প্রেমিকাকে হত্যার বর্ণনা দিল প্রেমিক

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রেমিকা ফরিদা বেগমকে হত্যার বর্ণনা দিয়েছে প্রেমিক জুমেল। বৃহস্পতিবার বড়লেখার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. হাসান জামানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মো. জুমেল আহমদ (২৫)।

আদালতে আসামির ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক ওয়াহেদ গাজী।

জানা গেছে, গত ১৩ জুন উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর এলাকায় একটি খেত থেকে ফরিদা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরবর্তীতে ফরিদার মা পিয়ারা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের নামে বড়লেখা থানায় হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় পুলিশ মো. জুমেল আহমদ ওরফে জুবেল (২৫) এবং জাকির আহমদ (২৫) নামে দুই জনকে গ্রেফতার করে।

নিহত ফরিদা ইসলামপুর গ্রামের খলকু মিয়ার মেয়ে। প্রায় ছয় বছর আগে ফরিদা বেগমের সঙ্গে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার পাথারিপাড়া গ্রামের গৌছ উদ্দিনের বিয়ে হয়। তিন বছর আগে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর থেকে ফরিদা বেগম বাবার বাড়িতে থাকতেন।

এদিকে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ইটাউরি কান্দিগ্রামের সাইন উদ্দিনের ছেলে জুমেল আহমদের সঙ্গে ফরিদা বেগমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর মধ্যে জুমেল অন্যত্র বিয়ে করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। ফরিদা জুমেলকে মামলার হুমকি দিলে ফরিদাকেই সরিয়ে দেয়ার নীল নকশা আঁকেন জুমেল।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার রাতে (১২ জুন) জুমেল কয়েকজন সহযোগী নিয়ে ফরিদার বাড়িতে গিয়ে তাকে মুঠোফোনে কল করে ডেকে আনেন। পরে সহযোগীদের নিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর বাড়ির পাশের খেতে ফেলে চলে যান।

এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় জুমেল আহমদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায়। এরপর উত্তর শাহবাজপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়াহেদ গাজী গত ২ জুলাই অভিযান চালিয়ে চান্দগ্রাম এলাকা থেকে জুমেলকে গ্রেফতার করেন। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা গত ৯ জুলাই আদালতে জুমেলকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জুমেলের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে জুমেল হত্যার বিষয়ে প্রাথমিক স্বীকারোক্তি প্রদান করে সহযোগীদের নাম বলে।

তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি জাকির আহমদকে (২৫) গ্রেফতার করে। রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) বিকেলে বড়লেখার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. হাসান জামানের আদালতে জুমেলকে হাজির করলে তিনি হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে জুমেল ও তার সহযোগী জাকিরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়াহেদ গাজী বলেন, তারা তিনজন মিলে ফরিদাকে হত্যা করে। প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এ পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক অন্য আসামিকে গ্রেফতার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)