সাতক্ষীরার সাবেক ডিসি ও ইউএনও’র কারাদণ্ডের রায় স্থগিত

সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দিন ও আশাশুনি উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার সুষমা সুলতানাকে দেয়া তিন মাসের কারাদণ্ডের রায় স্থগিত করেছেন সাতক্ষীরার সিনিয়র সহকারী জজ আদালত।

বুধবার বেলা ২টার দিকে এ রায় স্থগিত করা হয়। মামলার অপর সাজাপ্রাপ্ত আসামি আশাশুনি সদর উপজেলার সহকারী ভূমি অফিসার কামাল হোসেন আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আবেদন করলে রায় স্থগিত করা হয়।

কামাল হোসেন বলেন, সাবেক জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষে আমি আদালতে হাজির হয়ে কারাদণ্ডের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করি। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আগামী এক মাসের জন্য গতকালের দেয়া সাজার রায় স্থগিত করেছেন।

তিনি আরও বলেন, আশাশুনি সদর ভূমি অফিসে প্রাচীর দেয়ার সময় স্থানীয় ননি বালা হালদার বাধা দেয়। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্তে টেন্ডারের মাধ্যমে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। ওই সময় ননি বালা আদালতে প্রাচীর নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন। কিন্তু প্রাচীর নির্মাণ শেষ হওয়ার এক মাস পর আদালত প্রাচীর নির্মাণে নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন। ওই আদেশ পেয়ে ননি বালা হালদার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে মর্মে আদালতে ফের মিস কেস করে। সেই মামলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার দায় আনা হয়েছে আমাদের উপর।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আশাশুনি আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ সাবরিনা চৌধুরী আদালতের আদেশ অমান্য করার দায়ে তিন মাস করে কারাদণ্ডের রায় প্রদান করেন। বুধবার একই আদালতের বিচারক মামলাটির কার্যক্রম আগামী এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নাজির সাহাবুদ্দিন বিষয়টি নিশ্চত করেছেন।

তবে এ বিষয়ে জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু সুফিয়ানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ মামলার বিষয়ে মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছিলেন, এক নির্দেশে ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই আদালত এক একর ৬৮ শতাংশ জমির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। মামলার বাদী ননি বালা হালদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও ইউএনও পরস্পরের যোগসাজশে জমিতে বিবাদীপক্ষকে যেতে সহায়তা করেন। এতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্যের ঘটনা ঘটে।

দীর্ঘ শুনানি শেষে সিনিয়র সহকারী জজ (আশাশুনি আদালত) তাদের তিনজনকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন। তাদেরকে আগামী এক মাসের মধ্যে সাতক্ষীরার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই আদেশ লংঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে বলেও জানিয়েছেন আদালত। সিভিল প্রসিডিউরের ৩৯ আদেশ ২(৩) রুল এর বিধানমতে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

তবে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দীন বলেন, মামলার বিষয়টি আমি আগে থেকে অবগত ছিলাম না। আদালত থেকে আমাকে কখনও কোনো নোটিশও করা হয়নি। কারাদণ্ডের রায়ের পর বিষয়টি জেনেছি। বিষয়টি তিনি আইনগতভাবে মোকাবেলা করবেন বলে জানান। তাছাড়া জেনেছি আদালত আজ মামলাটি স্থগিত করেছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুলাই ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের ৬ মার্চ পর্যন্ত সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দিন। বর্তমানে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। অপরদিকে, আশাশুনির সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুষমা সুলতানা বর্তমানে নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)