ওই দিন কৌশলে তাকে ছেড়ে দিয়ে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে র‌্যাব এর সহযোগিতায় গত ২৮ আগষ্ট সন্ধ্যায় খুলনা সোনাডাঙা বাসষ্টান্ড এসে এক লাখ টাকা ও বড় মেয়ের পাসপোর্ট দেওয়ার কথা বলে সোহাগ বাবুকে আটক করা হয়। র‌্যাব এর কাছে সোহাগ বাবুর স্বীকারোক্তি অনুযায়ি পরদিন মাগুরার কর্মকারপাড়া থেকে দালাল নাছিমাকে গ্রেফতার করে সদর থানার পুলিশ। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে ২৯ আগষ্ট রাতেই নাছিমা ও সোহাগ বাবুর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাননামা চার জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক অনুপ কুমার দাস সোহাগ বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৫দিনের রিমা- আবেদন জানালেও নাছিমাকে রিমান্ডের জন্য আবেদন করেননি। এমনকি গত ৪ সেপ্টেম্বর রিমান্ডের শুনানীকালে দুুর্বল উপস্থাপনার কারণে আদালত তা মঞ্জুর করেনি। এরপরপরই গ্রেফতারকৃত সোহাগ বাবুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দু’টি তার বাবার কাছে দিয়ে দেওয়ার পর মেয়েকে নতুন করে নির্যাতন করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের আবারো রিমা-ের আবেদন জানাতে বললে ওই দারোগা উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ফলে আসামীরা জামিন পেয়ে গেলে তার মেয়েকে আর জীবন্ত অবস্থায় দেশে ফেরানো সম্ভব হবে না বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।

বহু পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হতে আপত্তি করায় ইতিমধ্যেই মেয়ের দু’ স্তন, উরু, পা ও হাত গরম ইস্ত্রি দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ডান চোখটি ঘুষি মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু ’পাচারকারি গ্রেফতার হওয়ার পর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। তাদেরকে নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে মেয়েকে যে কান সময় মেরে ফেলা হবে বলে তাকে জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শরীরে দগদগে ক্ষত নিয়ে প্রতিদিন যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া মেয়েকে জীবন্ত অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনতে গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডের নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রি, প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, মানবাধিকার সংগঠণ ও বিচার বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করা হয়।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক অনুপ কুমার দাস জানান, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)