মংলা বন্দর দিয়ে প্রথমবার পণ্য যাচ্ছে ভারত -নেপালে ট্রানজিট সুবিধায়

মংলা বন্দর দিয়ে প্রথমবার পণ্য যাচ্ছে ভারত -নেপালে ট্রানজিট সুবিধায়২৫ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন সার এ সারের রফতানি মূল্যএক কোটি ৩২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭০ টাকা ।ভারত, ভুটান ও নেপাল ট্রানজিট (বাংলাদেশের ভূ-খন্ড ব্যবহার) সুবিধার জন্য মংলাবন্দর ব্যবহার করবে, এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। শুধু বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। দেরিতে হলেও তা বাস্তবায়ন হয়েছে। চীনের একটি বন্দর থেকে ২৫ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন সার নিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) মংলা বন্দরে নোঙ্গর ফেলেছে সেন্ট ভিনসেন পতাকাবাহী ‘এম ভি ঠেটো টোকজ’ নামে একটি বিদেশি জাহাজ। মংলা বন্দরে ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে জাহাজের থেকে পণ্য খালাসের পর তা স্থল পথে নেপালে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বন্দরের হারবাড়িয়ার ৭ নাম্বার বয়ায় বর্তমানে সারবাহী ওই বিদেশি জাহাজটি অবস্থান করছে।
বিদেশ থেকে আসা এ সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মেসার্স লিটমন শিপিং লি. এর ব্যবস্থাপক সৈয়দ মুর্তজা আলী বাপ্পী এ প্রতিবেদককে বলেন,‘এম ভি ঠেটো টোকজ’ থেকে প্রাথমিকভাবে ছোট লাইটারেজে (কার্গো জাহাজ) করে সার খালাস করে পরে তা যশোরের নোওয়াপাড়ায় নেওয়া হবে। সেখান থেকে বেনাপোল রুটের মাধ্যমে ভারতের বীরগঞ্জ কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স হয়ে মালবাহী ট্রেনে করে সারগুলো নেপালে যাবে।’ নেপালের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির পর মংলা বন্দরের মাধ্যমে এই প্রথম পণ্য রফতানি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন,গতকাল ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে থেকে ওই জাহাজে শ্রমিক বুকিং দিয়ে সার খালাসের কাজ শুরু হবে। জাহাজের থেকে পণ্য খালাস করতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে।’দেড় মাস আগে চীন থেকে এ nটি বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। জাহাজে করে আনা নেপাল সরকারের জন্য আসা এ সারের আমদানি মূল্য এক কোটি ১১ লাখ ৫৪ হাজার এবং তার রফতানি মূল্য এক কোটি ৩২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭০ টাকা বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক আমদানিকারক আমিনুর রশিদ। বাংলাদেশের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশ ড্রেডিং কর্পোরেশনের এ মালিক আরও জানান, চীন থেকে আমদানি করা এক হাজার মেট্রিক টন ঢালাই সারের মূল্য ৪৪০ ডলার। এরপর সারগুলো স্থানীয়ভাবে মোড়কজাত করার পর এক হাজার মেট্রিক টন সার রফতানি করা হবে ৫২২ দশমিক ২০ ডলারে। চীন থেকে মোট ২৫ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন সার আমদানি করা হয়েছে। বন্দর সূত্র জানায়, সরকার অনেক আগেই ভারত, নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট সুবিধার দিয়ে মংলাবন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়ার পর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও কার্যত বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, ট্রানজিটের বিপরীতে কোনও শুল্ক আদায় করার সুযোগ নেই। তবে এই পণ্য পরিবহনের জন্য অবকাঠামো ব্যবহারসহ তা রক্ষণাবেক্ষণ ও এর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য মাশুল আদায় করা যাবে। বার্সেলনা কনভেনশনের ধারা ৩ এ ট্রানজিটের অধিকার দিয়ে কোনও ধরনের অর্থ নেওয়া যাবে না। তবে ট্রানজিট পরিচালনার ব্যয় নির্ধারণ করে তা আদায় করার সুযোগ রয়েছে। গ্যাটের পঞ্চম ধারার ৩ থেকে ৬ উপধারার শর্ত অনুসারে দুই ভাগে এ মাশুল আদায় করা যায়। তবে বাংলাদেশের শুল্ক আইনে ট্রানজিট বাবদ ফি ও সার্ভিস চার্জ আরোপ-সংক্রান্ত ধারা ১২৯ অর্থবিল ২০১১-১২ দ্বারা বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে ট্রানজিট মাশুল আরোপের কোনও সুযোগ নেই। এদিকে মোংলা বন্দরের পণ্য আমদানিকারক ব্যবসায়ী এইচ এম দুলাল ও সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারত, নেপাল ও ভুটান মংলাবন্দরের ট্রানজিট (বাংলাদেশের ভূ-খন্ড ব্যবহার) ব্যবহারের ফলে এ বন্দরে পণ্য খালাস-বোঝাইয়ের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে জাহাজের সংখ্যাও বাড়বে। এ জন্য এ অঞ্চলে কর্মসংস্থান যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক উন্নতি হবে।’ তারা আরও বলেন, ‘ট্রানজিটের ফলে মোংলা বন্দরের ওপর চাপ বাড়বে। এ জন্য বন্দরের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। বন্দরের ফেয়ারওয়েতে ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন, জেটিতেও যেন আট মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে তার জন্য ড্রেজিং করতে হবে। ড্রেজিং না করার কারণে বেশিরভাগ জাহাজের অর্ধেক পণ্য চট্রগ্রাম বন্দরে খালাস করতে হয়। জাহাজের সব পণ্য যাতে মোংলা বন্দরে খালাস করতে পারে সে জন্য দ্রুত ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।’
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর ফারুক হাসান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মংলা বন্দরে ট্রানজিটের ব্যাপারে আমরা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত আছি। তবে বন্দরের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)