সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাববুর রহমানের বদলী সংক্রান্ত ফাইলটি লাপাত্তা

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমানের বদলী সংক্রান্ত ১৬জন সদস্য স্বাক্ষরিত রেজুলেশন ও মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অগ্রবর্তী করা প্রতিবেদন সংক্রান্ত ফাইলটি লাপাত্তা হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে প্রধান নির্বাহী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সদস্য অ্যাড. শাহানাজ পারিভন মিলি, মাহাফুজুর রহমান রুবি খাতুন, মনিরুল ইসলাম ও আল ফেরদৌস আলফা জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ হয়েও নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে ২০০১ সালে এসএম মাহাবুবর রহমানের ষাটলিপিকার থেকে পদোন্নতি পান। এডিপি’র টাকা রাজস্ব খাতে নিয়ে যেয়ে বাবার নামীয় আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানার নামে খরচ করা, খেয়াঘাটের ইজারার টাকা লুটপাট, বিভিন্ন প্রকল্প পাশ করানোর নামে আর্থিক সুবিধা নেওয়া, বাস্তবতা বহির্ভূতভাবে আব্দুর রউফ কমপ্লেক্সে ও এতিমখানায় জেলা পরিষদ এবং সমবায়ের টাকা অপচয় , বদলী রুখতে তিন তিনটি রিট পিটিশন খারিজ হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে এসএম মাহাবুবর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাকে বদলীর বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রায় সকল সদস্য সোচ্চার হন। তাকে বদলীর জন্য গত ৩০ আগস্ট ২০ তম সাধারণ সমভায় ১৬ জন্য সদস্য স্বাক্ষর করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে এসএম মাহাবুবর রহমান রেজুলেশনে সাক্ষর করেন। ৩১ সেপ্টেম্বর ২০তম সভার সকল সিদ্ধান্ত দৃঢ়করণ হয়। তবে বিবিধ আলোচনায় কয়েকজন সদস্য তাকে রাখার জন্য সভায় মন্তব্য করলে সার্বিক বিষয় চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীর সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স বিভাবে চলবে তা নিয়ে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এরপর চেয়ারম্যান পৃথক পৃথকভাবে কয়েকজন সদস্যকে ডেকে শোনা ও জানার পর ৪ অক্টোবর বদলী সংক্রান্ত রেজুলেশনটি অগ্রবর্তী করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য প্রধান নির্বাহীর মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে পাঠান।
সদস্যগণ আরো জানান, ৫ অক্টোবর তারা প্রধান নির্বাহীর কাছে জানতে চাইলে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছ থেকে ফাইলটি জেলা পরিষদ সদস্য মতিয়ার রহমান নিয়ে গেছে বলে জানানো হয়। এমনকি ৯ অক্টোবর বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফাইলটি কোথায় তা প্রধান নিবার্হী নিশ্চিত করতে পারেননি। এমনকি প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমানের কাছে কয়েকবার মোবাইল করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। ফাইল না পাওয়ার বিষয়টি এসএম মাহাববুর রহমান যাতে বদলী না হন সেজন্য একটি কঠিন ষড়যন্ত্র বলে আশঙ্কা করছেন ওই চারজন সদস্য।
জানতে চাইলে জেলা পরিষদ সদস্য মতিয়ার রহমান জানান,গত ৪ অক্টোবর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম বদলী সংক্রান্ত রেজুলেশনটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য অগ্রবর্তী করার পর অফিস পিওনের কাছ থেকে তিনি দেখেন। এরপর ফাইলটি কোথায় গেল এটা তার জানার কথা নয়।
জেলা পরিষদ প্রশাসক এসএম মাহাবুবর রহমান সোমবার বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের কাছে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যাকে বদলী করা হচ্ছে তারই কাছে সেই ফাইল আসবে এটা সঠিক নয়। ফাইল পাওয়া না গেলে দায়িত্ব জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীর।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মহসিন আলী জানান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমানের বিরুদ্ধে বদলীর রেজুলেশন ও তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য অগ্রবর্তী করা সংক্রান্ত ফাইলটি তারই কাছে দেওয়ার পর সেটি জনৈক সদস্য মতিয়ার রহমান নিয়ে গেছেন বলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাকে অবহিত করেন। তবে সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফাইলটি ফেরৎ চাওয়ার জন্য তাকে কমপক্ষে চার বার মোবাইল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিষয়টি ঢাকায় অবস্থানরত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়েছে।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তিনি ঢাকা থেকে ফেরার পর বিষয়টি দেখবেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)