সাতক্ষীরায় আউশের বাম্পার ফলন

সাতক্ষীরা জেলায় আউশ ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছে চাষীরা। অন্য যেকোন বছরের তুলনায় এবছর জেলায় আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। কয়েক দিন তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষীরা দ্রুত আউশ ধান কাটার পর মাড়াই করে তা বস্তায় সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন। দামও ভাল পাওয়ায় বেশ খুশি চাষীরা। চাষীদের অভিযোগ প্রতি বছর আউশ ধান ঘরে তুলতে তাদের ব্যাপক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। পানির মধ্য থেকে আউশ ধান কাটতে হয়। এতে খরচ হয় দ্বিগুণ। সরকারের দেয়া আউশের প্রণোদনা প্রান্তিক আউশ চাষীদের মাঝে বিতরণ করা হয় না। যদি আউশের প্রণোদনা উপযুক্ত চাষীদের মাঝে বিতরণ করা হয় তা হলে উৎপাদন বাড়বে দ্বিগুণ বলে কৃষকদের অভিমত।

কম খরচ, অল্প পরিচর্যা, বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ প্রদানসহ সীমিত সময়ে ধান তুলতে পারায় সাতক্ষীরায় দিন দিন আউশের আবাদ বাঁড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার ও সেচ সহায়তা প্রদান করা হয়। একই জমিতে আবার আমনের চাষ ও করবে অনেক কৃষক। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সুষ্টি, খাদ্য ঘাটতি হ্রাস এবং দারিদ্রতা হ্রাস পাচ্ছে জেলাতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা সরকারিভাবে বীজ, সার ও নগদ টাকা দেয়ার কারণে জেলাতে আউশের আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে।সাতক্ষীরায় খরিপ-১/২০১৮-১৯ মৌসুমে উফশী আউশ ও নেরিকা আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩৪৫০জন আউশ চাষীকে বিনামূল্যে বীজ, রাসায়নিক সার, সেচ সহায়তা ও আগাছা দমন সহায়তা প্রদান করা হয়।এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১১১০ জন, কলারোয়ায় ৭৯০ জন, তালাতে ৮১০ জন, দেবহাটায় ২শ জন, কালিগঞ্জে ২৫০ জন, আশাশুনিতে ১৪০ জন এবং ও শ্যামনগর উপজেলাতে ১৫০ জন কৃষককে কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।

কৃষকেরা জানান, বোরোর তুলনায় আউশ চাষে খরচ অনেক কম। জমি চাষ, রোপণ, সেচ, সার ও কীটনাশক বাবদ বিঘাপ্রতি সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। এ কারণে প্রান্তিক কৃষকরাও আউশ চাষে ঝুঁকছেন। তবে সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক কৃষক। তাদের দাবি যারা আউশ চাষ করেনি এমন লোকও সরকারি বীজ, সার ও নগদ টাকা পেয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় ৬ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ২ হাজার ৯২০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর, তালায় ১ হাজার ৪০ হেক্টর, দেবহাটায় ২৫০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৩১০ হেক্টর, আশাশুনিতে ১০০ হেক্টর ও শ্যামনগরে ২০০ হেক্টর। যেখানে গত মৌসুমে জেলায় আউশ আবাদ হয়েছিল ৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। সে হিসাবে চলতি মৌসুমে ৫৭০ হেক্টর বেশি জমিতে আউশের চাষ হয়েছে।

চলতি মৌসুমে জেলাতে ১৭ হাজার ২৩৪ মে.টন আউশ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সদরে ৭২২৪ মে.টন, কলারোয়ায় ৪৪৯৬ মে.টন, তালায় ৩১৬৩মে.টন, দেবহাটায় ৮৯৩ মে.টন, কালিগঞ্জে ৯১৯ মে.টন, আশাশুনিতে ১৬৯ মে.টন ও শ্যামনগরে ৩৭০ মে.টন ।

সাতক্ষীরা জেলার কৃষকরা এবার ব্রি-ধান ৪৮, ৪৩, হাইব্রিড শক্তি-২ ও জামাইবাবু জাতের আউশ চাষ করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ব্রি-ধান ও হাইব্রিড শক্তি-২ জাতের আউশ চাষ হয়েছে চলতি মৌসুমে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজি আব্দুল মান্নান জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় আউশ ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে সরকারের পক্ষ থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের বিনা মুল্যে বীজ, সার ও সেচ সহায়তা প্রদান করায় জেলায় আউশ ধান ভাল হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)