বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে যায় নওয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম

শেখ ইমরান হোসেন, তালা:
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে ১৯৯৪ সালে ১ একর সম্পত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় নওয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৮০ জন। এসএসসি পাশের হার শতকরা ৯৭.৮৭%। প্রতিষ্ঠানে ১৪ জন শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। শিক্ষার গুনগত মান আশানুরুপ। ১৯৯৪ সালে নিন্ম মাধ্যমিক স্বীকৃতি পাওয়ায় ৭জন শিক্ষক ও ২ জন কর্মচারী বেতন ভুক্ত হয়েছে। বাকীরা অবৈতনিক ভাবে আশায় বুকবেধে আন্তরিকতার সহিত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০০৩ সালে বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক পর্যায়ে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। কিন্তু এলাকার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোগত মান একেবারে অনুন্নত।
সরেজমিন ঘুরে দেখাযায়, বিদ্যালয়টি ১৯৯৪ সালে ইটের গাথুনি আর টিনের ছাউনিদ্বারা নির্মিত হওয়ার পর থেকে তার কোন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। একদিকে নিচু জায়গা অপর দিকে টিনের ছাউনির জরাজীর্ণ অবস্থা। বৃষ্টির সময় ক্লাসরুমে পানি উঠে যায় এবং ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। বছরের প্রায় ৩/৪ মাস পানিতে তলিয়ে থাকে বিদ্যালয়টি। তারপরেও শিক্ষার মান থেকে পিছিয়ে নেই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু পিছিয়ে আছে মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিও এবং অবকাঠামো উন্নয়ন।
১০ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইমন, নবম শ্রেনীর মিম, অষ্টম শ্রেণীর ফাইমা আক্তার রিয়া, ৭ম শ্রেণীর তামিম হাসান, ৬ষ্ট শ্রেণীর জান্নাতুল শাফা বলেন, বর্ষা মৌসুমে ৩/৪ মাস ক্লাসরুম পানিতে তলিয়ে থাকে। সামনে কালবৈশাখী ঝড়ের মৌসুম। উপরের ছাউনি ভেঙ্গে পড়ার আশংকা নিয়ে আমাদের ক্লাস করতে হচ্ছে।
একপর্যায়ে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইমন “আসমানী ” কবিতাটি তুলে ধরে বলেন, আমরাও আসমানীদের মত হয়ে আছি “একটু খানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পড়ে পানি”। সরকার শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব বেশী দিয়েছে। কিন্তু আমাদের স্কুলটির অবস্থা একেবারে নগন্য। স্কুলটির শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীরা এমপিও ভুক্ত এবং একটি নতুন ভবন নির্মানের জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সহ সরকারের সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিকট জোর দাবী জানায়।
প্রধান শিক্ষক সাধু তপন কুমার বলেন, ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ১৫ সালে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এসে বিদ্যালয়টি দেখে সরকারি অনুদান হিসাবে ৩ বান টিন বরাদ্ধ দিয়েছিলেন। এরপর আর কোন কিছু পায়নি। আমি সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট এমপিও ভুক্ত এবং একটি ফ্যাসালিটিস ভবন বরাদ্ধের দাবী জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দেখেছি শিক্ষকরা আন্তরিকতার সহিত ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করছেন। কিন্তু এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় কয়েকজন শিক্ষক মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিদ্যালয়টি এমপিও হলে শিক্ষকরা পাঠদানে আরও মনোযোগী হবে এবং শিক্ষার মান আরও উন্নত হবে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান বলেন, বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায় এমপিও বন্ধ আছে। সরকার ছাড়লে স্কুলটি এমপিও করার চেষ্টা করব।
তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, স্কুলটির শিক্ষার মান ভালো। স্কুলটির জন্য এই মুহুর্তে একটি ভবন খুব জরুরী। শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়িত ঝুকি নিয়ে ক্লাস করে। আমি এ বিষয়টি এমপি মহোদয়কে বলেছি।
তিনি বলেন, ২৬ মার্চ স্কুলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। অবকাঠামো অবস্থা দেখে আমার খুব খারাব লাগায় তালা উপজেলা পরিষদ থেকে সংস্কারের জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দিয়েছি। স্কুলটির অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

দৈনিক সাতক্ষীরা/জেড এইচ

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)