বিশ্বের দীর্ঘ দাড়িওয়ালা

৫৮ বছর বয়সী গিরধর ভায়াস বাস করেন রাজস্থানের বিকেনারে। রাজস্থানের প্রায় চার কোটি প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের মধ্যে তাকে হয়ত আলাদা করা যেত না। কিন্তু ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি দাড়ি কাটানো বন্ধ করে দেন। এতো দিনে তার দাড়ি বড় হতে হতে এতোটাই দীর্ঘ হয়েছে যে বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দাড়িওয়ালা হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন তিনি। গিরধর এখন পরিচিত ‘মুস্টাশ ম্যান অব ইন্ডিয়া’ নামে।

সম্প্রতি বারক্রফট টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গিরধর বলেন, ‘দাড়ি বড় করার জন্য অনেক মেহনত করেছি। বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা দাড়িওয়ালা ব্যক্তিটি হয়তো আমিই। অতীতে সবচেয়ে লম্বা দাড়িওয়ালা হিসেবে রেকর্ড গড়েন ভারতের রাম সিং। তার দাড়ির দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৮ ফিট। আর আমার দাড়ি ২২ ফিট। যদিও এই কাজটি সহজ ছিলো না। প্রতিদিন এই দাড়ির পেছনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়।’

1.বিশ্বের দীর্ঘ দাড়িওয়ালা...

‘সকালে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠি এবং দাড়ি বিছানার উপর ছড়িয়ে তাতে তেল মালিশ করি। পুরো দাড়িতে তেল লাগাতে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা ব্যয় হয়ে যায়। অতঃপর বিকেলে আবার লেবু এবং গোল মরিচের মিশ্রণ দিয়ে মালিশ করি। এতে করে দাড়ি আরো মসৃণ হয়। প্রতিদিনের রুটিন এটি।’

শুধু বাহ্যিকভাবেই দাড়ির যত্ন নেন না বরং সুস্থ এবং দাড়িগুলো ঘন করতে তিনি খাওয়া-দাওয়াতেও বেশ সচেতন। এ বিষয়ে গিরধর বলেন, আমি কিন্তু খাওয়ার বিষয়ে বেশ সচেতন। সব খাবার খাই না। অনেক বেছে স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে থাকি। কখনো আইসক্রিম খাইনি। এছাড়াও যেসব খাবার খাই তার জন্য অবশ্যই চামচের প্রয়োজন হয়।

দাড়ি নিয়ে বিড়ম্বনারও শেষ নেই গিরধরের। এই পরিশ্রমের ফসলকে নিয়েও লোকমুখে শুনতে হয় নানা আজে-বাজে কথা। বেশিরভাগই তার দীর্ঘ দাড়ি দেখে বিরক্ত হন। অনেকে আবার না-কি বিভিন্ন নামে ডাকেন তাকে। আবার অনেকেই কৌতূহল হয়ে দাড়ির রহস্য জানতে চান। গিরধর বলেন, অনেকেই দীর্ঘ দাড়ির জন্য নিন্দা ও সমালোচনা করেন। কিছু লোক মনে করেন আমি অপরিষ্কার। তবে কে কি ভাবল বিষয়টি মাথায় রাখলে হয়তো বা কখনো দাড়ি রাখা হতো না। তবে বেশিরভাগ মানুষ আমাকে সম্মান করেন। ভালোবেসে প্রতিদিন দেখতেও আসেন।

2.বিশ্বের দীর্ঘ দাড়িওয়ালা...

গিরধরের একজন ব্যক্তিগত নাপিতও রয়েছেন। যিনি ৩৩ বছর তার দাড়ির পরিচর্যা করে আসছেন। প্রতি সপ্তাহে গিরধর সেই নাপিতের কাছে দাড়ি কাটান। গিরধরের মতে, ‘আমার এক বন্ধু নাপিত। তাকে দিয়েই এ যাবৎকালে দাড়ির সাইজ ঠিক রাখা ও বাড়তি লোমগুলো কাটানোসহ গোঁফও কাটিয়ে থাকি।’

বড় দাড়িওয়ালা বাবাকে নিয়ে গিরধরের ছেলের গর্বের যেন শেষ নেই। ছেলে শিব ভায়াস বাবাকে নিয়ে গর্বিত। শিব বলেন, ‘পরিবারের সবাই বাবার দাড়ি নিয়ে গর্ববোধ করেন। বাবাকে অনেকেই দেখতে আসেন। সেইসঙ্গে তার ভক্তও নিতান্ত কম নয়। এছাড়া বাইরে কোথাও গেলে বাবার সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন লোকজন। বিষয়গুলো বেশ উপভোগ্য। রাজস্থানের এতিহ্যগত রেওয়াজ হলো দাড়ি লম্বা করা। আর বাবা সেই রীতি ধরে রেখে অন্যদের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।’

বিগত এক বছর ধরে গিরধর তার দাড়ি পরিষ্কারের জন্য শ্যাম্পু ব্যবহার করেন নি। তিনি বলেন, কখনো কেমিক্যাল ব্যবহার করি নি। আমার আস্থা নেই এসব শ্যাম্পু ও কন্ডিশনারসহ অন্যান্য সামগ্রীতে। লেবু ও টকদই ব্যবহার করে দাড়ি পরিষ্কার রাখি। গোসলের সময় অবশ্যই দাড়িগুলো একটি ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখি যেন এগুলো ভিজে না যায়। যেদিন দাড়ি পরিষ্কার করি সেদিন এগুলো ছড়িয়ে বসে থেকে শুকাতে হয়। ‘

গিরধরের সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে প্রায় দিনই উপচে পড়ে মানুষের ভীড়। তারা বাইরে অপেক্ষা করেন দীর্ঘ দাড়িওয়ালা এই ব্যক্তিটিকে এক নজর দেখার জন্য। গিরধরও তাদেরকে নিরাশ করে ফেরত না পাঠিয়ে বরং তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং দাড়ির রহস্য জানান। অনেকের তার সঙ্গে ছবি তোলার জন্য ব্যাতিব্যস্ত হয়ে ওঠেন। গিরধর জানান, বিষয়টি বেশ উপভোগ করি। তারা আমার সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। যেন আমি একজন সেলিব্রিটি! আমার দীর্ঘ দাড়ির জন্য যে তারা আমাকে ভালোবাসে এটিই পরম সৌভাগ্যের।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)