যেতে চেয়েছিলেন মহাকাশে, পারেননি।

তাঁর প্রিয়তম মহাজাগতিক বস্তু কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোলে যাচ্ছে তাঁর ফেলে যাওয়া সেই ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর। ‘আমি স্টিফেন হকিং বলছি…’। সঙ্গে পাঠানো হচ্ছে আরও বিশেষ কিছু বার্তা। সুরে বেঁধে। মানবসভ্যতার তরফে।

তা রওনা হচ্ছে আজ, শুক্রবারই।

বিশ ও একুশ শতকে আধুনিক বিজ্ঞানের ‘ঈশ্বর’-এর কৃত্রিম গলার স্বর থেকে যাবে এই ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের ঠিকানা ‘মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি’রই একটি ব্ল্যাক হোলের অন্তরে-অন্দরে।

কিন্তু ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি তো যাওয়া যায় না। মহাকাশযান বা কারও পক্ষেই তা সম্ভব নয়। গেলেই তো তার অসম্ভব জোরালো মহাকর্ষীয় বলের টানে তাকে গিলে খাবে ব্ল্যাক হোল।

তাই প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানীর সেই ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর আমাদের গ্রহের সবচেয়ে কাছে থাকা একটি ব্ল্যাক হোলের উদ্দেশে ছুড়ে দেবে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ বা ‘এসা’)। শব্দ তো তরঙ্গই। সেই তরঙ্গকে তার জোরালো মহাকর্ষীয় বলের টানে টেনে নেবে ব্ল্যাক হোল। ওই সুর বেঁধেছেন গ্রিক সঙ্গীতকার ভ্যাঞ্জেলিস।

গত শতকের শেষ দিকে হকিংই প্রথম অঙ্ক কষে দেখিয়েছিলেন, ‘ব্ল্যাক হোলস আর নট সো ব্ল্যাক’। ব্ল্যাক হোল মোটেই পুরোপুরি কালো নয়। সেও আলো উগরে দেয়। ব্ল্যাক হোল থেকেও বেরিয়ে আসে আলো। ’৮৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সেই সাড়াজাগানো বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’।

এ বছর ১৪ মার্চ প্রয়াত হন হকিং। তাঁর দেহাবশেষ রাখা রয়েছে লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টর অ্যাবেতে।

কন্যা লুসি হকিং বলেছেন, ‘‘এটা খুব সুন্দর একটা প্রতীকী উদ্যোগ। আমাদের গ্রহে বাবার অস্তিত্ব, তাঁর মহাকাশে যাওয়ার ইচ্ছা আর মনে মনে সব সময় তাঁর ব্রহ্মাণ্ড পরিক্রমার মধ্যে যেন সেতু বাঁধল এই উদ্যোগ।’’

মহাকাশে ঠিক কোন ঠিকানায় রয়েছে সেই ব্ল্যাক হোল? কী তার নাম?

হকিং-কন্যা বলেছেন, ‘‘আমাদের গ্রহের সবচেয়ে কাছের ব্ল্যাক হোলেই যাচ্ছে বাবার ফেলে যাওয়া কণ্ঠস্বর। ওই ব্ল্যাক হোলের নাম- ‘1A-0620-00’। যা রয়েছে কমলা রংয়ের একটা বামন নক্ষত্র (ডোয়ার্ফ স্টার) সহ দু’টি তারার একটি নক্ষত্রমণ্ডলে (বাইনারি সিস্টেম)।’’

হকিংয়ের গলার স্বরে বিশেষ কী বার্তা পাঠানো হচ্ছে ব্ল্যাক হোলে?

লুসি হকিং জানিয়েছেন, শান্তি আর সম্প্রীতির কথা। আশার কথা। ঐক্য, সংহতির কথা।

হকিংয়ের মতো এই বিশ্বে আরও যে তিন জন কথা বলেন কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত উপায়ে, তাঁরাও এ দিন হাজির থাকবেন বিশেষ অনুষ্ঠানে।