সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে জামায়াত-শিবিরের সাথে সাতক্ষীরা সদর ছাত্রলীগের আলোচনা সভা

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খানপুরে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে জামাত-শিবিরের সাথে আলোচনা সভা করেছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ছাত্রলীগ।  সদর ছাত্রলীগের এমন কর্মকান্ডে তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে শিবপুরের সরকার দলীয় নেতাদের মাঝে।
স্থাণীয় সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার বিকালে খানপুরে ২০১৩ সালে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার মামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামীদেরকে সাথে নিয়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে সদর ছাত্রলীগ।
ওই অনুষ্ঠান সম্পর্কে অবগত করা হয়নি শিবপুর ইউনিয়নসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে। শিবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে জামায়াত-শিবিরের জায়গা করে দেওয়ার পয়তারা চালানো হচ্ছে এমন অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আওয়ামীলীগ নেতারা জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ-সম্পাদক ফজলে রাব্বি শাওনের সাথে শিবপুরে জামায়াত শিবিরের সাথে একটি যোগসাজশ রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী মাওঃ আব্দুল খালেক মন্ডলকে দেখতে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে যান। খালেক মন্ডলের কথামত তিনি বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার লক্ষে জামায়াত-শিবিরকে আওয়ামীলীগ বানানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তা না হলে আজ কেন আওয়ামীলীগ নেতাদের অবগত না করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে খানপুরে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরলো কেন?
তারা আরো বলেন, শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে ২০১৭ সালে শিবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি গঠণ করা হয় যাতে সভাপতি ও সাধারণ-সম্পাদকের করা হয় পায়ডাঙ্গার রাজু আহম্মেদ ও খানপুরের নাজমুল শাহাদাৎ (জাকির) কে। তবে ইউনিয়ন নেতাদের মতামতের উপর গঠণ করা ২০১৭ সালের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কমিটির কার্যক্রম নেই অভিযোগ এনে কমিটি বিলুপ্ত করে দেয় সদর উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারা।
রাজু-নাজমুল কমিটি শিবপুরের শ্রেষ্ঠ কমিটি আখ্যায়িত করে তারা আরো বলেন, আমরা নাজমুলকে ২০০৯ সাল থেকে চিনি। ২০১৪ সালে যখন ইউনিয়নে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয় সেই কমিটিতে জাকিরকে রাখার কথা ছিলো। তবে সে ইউনিয়নে না থেকে ওয়ার্ডে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করায় তাকে ইউনিয়নে রাখা সম্ভব হয়নি। বছর না পেরোতেই ২০১৪ সালের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে শিবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কার্যক্রম। সেসময় শিবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের হালধরে জাকির। ইউনিয়নের কোন পদে না থেকেও ওয়ার্ড ছাত্রলীগ থেকে শিবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিতো সামনে থেকে। সে সরকার দলীয় প্রোগ্রাম সহ প্রতিবন্ধী ও অসহায়দের সার্বিক ভাবে সহযোগীতা করা, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্র জনগণের দোরগোড়ায় পৌছিয়ে দেওয়া ছিলো তার প্রধাণত কাজ। তার নেতৃত্বে শিবপুর ছাত্রলীগ একটি মডেল ছাত্রলীগে পরিণত করা হয়।
শিবপুরের ছাত্র রাজনীতিতে নানা বৈচিত্র্য আসায় সাতক্ষীরা জেলা, সদর সহ বিভিন্ন জায়গাই তার গ্রহণযোগ্যতা ছিলো দেখার মতো। তবে সদর ছাত্রলীগ রাজু-জাকিরকে নিয়ে গঠিত কমিটি বিলুপ্ত করে জামায়াত-শিবিরের সন্তানদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হলে সেটা শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের  নেতাকর্মীরা মেনে নেবে না।
এবিষয়ে শিবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ-সম্পাদক নাজমুল শাহাদাৎ বলেন, জামায়াত-শিবিরের সাথে সদর ছাত্রলীগের আলোচনার বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানিনা।
সদর ছাত্রলীগ যেদিন খানপুরে আসছিলো সেদিন সাতক্ষীরার বাইরে ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ছাত্রলীগের সাথে জড়িত। তবে সম্মেলনের পর সদর ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হওয়ার সাথে সাথে আমাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয় কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম দূর্বল অভিযোগ এনে। তবে তাদের করা অভিযোগ কতটা যৌক্তিক ছিলো সেটা শিবপুরের জনগণ ভালো বলতে পারবেন। আমরা যারা কমিটিতে ছিলাম তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করি এবং করে যাবো। তবে যদি শিবপুরের প্রকৃতি আওয়ামী পরিবারের সন্তানদের বাদ দিয়ে জামায়াত-শিবিরের সন্তানদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয় তবে আমরা সেটা মেনে নেবো না।
এবিষয়ে শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শওকত আলী ও সাধারণ-সম্পাদক ওবায়দুর রহমান মানি বলেন, শিবপুরে সর্বস্তরের জনগণের মাঝে ছাত্রলীগের গ্রহণ যোগ্যতা ছিলো। তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম এতোটাই শক্তিশালী ছিলো যেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে তাদেরকে মূল্যায়ন না করে ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ অবগত না করে যদি জামায়াত-শিবিরের সন্তানদেরকে মূল্যায়ন করে কমিটি দেওয়া হয় তাহলে সেটা তাদের ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ-সম্পাদক হাসানুজ্জামান শাওন বলেন, আমরা যখন দায়িত্বে ছিলাম তখন শিবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক ভাবে অনেক শক্তিশালী ছিলো। একজন ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থেকে জামায়াত-শিবির প্রবণ এলাকা শিবপুরে ছাত্রলীগকে একটি মডেল ছাত্রলীগে রূপান্তরিত করে রাজু আহম্মেদ ও নাজমুল শাহাদাৎরা।  দলীয় কার্যক্রমে তাদের ভূমিকা ছিলো অপরিসীম।  সর্বমহলে তাদের গ্রহণ যোগ্যতা ছিলো। তবে তাদেরকে মূল্যায়ন ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগকে অবগত না করে যদি শিবপুরে ছাত্রলীগের কমিটি গঠণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তাহলে সেটা তাদের ব্যর্থতা।  তবে সদর ছাত্রলীগ না করলেও  ছাত্রলীগের নেতারা জাকিরের মত ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কমিটি গঠন ও জামায়াত-শিবিরের সাথে আলোচনা সম্পর্কে জানতে চেয়ে সদর ছাত্রলীগের সাধারণ-সম্পাদক ফজলে রাব্বি শাওনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)