যৌনবাহিত রোগের লক্ষণগুলো

জীবাণুযুক্ত যোনিতে সহবাসের ফলে লিঙ্গের মাথায় বা উহার গায়ে ছোট ছোট ফুসকুড়ি ওঠে এবং ঘায়ের সৃষ্টি হয়। স্ত্রী লোকের বেলায় এ ঘা ভালভার, লাবিয়া মাইনোরা, কারভিক্স এ আবির্ভূত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় যে ক্ষতটি হয় তা শক্ত থাকে। চুম্বনের মাধ্যমে মুখে ও ঠোঁটে ঘা হয়। ক্ষত ২ থেকে ৩ দিন নরম থাকে ও পুঁজ নির্গত হয়। ঘা টির তলদেশ শক্ত হয় এবং সাথে কুঁচকিতে বেদনাহীন স্ফীত গোটা (lymph node) তৈরী হয়।

কখনো একাধিক ঘা দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় এ ঘা দেখা যায় না। ১০ থেকে ১৫ দিন পর রোগীর বর্গীর চামড়া পাতলা হয়ে পেকে ওঠে। যেখানে যেখানে দেখা যায়- সাধারণত জননাঙ্গে দেখা যায়- লিঙ্গ মুন্ড, যোনিমুখ, জরায়ুমুখ ইত্যাদি। জননাঙ্গের বাইরে-ঠোঁট ও তালু, মুখ, স্তন এবং আঙ্গুল।

প্রাথমিক ক্ষত প্রকাশের ২ থেকে ৩ বা ৪ মাসের পর দ্বিতীয় অবস্থা শুরু হয়। দুর্বল রোগীর ক্ষেত্রে অল্পদিনে এবং বলবান রোগীর ক্ষেত্রে দেরীতে প্রকাশ পায়। এ অবস্থায় রোগীদের নানা রকম রোগ হয়। চর্ম শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী, চক্ষু, স্নায়ুমন্ডলী এবং দেহের অন্যান্য অংশে এ রোগের জীবাণু সঞ্চিত হয়। এসময় রোগীর সামান্য জ্বর, গলায় ব্যথা, নিস্তেজ ভাব, হাত ও পায়ে বেদনা, রক্তসল্পতা, শিরঃপীড়া ও ওজন হ্রাস পায়। চর্মে যে সমস্ত পিড়কা হয় তাতে কোন চুলকানী হয় না। অনেক ক্ষেত্রে তা তামাটে বর্ণের হয়।

মাস খানেক পর এ পিড়কা আপনা আপনি মিলে যায়। তখন এই পিড়কা হাত ও পায়ের তালুতে দেখা যায়। মুখের কিনারায়, মলদ্বারের কিনারায় এবং দেহের অন্যান্য ভিজাস্থানে আঁচলি জাতীয় দানা উৎপন্ন হয়। উহার নাম Condylomata lata. এভাবে দেড় বছর হতে ২ বছর কাল চলে। পরে আর তেমন কষ্ট হয় না। নারীদের ক্ষেত্রে লজ্জা বশত এ রোগ পুষে রাখলে যোনির মুখ বড় ও বিকৃত পিণ্ডাকৃতি হয়। অভ্যন্তর ভাগ হতে দুর্গন্ধময় ক্লেদ রস নির্গত হয়।

এ অবস্থা অত্যন্ত কষ্টকর ও সাংঘাতিক। এ অবস্থা দ্বিতীয় অবস্থার সঙ্গে চলতে থাকে। কখনো দ্বিতীয় অবস্থার পর শূরু হয়। এ অবস্থার চর্মে, চর্মের নিম্ন ভাগে, মাংসে, অস্থি, মস্তিষ্ক, মুখ, পাকস্থলী, অন্ত্র, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ইত্যাদি আক্রান্ত হয় এবং সিফিলিস এর গামা দেখা যায়। চামড়ায় আক্রান্ত হলে তা ক্ষত হয়ে ক্লেদ বের হয়। ক্ষত বৃদ্ধি পেতে থাকলে রোগীর মুখের তালুতে আক্রান্ত হয়। নাসারন্ধ্র ও শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। মস্তিষ্কে আক্রান্ত হলে শিরঃপীড়া, স্মৃতিলোপ, আর্ধাঙ্গিক রোগ দেখা যায়। যকৃৎ বড় হয়ে পেটে শোথ হয়। হাড়ে, অস্থি, সন্ধিতে সিফিলিস এর গামা দেখা যায়। অণ্ডকোষে গামা উৎপন্ন করে এবং উহাকে বেদনাহীন ভাবে স্ফীত করে তোলে।

আধুনিক মতে, প্রাথমিক অবস্থা জীবাণু প্রবেশের ৭-৯০ দিনের মধ্যে Chancre উৎপন্ন হয়। Chancre এর বৈশিষ্ট্য হল, অনেক বেশি লাল, ব্যথাহীন, একটি ক্ষত হবে। অনির্ধারিত তল কিনারা বিশিষ্ট জলীয় পদার্থ নির্গত হয়। সাধারণত একাকি ভাল হয় তবে সেখানে গৌণ সংক্রমণহলে ব্যথা উৎপন্ন হয়।

সাধারণত প্রাথমিক Chancre এর ৬-৮ সপ্তাহ পর শুরু হয়। সেক্ষেত্রে সাধারণ রোগ সমূহ যেমন-মাথাব্যথা সঙ্গে সামান্য জ্বর থাকে এবং অসস্তি বোধ হয়। সাধারণত ৪টি মৌলিক চিহ্ন দেখা যায়- Syphilistic Rash, সমস্ত শরীর হাত ও পায়ের তালু। এটা সাধারণত ফুসকুড়ির মত হয়। অনেক সময় ফুসকুড়িতে জল হয়। Condylomata Lata, আর্দ্র জায়গায় ফুসকুড়ি ওঠে। সাধারণত মলদ্বারের পাশে। Generalized Lymphadenopathy, সাধারণত লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাবে। Mucous Patches, মুখ, গলা ও যৌনাঙ্গের শ্লেষ্মা ঝিল্লীতে জেব্রার ন্যায় দাগ হয়।

তৃতীয় অবস্থায় উপনিত হতে মূলত ১০ বছর/ তারো অধিক সময় লাগে। সেক্ষেত্রে নিম্নের লক্ষণ প্রকাশ পায়, চামড়া ও চামড়ার নিচের টিস্যু্, শ্লেষ্মা ঝিল্লী, হাড়, এক ধরনের বিকৃতিকর অবস্থা পরিলক্ষিত হয়ে তাকে গুম্মা বলে। প্রধান অঙ্গসমূহ আক্রান্ত হয় মূলত সিএনএস (নিউরো সিফিলিস), সিভিএস (কার্ডিওভাসকুলার সিফিলিস)।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)