প্রতারক মহিলার খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত পাটকেলঘাটার ইলেকট্রিক মিস্ত্রী

এক প্রতারক মহিলার খপ্পরে পড়ে আদালত পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক ইলেক্ট্রিকাল মিস্ত্রী। আদালতে মামলা করেও ন্যয় বিচার পাচ্ছেন না তিনি। শনিবার সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার যুগিপুকুরিয়া গ্রামের মৃত আজিজুল ইসলামের ছেলে আমিনুল ইসলাম।

আমিনুল ইসলাম জানান, আনুমানিক ২৫ বছর আগে তার চাচা মাহামুদুল হকের সঙ্গে যশোর জেলার ঝিকরগাছার নাছরিন সুলতানা মিলির বিয়ে হয়। দু’টি পুত্র সন্তান থাকা অবস্থায় আড়াই বছর আগে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় মাহামুদুল হক ও মিলির। ছাড়াছাড়ির আগে ট্রাক কেনার কথা বলে নাছরিন সুলতানা মিলি তার কাছ থেকে পোল্ট্রি ফার্ম করার জন্য মজুত রাখা নগদ আড়াই লাখ টাকা নেয়। তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করার কথা বলে ২০১৫ সালের ৩০ আগষ্ট সোনালী ব্যাংকের খলিষখালি শাখার চেক দেওয়া হয়। যথা সময়ে টাকা পরিশোধ না করায় তিনি ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি আদালতে মামলা দায়ের করেন নাছরিন সুলতানা মিলি’র বিরুদ্ধে। আদালত আসামীর বিরুদ্ধে শমন জারির নির্দেশ দেয়। শমন পাওয়ার পরও সে আদালতে যেতে গড়িমসি করে। বর্তমানে এ মামলাটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার এ মামলার সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য ছিল। আসামী কেবলমাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়ে বাকী টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বার বার সময় নিচ্ছেন। অপরদিকে দাবিকৃত অতিরিক্ত টাকা দিতে না পারায় আমার পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. তওহিদুর রহমান শাহীন নিয়ম বহির্ভুতভাবে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আসামী পক্ষে শুনানীতে অংশ গ্রহণ করে। ফলে আসামী নতুন করে কৌশলের অংশ হিসেবে টাকা পরিশোধ করার কথা বলে দীর্ঘ মেয়াদী দিন নেয়।

আমিনুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, নাছরিন সুলতানা একজন প্রতারক। তার বিরুদ্ধে এলাকারা বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ঋণের নামে প্রতারণা করার অভিযোগ রয়েছে। প্রতারণার অভিযোগে আদালতে সাতক্ষীরার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সৃজনী বাংলাদেশ আদালতে মামলা করলে কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করার শর্তে মুক্তি পায়। নাছরিন সুলতানা মিলি পাটকেলঘাটা থানার যুগীপুকুরিয়া গ্রামের ট্রাক কেনার কথা বলে অলিউল ইসলামের কাছ থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের পাটকেলঘাটার দু’টি চেক দেয়। এক লাখ ৪০ হাজার চেকটি জনৈক রবিউল ইসলামের হলেও তাতে সাক্ষর করেন নাছরিন। এ ছাড়াও নাছরিন ৪০ হাজার টাকার চেকে সাক্ষর করেন। আজো সেই ব্যক্তির কোন টাকা পরিশোধ করা হয়নি। নাছরিন নিজেকে খলিষখালির একটি কলেজের কর্মচারি ও ময়মানসিংহে কর্মরত এক পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদের আত্মীয় পরিচয়ে পাটকেলঘাটা বাজারের ব্যবসায়ি আব্দুর রব পলাশ, শফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে একের পর এক প্রতারণা করে চলেছেন।

আমিনুল ইসলাম বলেন, নাছরিন সুলতানার বিরুদ্ধে মামলা করায় তাকে হয়রানি করতে গত ফেব্রয়ারি মাসে পাটকেলঘাটা থানায় এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরন চেয়ে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়। পুলিশ বাড়ি গেলে বিষয়টি জানতে পেরে চলে আসে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তাকে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিলে থানায় সাধারন ডায়েরী করেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী তওহিদুর রহমান শাহীন বলেন, আমিনুল ইসলামের পক্ষে তিনি আইনজীবী হিসেবে কয়েকবার আদালতে দাঁড়ালেও গত বৃহষ্পতিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ না করায় তিনি আসামী পক্ষে অবস্থান নিয়ে শুনানীতে অংশ নেন। তবে কোন পক্ষের ওকালতনামায় তার সাক্ষর নেই। একটি মামলায় বাদি পক্ষে থেকে পরে আসামী পক্ষে অবস্থান নেওয়া নিয়ম বহির্ভুত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতে কিছু যায় আসে না। তবে নাছরিনের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য তাকে পাঁচ হ্জাার টাকা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

নাছরিন সুলতানা মিলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যারা তাকে টাকা দিয়েছে সুদ নেওয়ার শর্তে। তারা সুদ ও নিচ্ছেন, মামলা ও করছেন। তবে আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ ও হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)