সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়ে চলছে চিংড়ি মাছ কেনা-বেঁচার মতো দরকষাকষি !

শহর প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা কলেজে উপাধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা আগামী কাল ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার। সকাল ৯ টায় সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়ে চলছে চিংড়ি মাছ কেনা-বেঁচার মতো দরকষাকষি ! কে কতো টাকা দিতে পারে তানিয়ে চলছে রিতিমতো দৌড় প্রতিযোগিতা। কেউ ১৫ লাখ, কেউ ২০ লাখ, আবার কেউ দর তুলেছেন ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি, গলেনি বরফ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপাধ্যক্ষ পদে দর উঠেছে ২৮ লাখ টাকা। রাতের ভিতর টাকার অংক কতো গিয়ে যে দাঁড়াবে তা বলা যাচ্ছে না। বিধাতাই ভালো জানেন।
অভিযোগ উঠেছে, ঝাউডাঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ মো: খলিলুর রহমান ওই কলেজের সভাপতি সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবিকে দেওয়ার নাম করে ২০ লাখ টাকা , জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি খুলনা বি এল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ সাদিকুল ইসলাম জাহিদকে দেওয়ার নাম করে ৩ লাখ টাকা , ডি জি প্রতিনিধি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বিশ্বাস সুদেব কুমারকে দেওয়ার নাম করে ১ লাখ টাকা , নিয়োগ বোর্ড খরচ বাবদ ২ লাখ টাকা এবং স্থানীয় ২ আওয়ামী লীগ নেতাকে দেওয়ার নাম করে আরও ২ লাখ টাকার (সর্বমোট ২৮ লাখ টাকা) চুক্তি করেছেন এক প্রার্থীর সাথে। অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান নিজেই সব কিছুর মধ্যস্ততা করছেন বলে অভিযোগ করেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপাধ্যক্ষ পদের একাধিক প্রার্থী। ইতোমধ্যে প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ জমি বিক্রি করেছেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন, কলেজ কল্যান ফান্ড থেকে লোন তুলেছেন কয়েক জন প্রার্থী। স্ত্রীর গহনা পর্যন্ত বন্ধক দিয়ে টাকা জুগার করেছেন কয়েক জন প্রার্থী। ‘যদি লাইগা যাই’
টাকা প্রস্তত———।
এ ব্যাপারে ঝাউডাঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ মো: খলিলুর রহমান জানান, আমার বিরুদ্ধে দরকষাকষি বা ২৮ লাখ টাকার চুক্তির যেসব অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয়। কলেজের যে কোন নিয়োগের ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযোগ ওঠে কলেজ অধ্যক্ষোর বিরুদ্ধে। তবে আমি কারো চাকরি করিয়ে দেওয়ার নাম করে বা কাউকে দেওয়ার নাম করে টাকা চুক্তি করেনি। এসব অভিযোগ মিথ্যে ও বানোয়াট।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, ঝাউডাঙ্গা কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য কয়েক মাস আগে বহুল প্রচারিত নয় এমন ২টি জাতীয় পত্রিকা এবং স্থানীয় ২টি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। মোট ১৪ জন প্রার্থী উপাধ্যক্ষ পদে আবেদন করেছে। এর মধ্যে ঝাউডাঙ্গা কলেজে শিক্ষকতা করেন এমন ৬ জন প্রার্থী ওই পদে আবেদন করেছে। এরা হলো- গোপাল চন্দ্র সরদার, নোনি গোপাল মন্ডল, নির্মল কুমার সরকার, বখতিয়ার রহমান, কনক কুমার ঘোষ ও শাখাওয়াত হোসেন। বাইরের কলেজে চাকুরি করেন এমন প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন ( মোট প্রার্থী ১৪ জন ) ।
জানাগেছে, ঝাউডাঙ্গা কলেজে উপাধ্যক্ষ নিয়োগে সর্বশেষ দরকষাকষি, লবিং-গ্র“পিং করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছেন ওই কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক গোপাল চন্দ্র সরদার। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের সাধন কুমার সরদারের ছেলে তিনি।
একাধিক প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান, গোপাল চন্দ্র সরদারকেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এই বিষয়টি মুটামুটি নিশ্চিত।
তবে গোপাল চন্দ্র সরদার  জানান, আমি কোন টাকার চুক্তি করিনি। শুক্রবার সকালে পরীক্ষা হবে। পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করবো তাই জানি। মেধায় টিকলে চাকরি পাবো ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি খুলনা বি এল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ সাদিকুল ইসলাম জাহিদ  বলেন, কেউ আমার নাম ব্যবহার করে টাকা নিয়ে থাকলে তার দায়দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানিনা। নিয়োগ পরীক্ষায় যে প্রথম হবে তাকেই নিয়োগ দিয়ে আসবো। আমি কারো ধার ধারিনা।
এ ব্যাপারে ডি জি প্রতিনিধি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বিশ্বাস সুদেব কুমার  জানান, গত মাসের ২৭ তারিখ এই নিয়োগ পরীক্ষাটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি বাতিল হয়ে যায়। ১৯ জানুয়ারী শুক্রবার সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে সকাল ৯ টায় এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আমাকে এই মর্মে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেয়নি। কেউ যদি আমার নাম ব্যবহার করে অর্থ বাণিজ্য করে থাকে তার জন্য দায় আমার না।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)