মাদকের ভয়াবহতা ও আমাদের করনীয়

মাদক ভয়াবহতা বর্তমানে একটি ভয়ংকর ও চরম ক্ষতিকর সমস্যা। এটি শুধু বাংলাদেশের একটি সমস্যা নয়, বরং তা সারা বিশ্বের জন্য একটি চরম ভয়ংকর সমস্যার রূপ নিয়েছে। মাদক সুখী সমাজ কে অস্থির করে তোলে এবং শান্তিময় সমাজ কে আবর্জনার স্তূপে পরিণত করে। এই মাদক নেশা ও ব্যবসা এখন এমন চরম পর্যায়ে এসেছে যে, তা ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে। আর সাথে সাথে জন্মদিচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা [ডঐঙ] এর মত অনুসারে “মাদক এমনই একটি বস্তু যা কোন ব্যক্তি গ্রহণের ফলে তার একাধিক কর্মকাণ্ডের পরিবর্তন ঘটায়” বেশি মাত্রায় মাদক গ্রহণের ফলে মাদকের বিষক্রিয়ায় শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। মানুষের বিবেক বুদ্ধি লোভ পায়, মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে যায়। মাদক একজন স্বাভাবিক ব্যক্তিকে অস্বাভাবিক, বেপরোয়া ও উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিতে পরিণত করে। এটা হচ্ছে মাদকের বাহ্যিক ক্ষতির দিক। কিন্তু এর অভ্যন্তরীণ ক্ষতির দিক আরও বেশি চরম। মাদক সুস্থ সবল মানুষের অভ্যন্তরীণ সকল কর্মকাণ্ড বিকল করে দেয়, আয়ুকে দুর্বল করে দেয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ক্ষুধা ও যৌন অনুভূতি হ্রাস করে দেয়। বর্তমানে বাংলাদেশের ৮৪ভাগ পুরুষ ও ১৬ ভাগ নারী এই মরণ নেশায় আক্রান্ত। এক জরিপে বলা হয়েছে বর্তমানে দেশে মাদকা সক্তের সংখ্যা ৫০ লাখ। অন্য এক জরিপে এই সংখ্যা ৭০ লাখ দেখানো হয়েছে। মাদক এখন শহর, নগর, বন্দর পেরিয়ে গ্রামের ওলি গলি পর্যন্ত তার কালো থাবা বিস্তার করেছে। বেকারত্ব, মাদকের সহজ লভ্যতা, মাদক চোরাচালান, আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকর ভূমিকার অভাবই সম্ভবত মাদক বিস্তারের কারণ। এর কুপ্রভাবে সমাজে সংঘটিত হচ্ছে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজির মত কর্মকাণ্ড। কারণ মাদক সেবীরা তাদের মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে এই ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। মাদক ভয়াবহতা প্রতিকারে নিন্মোক্ত পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করা যায়। মাদক উৎপাদন ও আমদানি বিশেষ আইনদ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা ও কর্মসূচী আরও বেশি জোরদার করা, বেকারত্ব হ্রাস করা, অধিক কর্ম সংস্থান সৃষ্টি করা, গনসচেতনা বৃদ্ধির জন্য সভা, সমিতি, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের বেশি বেশি ব্যবস্থা করা, মাদক চোরা চালান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, সরকারী উদ্যোগ বাড়ানো, মাদক প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর ভাবে বাস্তবায়ন করা, বিভিন্ন স্তরের পাঠ্য বইয়ে মাদকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা, ছেলে মেয়েদের কর্মকাণ্ডের দিকে পিতা মাতার নজর বাড়ানো।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)