রনিকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি

ডেস্ক রিপোর্ট:
সংগঠন থেকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২০ লাখ টাকা না পেলে চট্টগ্রামে ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদ মিয়াকে মেরে ফেলার হুমকি দেন রনি। এরপর রাশেদকে দুই দফায় মারধর করেন তিনি। এর একটির সিসিটিভি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় মারধরের সময় ৩৫ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট জমা দিয়ে প্রাণে বাঁচেন রাশেদ।
এই খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজেই সংগঠন থেকে অব্যাহতি চান রনি। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর হাতে লেখা অব্যাহতিপত্র পাঠান তিনি। এরপর রাতে তাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে যেসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে, তাতে মনে হয়েছে রনি অপরাধী। এ জন্য তাকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনিসহ দুইজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত সাত-আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন রাশেদ।
মামলার এজাহারে নির্যাতিত রাশেদ মিয়া বলেন, ‘২০ লাখ টাকা না পেলে আমাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয় রনি। একপর্যায়ে অনেক বুঝিয়ে বাসা থেকে ৪০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলি। এ সময় বাকি টাকা না দেয়া পর্যন্ত আমার এবং আমার স্ত্রীর পাসপোর্ট জমা দিতে বলে রনি। পরে রনির এক সহযোগী আমাকে নগরীতে আমার সুগন্ধার বাসায় নিয়ে আসে। তখন বাসায় ৩৫ হাজার টাকা পাই এবং সঙ্গেসঙ্গে তা হামলাকারীদের হাতে তুলে দেই, সঙ্গে রনির কথা মেনে আমার এবং আমার স্ত্রীর পাসপোর্টও দেই।’
অভিযোগের শুরুতে রাশেদ জানান, গত প্রায় আট বছর যাবৎ তিনি ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের জিইসি মোড় শাখার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি ও তার অনুসারীরা তার প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতেন এবং চাঁদা নিতেন।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রনি ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের অফিসে এসে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় রাশেদ এতগুলো টাকা কোথা থেকে দেবেন বলে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে নুরুল আজিম রনি তাকে মারধর করেন।
এদিকে ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের অফিস কক্ষে সংঘটিত এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, প্রথমে ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদ মিয়াকে আঙুল তুলে শাসাতে ও টেবিল চাপরাচ্ছেন রনি।
একপর্যায়ে রাশেদের গালে থাপ্পড় মারের তিনি। পরে চুলের মুঠি ধরে টানাহেঁচড়া করে বারবার রাশেদের গালে থাপ্পড় মারতে থাকেন রনি। এর মাঝে চলতে থাকে তার উচ্চবাক্য। এভাবে প্রায় আড়াই মিনিট চলার পর কক্ষ ছেড়ে বের হয়ে যান রনি। কিছু মুহূর্ত পরেই ফিরে এসে আবারও তর্কে জড়ান রনি। পরে দীর্ঘ সময় কারও সঙ্গে ফোনালাপে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় তাকে। পুরো ঘটনায় ভীত-সন্ত্রস্ত রাশেদকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেছে।
ঘটনার শেষ এখানেই নয়, মারধরের এ ঘটনার প্রায় দুইমাস পর আবারও রনির নির্মম মারধরের শিকার হন রাশেদ মিয়া। গত ১৩ এপ্রিল রাশেদের সুগন্ধার বাসা থেকে মুরাদপুর যাওয়ার পথে মোহাম্মদপুর মাজার এলাকায় আবারও রনি ও তার সঙ্গীদের আক্রমণের শিকার হন রাশেদ।সেই ঘটনার বিবরণ দিয়ে এজাহারে রাশেদ লিখেছেন, ‘আসামিরা আমাকে একা পেয়ে টানাহেঁচড়া করে মুরাদপুর বুড়িপুকুর পাড় এলাকায় অফিসে নিয়ে যায়। এ সময় তারা আগের মতোই ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি বলি, এতগুলো টাকা আমি কেমনে দেব। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিপ্ত হয়ে নুরুল আজিম রনি অফিসে থাকা হকিস্টিক দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করলে আমি মাথা সরিয়ে নেই। আঘাতটি আমার বাম কানে লাগে। মারাত্মকভাবে জখমপ্রাপ্ত হয়ে আমার বাম কানের শ্রবণশক্তি এখন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।’‘এরপর ২ নম্বর আসামি হকিস্টিক দিয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। এ সময় রনি আমাকে ২০ লাখ টাকা না পেলে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ পর্যায়ে অনেক বুঝিয়ে বাসা থেকে ৪০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলি। এ সময় ১ নম্বর আসামি বাকি টাকা না দেয়া পর্যন্ত আমার এবং আমার স্ত্রীর পাসপোর্ট জমা দিতে বলে। পরে রনির এক সহযোগী আমাকে আমার সুগন্ধার বাসায় নিয়ে আসে। এ সময় বাসায় ৩৫ হাজার টাকা পাই এবং সঙ্গেসঙ্গে তা হামলাকারীদের হাতে তুলে দেই, সঙ্গে রনির কথা মেনে আমার এবং আমার স্ত্রীর পাসপোর্টও দেই। পরে তারা আমাকে মোটরসাইকেলে করে চট্টগ্রাম কলেজের গেটে ফেলে দিয়ে চলে যায়।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লেখা রনির অব্যাহতি চাওয়ার পত্রটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি নিজেই।
সেখানে রনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে আমি সজ্ঞানে অব্যাহতি নিলাম। একান্ত ব্যক্তিগত কারণে আমি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এমতাবস্থায় সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাাদক জাকারিয়া দস্তগীর সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন। এ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতি আবেদন করছি। প্রাণের ছাত্রলীগ ভালো থেকো, স্বকীয়তা নিয়ে লড়াই করার সৎ সাহস রেখো। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধ।’
উল্লেখ্য, রাশেদ মিয়া নগরীর জিইসি মোড় এলাকার ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের পরিচালক। রনি এর আগে এক অধ্যক্ষকেও পিটিয়েছিলেন।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)