সাতক্ষীরায় আত্নহত্যা ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন

 আত্মহত্যার কারণগুলি সমাজে শ্রেণিভেদ এবং রুচিভেদের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এটা মনে রাখা জরুরি, আত্মহত্যা অবশ্যই প্রতিরোধযোগ্য। একজনের আত্মহত্যা তার চারপাশে থাকা মানুষগুলির উপর যেমন, পরিবার, বন্ধু, সহকর্মী প্রমুখকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। আত্মহত্যা নামক কাজটির সম্পর্কেও মানুষের ধারণা জন্মায় আত্মহত্যার চেষ্টা রোখার জন্য চারপাশের সাহায্য যেমন দরকার, তেমন মনোবৈজ্ঞানিক দিক থেকেও আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকানো যেতে পারে। আত্মহত্যার ঘটনা এড়ানোর জন্য সমাজেরও সমানভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত। সম্প্রতি সাতক্ষীরায় ৭ মাসে শুধু মাত্র ছাত্র-ছাত্রী আত্নহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৮ জন এর মধ্যে কলারোয়া উপজেলার পাঁচপোতা গ্রামে শ্রাবণী সুন্দরী(১৭) নামের এক কলেজ ছাত্রী ২৪ জুলাই আত্মহত্যা করে। ২৩ জুলাই সদরের ভাদড়া গ্রামে সাকিব হোসেন(১৭) নামের ৯ম শ্রেণির স্কুলছাত্র, তালা উপজেলার মাগুরাই সোমা সুলতানা (১৯) নামের কলেজ ছাত্রী ১৯ জুলাই, দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে কুয়াশা পারভীন তুয়া (১৭) নামের সখিপুর কেবিএ কলেজের এইচ.এস.সি ২য় বর্ষের ছাত্রী ২৮ জুন, কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের কাশিবাটি গ্রামে লতিফা খাতুন (১৭) নামের স্কুল শিক্ষার্থী ৯ মে, কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা (উত্তরপাড়া) গ্রামে নাম হানিফ হোসেন(২০) নামের এক কলেজ ছাত্র ৭ এপ্রিল, আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের বড়দল মাঝেরডাঙ্গা গ্রামে রেখা মন্ডল (১৬) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী ১ ফেব্রুয়ারি, যশোর জেলার মনিরামপুরের ছেলে সাতক্ষীরা শহরে পুলিশ লাইন সংলগ্ন একটি মেসে জয়ন্ত পাল জয় (১৯) নামের লাবসা পলিটেকনিকে সিভিল ইনজ্ঞিনিয়ারিং চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ২৩ এপ্রিল আত্নহত্যা করে। এছাড়া অনেকে আত্নহত্যার চেষ্টা করে বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে। শারীরিক, মানসিক ও যৌন হেনস্থার শিকার হয়ে মানসিক বিষাদে আক্রান্ত হয়ে আত্নহত্যা করে বলে ধারনা করেন বিশেষজ্ঞরা। এবিষেয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট এবং হাসপাতালের শিশু কিশোর ও পারিবারিক সম্পর্ক বিভাগের চিকিৎসকদের সাথে মত বিনিময়ে বোঝাযায় ‘‘একই চাপ বা হেনস্তার মুখে সবাই আত্মহত্যা করে না৷ কেউ কেউ করে৷ হয়রানি, চাপ বা হেনস্তার শিকার হয়ে। শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা এবং গঠন বোঝা ও প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা আলাদাভাবে জানা জরুরি।শিক্ষার্থীদের এই আত্মহত্যাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়ার কথা বার বার উঠে আসে।যদি সব বয়সের ব্যক্তিদের কথা ধরা হয় তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, পারিবারিক কলহ, অসুস্থতা, অসাফল্য, আর্থিক দুর্যোগ, পণপ্রথার জন্য চাপ, দারিদ্র ও মাদক আসক্তির কারণেও মানুষ এই পথ বেছে নিচ্ছে। তবে এই অকাল মৃত্যুকে রোধ করা সম্ভব বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে সমাজকে সচেতন ও শিক্ষিত করে তুলতে পারলে এই ভয়ঙ্কর পরিণামকে রোধ করা সম্ভব। বিষাদগ্রস্ত বা মানসিক সমস্যায় জর্জরিত মানুষ যদি পরিবারবর্গের ও বন্ধু বান্ধবদের দুঃসময়ে পাশে পায় তাহলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই সহজ। সমাজের প্রত্যেকটি ব্যক্তি যদি প্রকৃতভাবে সচেতন ও সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন তাহলে মানসিক অবসাদ এবং বিষাদে আক্রান্ত মানুষেরা আবার নতুন ভাবে বেঁচে উঠতে পারে। সর্বোপরি আত্মহত্যার প্রবণতাকে অচিরেই রোধ করা সম্ভব হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)