শ্যামনগরে তিন বছর যাবৎ বিছানায় পড়ে আছে যুবক

মিয়ারাজ হোসেন (২৬)। পেশায় ছিলেন ভ্যান চালক। বিয়ে করেছেন। সংসারে এসেছে ফুটফুটে এক ছেলে। এমন সময় বিদেশে যেয়ে ভাল ইনকামের আশ্বাস দেন স্থানীয় দালাল মহাতাব গাজী। দালালের মধুর কথা বিশ্বাস করে মিয়ারাজ। ছেলে ও পরিবারের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে বিদেশে যাওয়ার জন্য ৪ বছর আগে অতিকষ্টে উপার্জিত তিন লক্ষ টাকা উঠিয়ে দেয় দালালের হাতে। এরপর কেটে যায় ৬টি মাস। তারপরও ভিসার ব্যবস্থা করিনি দালাল।
ছয় মাস পর জানতে পারে বিদেশে যাওয়ার টাকা গায়েব করে দিয়েছে দালাল মহাতাব গাজী। এরপর বারবার ধরনা দিয়েও মেলে না টাকা। কেটে যায় আরো একটটি বছর। এরপর টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে মিয়ারাজের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয় দালাল মাহতাবের।
হটাৎ একদিন সন্ধ্যায় শ্যামনগরের সোনার মোড় এলাকায় মিয়ারেজের উপর হামলা করে মাতাবের বাড়াটে সন্ত্রাসী মাহমুদপুর এলাকার ইব্রাহিম, জামাল, মোকছেদ ও সুমন সাহা সহ ৪-৫ জন। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয় মিয়ারাজের বাম কানে। মিয়ারাজ অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। এরপর স্থানীয়রা স্থানীয়রা ঘটনা স্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্যামনগর উপজেলা কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সেখান থেকে সাতক্ষীরা সদরে এবং পরবর্তীতে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর হতে আর চলতে পারে না মিয়ারাজ। ডান পাশের সম্পুর্ণ সাইড অচল হয়ে গেছে। ছেলে আবু ইছাকে নিয়ে দুই বছর আগে বাবার বাড়ীতে চলে গেছে স্ত্রী আছমা খাতুন। এখন বাড়িতে শুয়ে শুয়ে অতিকষ্টে দিন কাটছে মিয়ারাজের। তাকে দেখভাল করছে বৃদ্ধ বাবা-মা। তিন বছর যাবৎ ছেলের চিকিৎসার পিছনে নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করে দিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন বাবা রশিদ গাজী।
মিয়ারাজ শ্যামনগরের মাহমুদপুর গ্রামের অসহায় পিতা আব্দুর রশিদ গাজী একমাত্র ছেলে।
বারান্দার বিছানায় শুয়ে শুয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মিয়ারাজ বলেন, তিন বছর যাবৎ বিছানায় পড়ে আছি। খুব হাটতে চলতে ইচ্ছে করে। কুব কষ্ট হয়। এ বয়সে যখন বাবা মা আমার উপর নির্ভর করবে ঠিক তখনই আমি তাদের উপর নির্ভর করে কোন রকমে বেঁচে আছি। আমার যদি কোন ভাই-বোন থাকতো তাহলে আমার কোন দুঃখ থাকতো না। কিন্তু আমিতো একা। আমার বাবা মা অচল হয়ে গেলে তাদেরকে কে দেখবে? আমি বড়ই হতভাগা।
মিয়ারাজের বাবা আব্দুর রশিদ গাজী আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে ওরা চিরজীবনের জন্য অচল করে দিয়েছে। ডাক্তার বলেছে চিকিৎসা করাতে পারলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। তবে চিকিৎসার জন্য এক লক্ষ টাকা লাগবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার। কিন্তু এতো টাকা আমি কোথায় পাবো?
মিয়ারাজের চিকিৎসা করালে সে ঠিক হয়ে যাবে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো ও মেডিসিন সার্জন ডাঃ তারেকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কানের নিচে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের কারণে তার এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে গেছে। তাকে অপারেশন করা হলে ইনশাআল্লাহ্‌ সে সুস্থ হয়ে যাবে। অপারেশনের জন্য এক লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, ব্যাপারটি আমার জানা নেই। তবে খোজ নিয়ে দেখছি। আমাদের সাধ্যমতো অবশ্যই তাকে সাহায্য করা হবে।
ছেলের চিকিৎসা খরচের জন্য সহৃদয়বান মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন মিয়ারাজের বাবা রশিদ গাজী।
যোগাযোগ: মোবাইল ও বিকাশ নম্বর (০১৯২৮-০৩২৬২৪)।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)