রশিদ জুজুতে পর্যুদস্ত বাংলাদেশ

গ্রুপ সেরা হওয়ার লড়াইয়ে টস জিতে আফগানিস্তান ২৫৫ রানের সংগ্রহ গড়ে। ২৫৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে ‘বি’ গ্রুপে আজ আবুধাবি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ম্যাচটি নিয়মরক্ষার হলেও, সুপার ফোরে দুই দলের জন্যই এটি ছিল জয়ের মোমেন্টাম ধরে রাখার মিশন। আর তাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিল ব্যাটসম্যানরা। শেষ পর্যন্ত হেরেছে ১৩৬ রানের বড় ব্যবধানে। কয়েক আগে টি-টুয়েন্টি সিরিজে ধবল ধোলাইয়ের পর এবারো রশিদ জুজু কাটাতে ব্যর্থ হল বাংলাদেশ।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা মানেই বাংলাদেশের সামনে বড় পরিক্ষা রশিদ খান। কিছুদিন আগে লেগ স্পিনার রশিদ খানের সামনে নাস্তানাবুদ হয়েছে বাংলাদেশ। এবারো সেই রশিদ। তবে শুধু বোলার রশিদ নয়, অলরাউন্ডার রশিদের কাছেই বিশাল ব্যবধানে হারলো মাশরাফিরা।

আফগানিস্তান অধিনায়ক আসগর আফগান টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। মুস্তাফিজুর রহমানের বদলি হিসেবে অভিষিক্ত বোলার আবু হায়দার রনি শুরুতেই দলকে সাফল্য এনে দেন। ২৮ রানে শুরুতেই দুই উইকেট হারানোর পর কিছুটা চাপে পড়ে আফগানিস্তান।

শাহিদিকে সঙ্গে নিয়ে এরপরেই প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন মোহাম্মাদ শাহজাদ। তাদের ৫১ রানের জুটি ভাঙেন অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। বেশ অনেক সময় ধরেই উইকেট ভাঙার চেষ্টা করেন বাংলাদেশি বোলাররা। কিন্তু উইকেট তুলতে না পারলেও রানের চাকা খুব একটা সচল করতে দেয়নি টাইগার বোলাররা। আর একারণেই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন মোহাম্মাদ শাহজাদ। পরপর দুই ওভারে অল্পের জন্য বেঁচে যান শাহজাদ। এরপরেই আক্রমণে আসেন সাকিব আল হাসান। তার করা ওভারের তৃতীয় বলেই আক্রমণ করলে বাউন্ডারি লাইনের কাছাকাছি দারুণ একটি ক্যাচ ধরেন আবু হায়দার রনি।

নিজের করা দ্বিতীয় ওভারে অধিনায়ক আসগর আফগানকে সরাসরি বোল্ড করে আবারো চাপ তৈরি করেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ১০১ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন শাহিদি ও সামিউল্লাহ শেনওয়ারি। তাদের ৩৮ রানের জুটি ভাঙেন আবারো সেই সাকিব। শেনওয়ারিকে সরাসরি বোল্ড করে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেন তিনি। ফলে ১৩৯ রানে ৫ উইকেট হারায় আফগান। অনেকক্ষন ধরে লড়তে থাকা শাহিদিকে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের তালুবন্দি করেন পেসার রুবেল হোসেন। এরপর মোহাম্মদ নবিকেও ফেরান সাকিব। ফলে ১৬০ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে আফগান।

এরপর আর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশি পেসাররা। ডেথ ওভারে বরাবরের মতো আবারো ব্যর্থতার পরিচয় দেন রুবেল-মাশরাফিরা। তার করা ষষ্ঠ ওভারে ১৭ রান তোলেন নায়েব ও রশিদ খান। এছাড়া নিজের করা শেষ দুই ওভারে অধিনায়ক মাশরাফিও খরচ করেন ৩২ রান। অষ্টম উইকেট জুটিতে এই দুই ব্যাটসম্যান ঝড়ো গতিতে রান তুলতে থাকেন। রশিদ খান ৩২ বলে ৫৭ রানের টর্নেডো খেলে জন্মদিনকে স্মরণীয় করেই রাখলেন। অপরদিকে নায়েব ৪২ বলে ৩৮ রান করেন। আফগানিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেন শাহিদি।

বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব আল হাসান সর্বোচ্চ ৪ উইকেট দখল করেন।

২৫৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধ্বস নামে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে। অভিষিক্ত শান্ত দলীয় ১৫ রানে মুজিব জাদরানের শিকার হন। এরপরের ওভারেই আফতাব আলমের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হন লিটন দাস।

প্রাথমিক চাপ সামলে উঠে আসার চেষ্টা করেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও তিন বছর পর ওয়ানডে দলে সুযোগ পাওয়া মমিনুল। তবে বেশিক্ষন থাকতে পারেননি। দলীয় ৩৯ রানে নায়েব ফিরিয়ে দেন মমিনুলকেও। উইকেটরক্ষকের কাছে ক্যাচ দিয়ে মমিনুল ফেরেন ব্যক্তিগত ৯ রানে। ফিরতি ওভারে মিথুনকে সরাসরি বোল্ড করেন নায়েব। ফলে দলীয় ৪৩ রানেই চার উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে বাংলাদেশ।

এরপর মুলত ম্যাচটি সাকিব ও রিয়াদের উপরেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কিন্তু তেমন কিছু করতে পারেননি। দলীয় ৭৯ রানের রশিদের গুগলির শিকার হয়ে ফিরে যান সাকিব। অতঃপর শুধু অপেক্ষা পরাজয়ের ব্যবধান কমানো। ৯০ রানে মাথায় ব্যক্তিগত ২৭ রানে রশিদের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন রিয়াদ। শেষ পর্যন্ত ১১৯ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। ফলে আফগান জুজু এবারো কাটাতে পারলো না বাংলাদেশ।

আফগানিস্তানের পক্ষে মুজিব, নায়েব ও রশিদ প্রত্যেকে দুই উইকেট করে দখল করেন।

আজ দুবাইয়ে সুপার ফোরে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)