সরকারি প্রাথমিকে ভরসা নেই অভিভাবকদের

ডেস্ক রিপোর্ট:
নিয়মিত পাঠদান না হওয়া, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, রাজনৈতিক বেড়াজাল ও অনিয়ম দুর্নীতির কারণে বেহাল গাজীপুরের শ্রীপুরের প্রাথমিক শিক্ষা। কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারীর অভাবে শিক্ষার আলো বঞ্চিত হয়ে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকছেন অভিভাবকরা। আর এ সুযোগে উপজেলার সর্বত্রই শিক্ষা নিয়ে বাড়ছে বাণিজ্য।
জানা যায়, শ্রীপুর উপজেলা জুড়ে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে ১৬৬টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। এতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এক লাখ তিন হাজার ৫৫০ জন শিক্ষার্থী পাঠ নিচ্ছে। যদিও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৪১০০জন। অপরদিকে সরকারী এই প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৫০টি। সরকারী বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৪৫টি ও সহকারী শিক্ষকের পদশূণ্য রয়েছে ৫৫টি। এ গ্রেডের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে ৫৮টি বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭১টির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে। বিদ্যালয় গুলোকে সাতটি ক্লাস্টারে বিভক্ত করা হয়েছে।
প্রতিটি বিদ্যালয়ে রয়েছে পরিচালনা পরিষদ যাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। মূলত প্রধান শিক্ষককে নিজ হাতের মুঠোয় বন্দি করে তাঁরা গড়ে তুলেন বাণিজ্য। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবাধে শিক্ষার্থীদের নোট গাইড বই ক্রয়, কোচিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রতিটি স্তরে স্তরে চলে অর্থ আদায় পরীক্ষার ফি, খেলাধুলার ফি, উন্নয়ন ফির নাম দিয়ে পকেট ভারীতে ব্যস্ত থাকেন শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদানে দিন দিন অমনোযোগী হয়ে পড়ছেন সরকারী শিক্ষকরা। তাই সচেতন অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের টাকা খরচ করেও বেসরকারী কিন্ডার গার্টেনের দিকে ঝুঁকছেন। এসব সরকারী বিদ্যালয়গুলোতে বছরের বিভিন্ন সময় সরকারি টাকারও নয়ছয় হয়। এসব কাজে ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকরা দুর্ণীতিতে জড়িয়ে পড়েন। মূলত প্রাথমিক শিক্ষায় বাণিজ্য তৈরী হওয়ায় বিনামূল্যের প্রাথমিক শিক্ষা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
ধনুয়া এলাকার আহাম্মদ আলী নামের একজন অভিভাবক জানান, তাঁর বাড়ির পাশেই রয়েছে ধনুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কিন্তু এখানে লেখাপড়া হয় না। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে। তাই তার চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া ছেলেকে মাওনা চৌরাস্তার শাহীন ক্যাডেট একাডেমিতে ভর্তি করেছেন। এতে তাঁর খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা।
মুলাইদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুকুল সরকারের মতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে তিনি কোচিং করান। তবে বৈধ কি অবৈধ এ বিষয়ে তিনি বলতে পারবেন না। তবে সবকিছুই পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত মতেই হচ্ছে।
মাওনা ১নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক খান জানান, বিদ্যালয়ে কোনোকিছু এককভাবে করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তও উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আর একটি বিদ্যালয় পরিচালনা করতে অনেক খরচ হয় এজন্য বাড়তি টাকার প্রয়োজন কিন্তু সরকার হতে সবসময় তা পাওয়া যায় না।
শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সিদ্দিকুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল অবস্থার কথা অস্বীকার করে জানান, সরকারের নিয়ম মোতাবেক প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালিত হচ্ছে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানে কোচিং, নোট-গাইড বইয়ের ব্যবহার আছে তা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)