শ্যামনগরের ঘোলায় সহকারী শিক্ষক হয়েও প্রধান শিক্ষকের আসনে ইলিয়াস

শ্যামনগর উপজেলার ঘোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইলিয়াস হোসেনের দীর্ঘদিনের প্রতারণার ছক ফাঁস হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই তাকে প্রধান শিক্ষকের আসন থেকে সহকারী শিক্ষকের আসনে অধিস্থিত করেছে শিক্ষা অফিস।

জানা যায়, ২০০৫ সালে তৎকালীন সময়ে উক্ত বিদ্যালয়টি বেসরকারি ছিলো। সেই সময়ে শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সুবাদে স্থানীয় রাজনৈতিক মদদদাতাদের কে ম্যানেজ করে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন ইলিয়াস। এরপর পরই রাজনৈতিক ক্ষমতা কে কাজে লাগিয়ে সহকারী শিক্ষকের পদে থেকেও প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করা সহ নিজেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে জাহির করেন।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক থেকে শুরু করে অফিসিয়াল সব জায়গার কাগজ কলমে নিজের নামযুক্ত প্রধান শিক্ষকের সীলমোহর ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছে ইলিয়াস। কিন্তু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সার্ভিস বুকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ইলিয়াস হোসেন নিয়োগ প্রাপ্ত হয় বলে তথ্য পাওয়া যায়।

সম্প্রতি জেলা শিক্ষা অফিসার কর্তৃক প্রধান শিক্ষকদের পদ পদায়ন করে চলতি দায়িত্ব দিয়ে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের এই প্রতারণা ফাঁস হয়ে যায়।

ইলিয়াস প্রধান শিক্ষক থাকা কালীন নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন খুব ভাল ভাবে। প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে তিনি সুদর্শন এবং শৌখিন ডিজাইনের বাড়ি বানিয়েছেন। পুকুরে পাকা সিঁড়ি দেওয়া সহ জমি ক্রয়করা এবং ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার বিভিন্ন হিসেবে টাকা জমা রেখেছেন। যা সত্যিই তার চাওয়ার বেশী পেয়েছেন!!!

স্কুলের কতিপয় সিলিপের সমুদয় টাকাটা নিজেই হজম করেছেন বলে অভিযোগ আছে। নামমাত্র জিনিস ক্রয় করে তা সংশ্লিষ্টদের দেখিয়েছেন। দীর্ঘদিনে সহকারী শিক্ষক হিসেবে খাতা কলমে নাম থাকা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রতারণার ফলে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন খাত থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে ওই বিদ্যালয়ে যোগদান করতে গেলে ওই শিক্ষক কে শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে দেয়নি ইলিয়াস হোসেন। কোন ক্ষমতার জোরে ইলিয়াস হোসেন নিজেকে সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজেকে প্রধান শিক্ষকের পদ দাবি করেন?

এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক ইলিয়াস তরফদার বলেন, আমি এখানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে কর্মরত আছি। আমার বিরুদ্ধে যেগুলো বলা হচ্ছে তা সমপূর্ণ মিথ্যা। আমাদের প্রতিপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে এসব মনগড়া তথ্য প্রচার করছে।

এদিকে ইলিয়াস সহ শ্যামনগর উপজেলার আরও কয়েকজন সহকারী শিক্ষক নিজেদের খোলস বদলিয়ে প্রধান শিক্ষকের লেভেল লাগানোর জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার সহ শিক্ষা বিভাগের সাথে জড়িত কয়েকজন কে ম্যানেজ করে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশন দায়ের করেছে বলে জানা যায়। সহকারী শিক্ষকগনকে প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব প্রদান করে গত ১০ জুন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রুহুল আমীন সাক্ষরিত একটি অফিস আদেশ প্রকাশ করে।

এদিকে গত ০৬/০৬/২০১৮ তারিখে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপসচিব মনোয়ারা ইশরাত সাক্ষরিত ৩৮.০০.০০০০.০০৮.১২.০৩২.১৮-৫৪৮ নং স্মারকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকগনকে একই উপজেলাধীন সবচেয়ে নিকটবর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে পদায়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদানের কথা বলা হলেও বাস্তবে তার উল্টাে চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

১৩ নং হায়বাতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা লিপি লেখা কুন্ডু কে ১১৯ নং কাঁঠালবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং ১০ নং গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছাঃ সাজেদা খাতুন কে ৫৭ নং জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করার অফিস আদেশ দেয়। কিন্তু উপরিউল্লেখিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে একই উপজেলাধীন সবচেয়ে নিকটবর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করতে হবে। এদিকে শ্যামনগর উপজেলার ১১টি নব্য জাতীয়করনকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি বাদে ১০ টিতে চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এরমধ্যে ১২২ নং খোলপেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত কোন শিক্ষক কে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ উঠেছে শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং জেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাগন যোগসাজশে ঘুস দূর্নীতির মাধ্যমে এই বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষক নিয়োগ দেয়নি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল বাসার বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই। বিষয়টি সম্পর্কে আমি খোজ খবর নিচ্ছি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)