শিবির ক্যাডার হওয়ার সুযোগে জোট সরকারের আমলে চাকুরী হয় মনিরুল ইসলামের

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় শ্যামনগর কেন্দ্রের মেধাবী দুই নারী শিক্ষার্থীর প্রতি চরম হয়রানীমুলক আচারণকারী কলেজ শিক্ষক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্তপুর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। একইসাথে পরবর্তী পরীক্ষাসমুহে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি প্রদান এবং সরকারি চাকুরীজীবী হয়েও গোপনে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠেছে তাও খতিয়ে দেখার দাবি তুলেছে স্থানীয়রা।
উল্লেখ্য গত ১৪ এপ্রিল শনিবার শ্যামনগর সরকারি মহসীন কলেজ কেন্দ্রে পদার্থ বিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে শাররীকভাবে এক অসুস্থ ছাত্রীসহ কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী দুই নারী শিক্ষার্থীর সাথে তিনি হয়রানীমুলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পুর্ব বিরোধের সুত্র ধরে পরীক্ষা শুরুর পর থেকে কারণে অকারণে তিনি ওই দুই শিক্ষার্থীর প্রতি চরম দুর্ব্যবহার করেন এবং বেঞ্চের বাইরে হাত চলে আসার অজুহাতে ধাক্কা দিয়ে হাত ভিতরে দেয়ার চেষ্টা করেন।
এক পর্যায়ে তিনি পরীক্ষা চলাকালীন তিন ঘণ্টা সময়ের পুরোটা সময়জুড়ে ওই দুই শিক্ষার্থীর পাশে অবস্থান নিয়ে দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। যদিও ওই কক্ষে সেদিন প্রায় চল্লিশ জন পরীক্ষার্থীর জন্য তিনিসহ মাত্র দুই জন কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্বে ছিলেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদ্বয়ের অভিভাবকগন বিষয়টি তাৎক্ষনিক ভাবে কেন্দ্র সচিব, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, হল সুপার এবং সহকারী হল সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করলে ‘বিয়টি দেখা হবে’ বলে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেন। তবে ঘটনার পর চব্বিশ ঘণ্টা পার হলেও রোববার বিকাল পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের তথ্য মেলেনি।
মোঃ আব্দুল খালেক নামের এক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা যাতে অসদুপায় অবলম্বন না করে তা দেখার দায়িত্ব শিক্ষকের। কিন্তু যে শিক্ষক অসুস্থ ছাত্রীকে পদার্থ বিজ্ঞানের মত বিষয়ে পরীক্ষা দেয়ার সময় পুর্ব বিরোধের জেরে হয়রানী করেছে তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।
সালমা ইসলাম ও রাবেয়া খাতুন নামের দুই অভিভাবিকা অভিযোগ করে বলেন চল্লিশ জনের জন্য একটি কক্ষে দুই শিক্ষক দায়িত্বে থাকার পর এমন কি ঘটলো যে মাত্র একজন শিক্ষক পুরোটা সময়জুড়ে মাত্র দুই জন পরীক্ষার্থীর পাশে দাড়িয়ে থাকলো। বিষয়টির তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটনসহ দোষীর শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপনের দাবি জানান ওই দুই নারী অভিভাবিকা।
এদিকে হয়রানীর শিকার দুই পরীক্ষার্থীর অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, পুর্ব বিরোধের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তাদের ফলাফল খারাপ করতে ওই শিক্ষক পরীক্ষা কেন্দ্রে শুধুমাত্র ওই দুই পরীক্ষার্থীর সাথে এমন কান্ড ঘটিয়েছেন। তিনি অতি সত্ত্বর পুরো ঘটনার তদন্তপুর্বক প্রকৃত অপরাধ সনাক্তসহ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষকদের প্রতি পরীক্ষার্থীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
এদিকে এসএসসি’তে জিপিএ পাঁচ পাওয়া ওই দুই পরীক্ষার্থীর সাথে এমন নাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে যে মনিরুল ইসলাম, তার বিষয়ে খোঁজ নিতে যেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে সাতক্ষীরা জেলার খলিশখালী গ্রামের সুরাত আলী গাজীর তিন মেয়ের সাথে একমাত্র ছেলে মনিরুল ইসলাম। খুলনা আযম খান কমার্স কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সম্মান শ্রেণির পর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।
জানা গেছে আযম খান কমার্স কলেজে লেখাপড়ার শুরু থেকে তিনি জামায়াত দলীয় ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্র শিবির’র সাথে জড়িয়ে পড়েন। এসময় স্বাধীনতা বিরোধী ওই রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের অত্যন্ত আস্থাভাজন কর্মী ছিলেন তিনি। সম্মান শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নকালীন সময়ে তিনি পর পর দুইবার বিএনপি ও আওয়ামীলীগ দলীয় ছাত্র সংগঠনের দুই কর্মীকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ‘গুড লিস্টে’ জায়গা করে নেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর কমার্স কলেজে অধ্যায়নকালীন সময়ে ‘ছাত্র শিবিরি’র সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করার পুরস্কার হিসেবে শ্যামনগর মহসীন ডিগ্রি কলেজে নিয়োগ লাভ করেন।
জানা গেছে তৎকালীন সময়ে শ্যামনগর সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন জামায়াত দলীয় সংসদ সদস্য। এসময় কেন্দ্র এবং আঞ্চলিক জামায়াত নেতাসহ ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাদের সুপারিশে পাতানো নিয়োগ পরীক্ষায় মনিরুল ইসলামকে প্রথম দেখিয়ে নিয়োগের জন্য মনোনীত করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে এসময় ইংরেজিসহ মোট চারটি বিষয়ে চারজন প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয়। অনেক নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে আসা প্রার্থীদের ডিঙিয়ে নির্লজ্জ দলীয়করণের সুযোগে সেসময় মনিরুল ইসলামের মত ব্যক্তিকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ছাত্রবস্থা থেকে জামায়াত ইসলামের রাজনীতির সাথে সক্রিয় মনিরুল ইসলাম কলেজে যোগদানের পরও তার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখেন। এক পর্যায়ে ২০০৭ সালে পট পরিবর্তনের পর থেকে মনিরুল ইসলাম খোলস বদলে পুরোদস্তুর সাধারণ মানুষ বনে যায়। তবে এসময় তার বিরুদ্ধে জামায়াত ইসলামের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তিনি অর্থনৈতিকভাবে অংশগ্রহণ করতেন বলে অভিযোগ উঠলেও চতুর মনিরুল ইসলাম কৌশলে তা উতরে যেতে সক্ষম হন।
পরবর্তীতে ২০১২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় শ্যামনগর মসহীন কলেজ জাতীয়করণ হলে মনিরুল ইসলাম আরও সতর্ক হয়ে যায়। তবে অভিযোগ রয়েছে তার কলেজ জাতীয়করণের সুবাদে তিনি সরকারি চাকুরীজীবী হয়ে গেলেও গোপনে জামায়াত ইসলাম এর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন অব্যাহত রাখেন। যার প্রেক্ষিতে কয়েক মাস পূর্বে একটি নাশকতার মামলায় জড়িত হওয়ার প্রচেষ্টাও কৌশলে উতরে যেতে সক্ষম হন সাবেক ছাত্র শিবিরের এ নেতা।
উল্লেখ্য মনিরুল ইসলাম ইতিপুর্বে শ্যামনগর সরকারি মসহীন কলেজ কেন্দ্রে সম্মান শ্রেণির পরীক্ষা চলাকালে একইভাবে অপর পরীক্ষার্থীকে হয়রানী করায় লাঞ্ছিতের শিকার হন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে মনিরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি খলিশখালী এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অনেকে জানান তার পরিবার জামায়াত সমর্থক। স্থানীয় ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ ওসমান গনি জানান সরাসরি কোন রাজনীতি করে বলে তার জানা নেই। তবে মনিরুল ইসলাম বাইরে পড়ালেখার পরপরই চাকুরী নিয়ে শ্যামনগরে চলে যান যেকারণে তিনি সরাসরি কোন দলের সাথে জড়িত কিনা নিশ্চিত করে বলতে পারবোনা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান তার পিতা ছুরাত আলী অতি ভাল মানুষ। কয়েক বছর পুর্বে তিনি শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরে গেছেন। তবে মনিরুল ইসলামসহ তাদের পরিবার জামায়াত সমর্থক। মনিরুল বাইরে লেখাপড়া করার সময় থেকে শিবিরের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং সেই সুবাদে শ্যামনগরে জামায়াত দলীয় সাংসদের হাত দিয়ে চাকুরী পেয়েছেন- এমন তথ্য তারাও শুনেছিলেন বলেও দাবি করেন।
এদিকে অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জামায়াত বিএনপি আমলে চাকুরী পেলেও মেধার ভিত্তিতে পেয়েছেন বলে দাবি করেন। একইসাথে তিনি বলেন জামায়াতের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তিনি অর্থায়ন করে এমন প্রমাণ নেই। তবে পরীক্ষার কক্ষে দুই নারী পরীক্ষার্থীর সাথে তার মৃদু খারাপ আচরণ করার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, তারা পরিবেশ নষ্ট করছিল।
আব্দুস সালাম, আশুতোষ রায়সহ কয়েক জন অভিভাবক দাবি করেছে অবিলম্বে মনিরুল ইসলামের ছাত্রাবস্থা এবং চাকুরীকালীন সময়সহ সর্বশেষ ঘটনার বিষয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্তপুবর্ক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)