লিটনের নির্বাচনী ইশতেহার আজ, বুলবুলের বিলম্ব

প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই আজ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক প্রচারকাজ শুরু করবেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ইশতেহার ঘোষণা করেই নির্বাচনী প্রচারকাজে নামতে চান আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে লিটন ঘোষণা করবেন তাঁর ইশতেহার। মেয়র নির্বাচিত হলে আগামী পাঁচ বছর রাজশাহী মহানগরীর মানুষের জন্য কী কী করতে চান, তার বিস্তারিত বর্ণনা থাকবে লিটনের ইশতেহারে।

এদিকে, বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এখনো নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ শেষ করতে পারেননি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ করছেন বলে জানা গেছে। ১৪ জুলাইয়ের পর ইশতেহার ঘোষণা করতে চান বুলবুল। তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে কথার ফুলঝুরির পরিবর্তে বাস্তবায়নযোগ্য উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি থাকবে বলে জানা গেছে।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল তৃতীয়বারের মতো মেয়র পদে একে অপরের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। প্রথম তাঁরা মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ২০০৮ সালের সিটি নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে খায়রুজ্জামান লিটন ২৩ দফা নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছিলেন। মেয়র নির্বাচিত হয়ে সেই ইশতেহারের প্রায় সব কাজই করেন তিনি। এরপর ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে লিটন ৩৭ দফা ইশতেহার প্রকাশ করেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে পরাজিত হন তিনি।

অন্যদিকে, ২০১৩ সালের নির্বাচনে ২০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সেই ইশতেহারের সামান্যই বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন বলে মনে করেন নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে তা মানতে নারাজ বুলবুল। নির্বাচনী ইশতেহারের ৮০ শতাংশ বাস্তবায়নের দাবি করে বুলবুল বলেন, ‘পাঁচ বছরের মধ্যে আমি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র ২২ মাস। এরপরও এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচনী ওয়াদার ৮০ শতাংশ পূরণ করেছি আমি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা না থাকলে সব প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো।’ তবে বুলবুলের মেয়াদকালে ভাঙা রাস্তাঘাট, যানজট ও ময়লা আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয় রাজশাহী নগরী। এ অবস্থায় এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে কী কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া যায়, এখনো তা-ই চূড়ান্ত করতে পারেননি বুলবুল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের ইশতেহার এখনো প্রস্তুত হয়নি। এ নিয়ে এখন কথা বলতে চাই না। শুধু প্রতিশ্রুতি দিলেই তো হবে না, বাস্তবায়ন করতে হবে। সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে ১৪ জুলাইয়ের পর আমি আমার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করব।’

এবারের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘বর্তমান নগরীর পরিসর ৭৫ বর্গকিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে অন্তত ৩৫০ বর্গকিলোমিটার করতে চাই। রাজশাহী মহানগর পুলিশের নতুন ১২টি থানা এলাকা নিয়ে আমরা সিটি করপোরেশনের নতুন এলাকা ঘোষণা করতে চাই। তাহলে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করা সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা নির্মাণ, বড় বড় রাস্তা, লেক, খেলার মাঠ, দর্শনীয় স্থান, বিনোদনমূলক জায়গা, সাংস্কৃতিক এলাকা, সবকিছু মিলিয়ে একটি চমৎকার শহর গড়ে তুলতে চাই। রাজশাহীকে সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুরের মতো এশিয়ার মধ্যে একটি অন্যতম বসবাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই আমি।’

এ প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার বলেন, ‘আমাদের মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহারে পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণ, ক্রিকেট ভেন্যু স্থাপন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, হার্ট ফাউন্ডেশন স্থাপনসহ এক লাখ বেকারের কর্মসংস্থানসহ নানা বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হবে।’

তবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির মেয়র প্রার্থী দেখে কিংবা নির্বাচনে ইশতেহারে কথার ফুলঝুরি শুনে নয়, যিনি জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন, তাঁকেই মেয়র নির্বাচিত করতে চান এবার রাজশাহী নগরীর মানুষ। ভোটাররা জানান, দেখে, শুনে, বুঝে যোগ্য প্রার্থীকেই এবার ভোট দিয়ে নগরপিতা বানাবেন তাঁরা।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গতকাল সোমবার ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। আজ সকালে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করবেন প্রার্থীরা। ৩০ জুলাই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)