বিশ্বকাপ ২০১৮ ফুটবলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স

ফিফা ২০১৮ বিশ্বকাপে পৃথিবী নতুন এক সোনালী প্রজন্মের উন্থান দেখলো। জয় ফ্রান্স। তারা এখন নিজেকে চার বছরের জন্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান কলতেই পারে।

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে লুঝনিকি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় ক্রোয়েশিয়া ও ফ্রান্স। দারুণ জমজমাট এক লড়াইয়ের দৃশ্যই দেখছে ফুটবল প্রেমিকরা। যদিও ম্যাচের প্রথমার্ধে দারুণ খেলতে থাকলেও দুর্ভাগ্যের কাছে পরপর দুইবার পিছিয়ে পড়ে ক্রোয়েটরা। নিজেদের দুর্ভাগ্যের সাথে ফ্রান্সের দুর্দান্ত গতি শক্তিশালী আক্রমণভাগের সামনে পরাজয় বরণ করে ক্রোয়েশিয়া। এর ফলে যোগ্য দল হিসেবেই শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসলো জিদানের উত্তরসূরিরা। আর প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় পুড়লো লুকা মড্রিচরা।

ম্যাচের শুরু থেকে দুই দলই মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। তবে শুরুর দিক থেকে এক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করে ক্রোয়েটরাই। ফলে দুই তিনটি সুযোগও তৈরি করে তারা। ম্যাচের ১০ মিনিটে ডি বক্সের ভেতরে দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করেছিল ক্রোয়েশিয়া। তবে পাস নেওয়ার মতো কেউ না থাকায় কোনো বিপদে পরেনি ফ্রান্স। এর এক মিনিট পরেই ডি বক্সের বাহির থেকে রাকিতিচের দূরপাল্লার নেয়া শটটি বিপদ তৈরি করতে পারতো ফরাসিদের জন্য। পেরিসিচের জন্য বলটি নিয়ন্ত্রণে নেয়া কিছুটা কঠিনই ছিল। ফলে এ যাত্রাতেও রক্ষা পায় ফ্রান্স। ১৫মিনিটে আবারও আক্রমণে আসে ক্রোয়েশিয়া। ডি বক্সের ভেতরে বাম দিক থেকে বাড়ানো পেরিসিচের পাস ফিরিয়ে দেন উমিতিতি। ম্যাচের ১৯ মিনিটে ক্রোয়েট ডি বক্সের কাছে বিপদজ্জনক ফাউলের শিকার হন গ্রিজমান। গ্রিজমানের নেয়া ফ্রি কিক রক্ষা করতে লাফিয়ে উঠেন মানজুকিচ। ফলে তার মাথা ছুয়ে আত্মঘাতি গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্রোয়েটরা।

তবে পিছিয়ে পড়লে বরাবরের মতো খেলায় ফিরে আসে ক্রোয়েটরা। ২৮ মিনিটের মাথায় ফ্রান্স ডি বক্সে বেশ কয়েকজনের মাথা ছুঁয়ে বল পান ভিদা। ভিদার পা থেকে পেরিসিচ বল পেতেই দুর্দান্ত এক ফিনিশিং এ ক্রোয়েশিয়াকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন। তবে খুব বেশিক্ষন সমতায় থাকতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে কর্নার কিক থেকে গোল রক্ষা করতে আবারও দুর্ভাগ্যের শিকার হয় তারা। এবারে দুর্ভাগ্যের কারণ পেরিসিচ। গ্রিজমানের কর্নার থেকে গোল রক্ষা করতে দুর্ভাগ্যবশত পেরিসিচের হাতে বল ছুঁয়ে যায়। ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। খুব ধীরে সুস্থে ও ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে জড়ান গ্রিজমান। এর ফলে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় ফরাসিরা। অবশ্য কিছুক্ষন পরেই আবারও আক্রমণ শানায় ক্রোয়েটরা। তবে দুর্বল গতির শটটি লরিস বেশ সহজেই তালুবন্দি করেন। ৪৩মিনিটে ডি বক্সের বাহির থেকে লুকা মড্রিচের দারুণ ফ্রি কিক থেকে শট নেন লভরেন। তবে কর্নারের বিনিময়ে প্রথম দফায় রক্ষা করেন উমিতিতি এবং দ্বিতীয় দফায় পল পগবা। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে আরও একটি কর্নারের সুযোগ পায় ক্রোয়েট। দারুণ ফ্রি কিকটিতে অল্পের জন্য মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন ভিদা। এর ফলে ২-১ গোলে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধের বিরতিতে যায় ফ্রান্স।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আক্রমণে যায় এমবাপ্পে। তবে সুবাসিচের দারুণ দক্ষতায় এগিয়ে যেতে পারেনি ফ্রান্স। ৫৯ মিনিটে কাউন্টার এটাক থেকে এমবাপ্পে হয়ে বল আসে গ্রিজমানের পায়ে। সেখান থেকে দারুণভাবে বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন গ্রিজমান। তার পাস থেকে বল পান পল পগবা। প্রথম দফায় ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় দফায় বাঁ পায়ের বুলেট গতির শটে বল জালে জড়ান। ফলে ম্যাচ থেকে অনেকখানিই ছিটকে ফেলেন ক্রোয়েশিয়াকে। তবে ম্যাচে আবারও টুইস্ট নিয়ে আসেন মানজুকিচ। ৬৮মিনিটে ব্যাক পাস থেকে বল পান লরিস। কিন্তু পেছনেই যে দৌড়ে আসছেন মানজুকিচ। বলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই পেছন থেকে হালকা ছোঁয়ায় বলকে জালে জড়িয়ে ৪-২তে ব্যবধান কমিয়ে আনেন।

ম্যাচের ৭৭ মিনিটে সুযোগ তৈরি করে ক্রোয়েশিয়া। ডি বক্সের ভেতরে কিরামিচের পাস থেকে বল পান রাকিতিচ। তার নেয়া শটটি গোলবারের পাশ দিয়ে চলে যায়। ম্যাচের বাকি সময়ে দুই দলই গোলের চেষ্টা করে। তবে অতিরিক্ত সময়ের তৃতীয় মিনিটে গোলরক্ষককে প্রায় একা অবস্থায় পেয়ে সহজ একটি সুযোগ মিস করেন পল পগবা। তবে বাকি সময়ে আর কোনো দলই গোল না পেলে ৪-২ ব্যবধানে ফাইনাল জিতে নেয় ফ্রান্স। এর ফলে ১৯৯৮ এর পর দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে নিল ফ্রান্স।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)