ফেসবুক বিমুখ হচ্ছে তরুণরা

অনলাইন ডেস্ক:

২০১৫ সাল থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাটের মত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, তরুণরা ফেসবুকের পরিবর্তে বেছে নিচ্ছে এগুলোকে।

গবেষণাটি যদিও আমেরিকার উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণে করা হয়েছে, তবে এ কথা বলা চলে যে গবেষণার এই ফলাফল বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের জনপ্রিয়তার নিম্নমুখীতাকেই নির্দেশ করে।

এখন আমেরিকায় ১৩-১৭ বয়সসীমার মধ্যে মাত্র ৫১ শতাংশ কিশোর-কিশোরীরা ফেসবুক ব্যবহার করে যেখানে পিউয়ের ২০১৭ সালের জরিপ অনুসারে এই পরিমাণ ছিল ৭১ শতাংশ।

চলতি বছরে পিউয়ের গবেষণা অনুযায়ী ফেসবুকের ব্যবহার লক্ষণীয়ভাবে কমছে যেখানে ইউটিউব ব্যবহারকারী- ৮৫ শতাংশ, ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী- ৭২ শতাংশ, স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহারকারী- ৬৯ শতাংশ। অথচ বিগত জরিপ অনুযায়ী মাত্র ৫২ শতাংশ কিশোর ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করত এবং স্ন্যাপচ্যাট ছিলো ৪১ শতাংশ। যদিও পিউয়ের ২০১৪-১৫ সালে করা জরিপটিতে ইউটিউব অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তবে এই গবেষণার ফলাফল থেকে এটিই প্রতীয়মান হয় যে , এই ভিডিও স্ট্রিমিং সাইটের জনপ্রিয়তার গ্রাফ বেশ ঊর্ধ্বমুখী।

সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিতে বসবাসকারী কিশোরদের মধ্যেও ফেসবুক ব্যবহারের হারের তারতম্য দৃশ্যমানভাবে লক্ষ্য করা যায়। গবেষণাটিতে দেখা যায়, নিম্ন আয়ের পরিবার যাদের বাৎসরিক আয় ৩০ হাজার ডলারের নিচে সেসব পরিবারের কিশোরদের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারের হার ৭০ শতাংশ। তুলনামুলকভাবে যে পরিবারগুলোর বাৎসরিক আয় ৭৫০০০ ডলার বা তার থেকেও বেশি, সেসব পরিবারের শিশু কিশোরদের ফেসবুক ব্যবহারের হার মাত্র ৩৬ শতাংশ।

সোশাল মিডিয়া এন্ড টেকনোলোজি– ২০১৮ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, নিম্ন আয়ের পরিবারের তরুণদের ফেসবুক ব্যবহারের সংখ্যা উচ্চ আয়ের পরিবারের তরুণদের তুলনায় বেশি (২২ শতাংশ বনাম ৪ শতাংশ)। অনলাইনের কোন সামাজিক মাধ্যমে কিশোররা সবচেয়ে বেশি সময় দেয় এই প্রশ্নে মাত্র ১০ শতাংশ তরুণ ফেসবুকের কথা উল্লেখ করেন। ৩৫ শতাংশ বলেন স্ন্যাপচ্যাট প্রসঙ্গে, ৩২ শতাংশ ইউটিউব এবং ১৫ শতাংশ ইন্সটাগ্রামে সবচেয়ে বেশি সময় কাটান। উল্লেখ্য , ছবি শেয়ারিং করার জন্য তুমুল জনপ্রিয় অ্যাপ ইন্সটাগ্রাম বর্তমানে ফেসবুকের মালিকানাধীন রয়েছে।

এর আরো কিছু ভিন্নতা পাওয়া যায় লিঙ্গ এবং জাতিগত পার্থক্যে। মেয়েরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মাধ্যম হিসেবে স্ন্যাপচ্যাটের কথা বলেন (৪২ শতাংশ বনাম ২৯ শতাংশ), সেখানে ছেলেদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে ইউটিউব (৩৯ শতাংশ বনাম ২৫ শতাংশ)। কৃষ্ণাঙ্গ তরুণদের তুলনায় শ্বেতাঙ্গ তরুণদের ফেসবুক ব্যবহারের হার তুলনামূলকভাবে কম (২৫ শতাংশ বনাম ৭ শতাংশ)। শ্বেতাঙ্গ তরুণদের পছন্দের তালিকায় স্ন্যাপচ্যাট যেখানে শীর্ষে অবস্থান করছে সে তুলনায় স্প্যানিশদের মধ্যে স্ন্যাপচ্যাটের জনপ্রিয়তা ২৯ শতাংশ এবং কৃষ্ণাঙ্গ স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহারকারী ২৩ শতাংশ।

ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া নিয়ে এটাই প্রথম গবেষণা নয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ই-মারকেটার সমীক্ষার গননা অনুযায়ী আমেরিকার ১২-১৭ বছরের কিশোরদের মধ্যে ৯.৯% শতাংশ ফেসবুকের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে যা কিনা ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের গবেষণা পূর্বাভাস থেকেও তিনগুণ বেশি। পিউ গবেষণা কেন্দ্র তাদের নিজস্ব গবেষণা অনুযায়ী ধারণা করেছে ফেসবুক ২৫ লাখ আমেরিকান ২৫ বছরের নিচের ব্যবহারকারীদের হারানো যাচ্ছে।

ইমারকেটার বিশেষজ্ঞ পাউল ভেরনা বলেন, খুব দীর্ঘ সময় নিয়ে আমরা একটি অবিশ্বাস্য ব্যাপার লক্ষ্য করেছি যা আমি আমার নিজের দুই মেয়ের (১৭ এবং ১৪ বছর বয়সী) ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছি। যখন আমার সতের বছরের বড় মেয়ে তের বছরে পা দিল, তখন ফেসবুক ব্যবহার করা একটা সময়ের রীতি হয়ে দাড়িয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পর সে ঠিক ততটা ফেসবুকে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেনি। যখন তার ছোট বোনের বয়স তের হলো, তখন সে ফেসবুকে একাউন্ট খোলার ব্যাপারে কোনো আগ্রহই দেখায়নি। তখন তার পু্রোটা অবসর জুড়ে থাকতো ইন্সাটগ্রাম, যা এখনো বহাল আছে।

ইন্সটাগ্রাম ফেসবুকের মালিকানাধীন হওয়ায় এটি ফেসবুকের জন্য একটি অতিরিক্ত চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ ফেসবুকই তাদের প্রধান লক্ষ্য এবং পৃথিবীব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম। ফেসবুকই প্রথম জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেখানে এক হতে পেরেছে পৃথিবীর আনাচে কানাচে অবস্থানরত বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন সময়ের মানুষ। নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে ওঠার সবচে’ বড় স্থানটি যখন এই সোশাল মিডিয়া নিয়ে নেয় সেখানে জনপ্রিয়তারও আন্তঃসম্প্রকের আমূল পরিবর্তনের কথা।

সামাজিক প্ল্যাটফরমগুলো তরুণদের নানারকম প্রণোদনা দেয় কারণ তরুণেরা তাদের অভ্যাসগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বেড়ে ওঠে, সামাজিক প্ল্যাটফরম একধরণের ভালো জায়গা হিসেবে কাজ করে এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের আকর্ষণ করে।

যদিও বহু তরুণরা ক্রমেই শুধুমাত্র ফেসবুক ব্যবহার থেকে সরে আসছে, তবুও এটি পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে আছে যার মাসিক ব্যবহারকারী প্রায় ২২০ কোটি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)