শেষ মুহূর্তে জাপানের স্বপ্ন ভেঙে কোয়ার্টারে বেলজিয়াম

পুরো ম্যাচের সমস্ত নাটকীয়তা সম্ভবত শেষ কয়েক সেকেন্ডের জন্যই জমিয়ে রেখেছিল বেলজিয়াম আর জাপান ম্যাচ। না হয়, ২-০ গোলে এগিয়ে থাকার পরও কেউ এভাবে হেরে যায়? ২-০ গোলে এগিয়ে থাকার পর ২-২ গোলে সমতা। ম্যাচ গড়াচ্ছিল অতিরিক্ত সময়ে; কিন্তু খেলার মাত্র ৩০ সেকেন্ড বাকি থাকতেই বিদ্যুৎ গতির এক কাউন্টার অ্যাটাকে জাপানের জালে তৃতীয়বারের মতো বল জড়িয়ে দিল বেলজিয়াম।

ফলে একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে জাপানের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন কেড়ে নিল বেলজিয়াম। শেষ মুহূর্তের ওই গোলেই ৩-২ ব্যবধানে জাপানকে হারিয়ে শেষ আটে নাম লেখালো বেলজিয়াম। কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের প্রতিপক্ষ ব্রাজিল।

জাপান দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল ভাগ্যের জোরে। সেনেগালের চেয়ে ২টি ফাউল কম করার কারণে। দ্বিতীয় রাউন্ডেই মুখোমুখি হলো বেলজিয়ামের। এই ম্যাচে এসে জাপান নিজেদের পুরোপুরি মেলে ধরলো। বেলজিয়ামের বিপক্ষে এতটা মেলে না ধরলে হয়তো এমন আক্ষেপও জন্ম নিত না। কিন্তু ২ গোল দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরও ৩-২ গোলে হেরে যাওয়ার বেদনায় নীল পুরো জাপান।

দেশটির ডাক নাম ব্লু সামুরাই। সেই ডাক নামের সঙ্গে মিশে গেল বেদনার নিল রং। একেবারে শেষ মুহূর্তের এমন অসাধারণ গোলে বিদায় নিতে হলো জাপানকে।

প্রথমার্ধে তো বেলজিয়ামকে ঠেকিয়ে রাখার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই শক্তিশালী বেলজিয়ামের জালে দু’বার বল জড়িয়ে দেয় এশিয়ার প্রতিনিধি জাপান। কিন্তু খুব দ্রুত দুটি গোল শোধ করে দেয় বেলজিয়াম। ৬৯ এবং ৭৪ মিনিটে অসাধারণ দক্ষতায় গোল দুটি শোধ করে বেলজিয়াম এখনও টিকে আছে বিশ্বকাপে। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ২-২ গোলে ড্র, ফলে খেলা গড়াল অতিরিক্ত আরও ৩০ মিনিটে।

ম্যাচের ৪৮তম মিনিটেই জেনকি হারাগুচির অসাধারণ এক গোলে এগিয়ে যায় ব্লু সামুরাইরা। এরপর ম্যাচের ৫২ মিনিটে দ্বিতীয় অবিশ্বাস্য এক গোল করেন তাকাশি। দারুণ এক কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গোলটি বের করে আনলো জাপানিরা। নিজেদের বক্সের সামনে বল কেড়ে নেন শিবাসাকি। তিনি লম্বা পাস দিলে ভারটোঙ্গেন সেই বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন এবং বল পেয়ে যান হারাগুচি। ডান প্রান্ত থেকে কোনাকুনি শটে বল বেলজিয়ামের জালে জড়িয়ে দেন তিনি।

প্রথম গোল দেয়ার পর চার মিনিট যেতে না যেতে আরও একবার বেলজিয়ামের জালে বল জড়িয়ে দেন জাপানের স্ট্রাইকার তাকাশি ইনুই। মিডফিল্ডার শিনজি কাগাওয়া বেলজিয়ানদের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন। এরপর ব্যাক পাসে বল দেন ইনুইকে। ডি বক্সের সামনে থেকে ডান পায়ের দুর্দান্ত এক শট নেন ইনুই। ঝাঁপিয়ে পড়েও সেই বলের নাগাল পেলেন না বেলজিয়াম গোলরক্ষক কুর্তোস। জড়িয়ে গেলো বেলজিয়ামের জালে। অবিশ্বাস্য এবং অসাধারণ এক গোল।

খেলার ৬৯ মিনিটে এক দর্শনীয় হেডে বেলজিয়ামের হয়ে একটি গোল শোধ করে দেন। কর্নার কিক থেকে ভেসে আসা বলটি প্রথমে পাঞ্চ করে ফিরিয়ে দেন জাপান গোলরক্ষক। কিন্তু সেই বলটিই ২০.৩৪ গজ দূর থেকে হেড করেন ভার্টোঙ্গেন। সেটিই ডান প্রান্তের পোস্ট ঘেঁষে জড়িয়ে যায় জাপানের জালে। গোলরক্ষক কাওয়সিমা শেষ মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়েও পারলেন না রক্ষা করতে।

ম্যাচের ৭৪ মিনিটে আবারও হেড। ইডেন হ্যাজার্ডের অসাধারণ একটি ক্রস। জাপানের এক ডিফেন্ডারকে বার কয়েক ডজ দিয়ে বাম পায়ের ক্রসটি নেন হ্যাজার্ড। গোলমুখে লাফিয়ে উঠে তাতে মাথা ছোঁয়ান ফেল্লাইনি। সেটিই জড়িয়ে যায় জাপানের জালে। ২-২ সমতায় চলে আসে ম্যাচ।

এরপর খেলা যখন ইনজুরি সময়ে চলে যায় এবং শেষ বাঁশি বাজানোর জন্য আর মাত্র ৩০ সেকেন্ড বাকি, তখন জাপানের একটি আক্রমণ থেকে বল ধরে ফেলেন বেলজিয়াম গোলরক্ষক থিবাত কুর্তোস। তিনি বলটি ধরেই মাঝ মাঠ বরাবর পাস দিয়ে দেন কুর্তোস। বল নিয়ে ছুটে আসেন কেভিন ডি ব্রুয়েন।

তিনি বল নিয়ে ছুটে এসে ডান উইংয়ে পাস দেন থমাস মিউনারের কাছে। তিনি ডান প্রান্ত থেকে পাস দিয়ে দেন বাম প্রান্তে। বলটা ছিল রোমেলু লুকাকুর কাছে। কিন্তু তিনি জাপান ডিফেন্ডারদের বিভ্রান্ত করে শট না নিয়ে পা তুলে রাখেন। অসাধারণ এক ডামি। বল পেয়ে যায় ন্যাসের চ্যাডলি। এক শটেই তিনি বল জড়িয়ে দেন জাপানের জালে। এরপরই শেষের বাঁশি বাজিয়ে দেন রেফারি।

অথচ প্রথমার্ধের খেলায় একের পর এক আক্রমণেও কোনো ফল বের করে আনতে পারেনি শক্তিশালী বেলজিয়াম। অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ, এশিয়ান দেশ জাপান প্রথমার্ধে ঠেকিয়ে রাখে বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট বেলজিয়ামকে।

রোস্তভ এরেনায় দ্বিতীয় রাউন্ডের ছয় নম্বর ম্যাচে মুখোমুখি হয় বেলজিয়াম এবং জাপান। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে দু’দলের ব্যবধান ৫৭। বেলজিয়ামের ৩ এবং জাপানের ৬০। তবে মাঠের খেলায় এই ব্যবধান খুব একটা বুঝতে দেননি জাপান ফুটবলাররা।

স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের অধিকাংশই ছিল বেলজিয়ামের দখলে। ৫৭ ভাগ ছিল বেলজিকদের এবং ৪৩ ভাগ ছিল জাপানের দখলে। দ্বিতীয়ার্ধেই পুরো বদলে গেলো জাপান এবং চার মিনিটের ব্যবধানে দু’বার বল জড়িয়ে দিল বেলজিয়ামের জালে।

বেলজিয়ামের প্রথম গোলের আগে ইডেন হ্যাজার্ড সুযোগ পেয়েছিলেন গোলের। কিন্তু তার দুর্দান্ত শট ফিরে আসে সাইড পোস্টে লেগে। তৃতীয় গোল দেয়ার আগে মিউনার একটি হেড অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় ঠেকিয়ে দেন জাপান গোলরক্ষক কাওয়াসিমা। এরপরই রোমেলু লুকাকুর অসাধারণ একটি হেড করলে সেটি ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেন জাপান গোলরক্ষক।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)